ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অভিযোগে দাবি বাড়লো ৭১ গুণ

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৫
অভিযোগে দাবি বাড়লো ৭১ গুণ

ঢাকা: কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স’র বিমা গ্রহীতা এসবি নিটওয়্যারের ক্ষতির পরিমাণ ১৬ লাখ ৪২ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নিয়োগ দেওয়া জরিপ প্রতিষ্ঠান মেসার্স এশিয়ান সার্ভেয়ার্স।
 
যা কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স’র নিয়োগ দেওয়া জরিপ প্রতিষ্ঠান সোনালী সার্ভে নির্ধারণ করেছিল মাত্র ২৩ হাজার টাকা।

অর্থাৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়োগ দেওয়া জরিপ প্রতিষ্ঠানের জরিপে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে ৭১ গুণ।
 
কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স’র নিয়োগ দেওয়া জরিপ প্রতিষ্ঠান সোনালী সার্ভে মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছে, এসবি নিটওয়্যার’র মালিক আব্দুর রহমানের এমন ‍অভিযোগের ভিত্তিতে দ্বিতীয় বার জরিপের জন্য এশিয়া সার্ভেয়ার্সকে নিয়োগ দেয় আইডিআরএ।
 
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, দুই জরিপ প্রতিবেদনে দু’রকম তথ্য উঠে এসেছে। এখন সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নিয়ে একটি বৈঠকের মাধ্যমে বিমা দাবিটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
 
মিথ্য প্রতিবেদন দেওয়া সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে সোনালী সার্ভের প্রধান জরিপকারী হুমায়নের সঙ্গে মোবাইলে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ব্যস্ত আছেন জানিয়ে লাইন কেটে দেন তিনি।
 
আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স থেকে ২০১২ সালে দুটি বিমা পলিসি ক্রয় করে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর সদস্য প্রতিষ্ঠান এসবি নিটওয়্যার।
 
মেয়াদ শেষে CIL/NGJ/FP – 0123/03/2014 এবং CIL/NGJ/FP-0194/04/2014 নম্বরের পলিসি দুটি ২০১৪ সালের ৩ মার্চ ও ৩ এপ্রিল আবার নবায়ন করে প্রতিষ্ঠানটি।
 
এরপর ওই বছরের ৬ এপ্রিল অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এসবি নিটওয়্যার’র কারখানায়। এ অগ্নিকাণ্ডের বিমা দাবি নির্ণয় করতে জরিপ প্রতিষ্ঠান সোনালী সার্ভেকে নিয়োগ দেয় কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স।
 
জরিপ শেষে সোনালী সার্ভে ক্ষতির পরিমাণ ২৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, কারখানাটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। অগ্নিকাণ্ডের তিনদিন পর কারখানার ভেতরে ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি পানি জমে ছিল। সাকার ও বয়লার মেশিনে কোন কালো ধোঁয়া বা আগুনে পোড়ার দাগ নেই, মেশিন দুটিতে মাকড়শার জাল দেখা গেছে।
 
তবে সোনালী সার্ভের প্রতিবেদনটি মিথ্যা বলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে অভিযোগ করেন এসবি নিটওয়্যার’র মালিক আব্দুর রহমান।
 
এ বিষয়ে তিনি অভিযোগে বলেন, বিমা পলিসি দুটির একটি নবায়ন করা হয়েছে অগ্নিকাণ্ডের ৩ দিন আগে এবং অন্যটি ১ মাস ৩ দিন আগে। এছাড়া প্রতিমাসে এলসি করা হয়েছে। আর জানুয়ারি মাসে একদিন (২২ তারিখ), ফেব্রুয়ারিতে পাঁচদিন (৪, ১১, ১৭, ২৬ ও ২৮ তারিখ) এবং মার্চে তিনদিন (৩, ১১ ও ২৫ তারিখে) শিপমেন্ট করা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় কারখানা বন্ধ ছিল না।
 
মাকড়শার জালের বিষয়ে বলা হয়, ফায়ার ব্রিগেডের হোস পাইপ দিয়ে বিপুল পরিমাণ পানি নিক্ষেপের কারণে কারখানার ভেতরে ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি পানি জমে যায়, অথচ সেই পানিতে কারখানার ভেতরে থাকা সাকার ও বয়লারের মাকড়শার জাল ছিড়ে যায়নি এটাও অবান্তর। এতেই প্রমাণিত হয় সার্ভে রিপোটটি মিথ্যা। আর ফায়ার ব্রিগেডের জমে যাওয়া পানি থেকেই বোঝা যায় আগুনের ভয়াবহতা।
 
আব্দুর রহমান অভিযোগে আরও বলেন, জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে কিছু কার্টুন আধা পোড়া অবস্থায় পাওয়া গেছে। অধিকাংশ কার্টুন ফায়ার ব্রিগেডের ছোড়া পানিতে বিনষ্ট হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, সার্ভেয়ার অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া কারখানার মূল প্যাকিং ও ফিনিশিং সেকশনের চিত্র ধুলে ধরেননি। নিজস্ব উদ্দেশ্যে সাধনে কারখানার পুড়ে যাওয়া অংশের আশপাশের চিত্র তুলে ধরেছেন।
 
এ অভিযোগের পর দ্বিতীয় জরিপের জন্য মেসার্স এশিয়ান সার্ভেয়ার্সকে নিয়োগে দেয়া আইডিআরএ। এ জরিপ প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদন সম্পর্কে আইডিআরএ’র নথিতে বলা হয়েছে, এশিয়ান সার্ভেয়ার্স’র জরিপে নিট ক্ষতির পরিমাণ ১৬ লাখ ৪২ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
 
এই ক্ষতি নির্ধারণের বিষয়ে জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত দ্রব্যাদি সরিয়ে ফেলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দ্রব্যাদি দেখা ও পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ফলে কাগজ-পত্র ও ক্ষতিগ্রস্ত সম্পত্তির ছবির উপর নির্ভর করে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে।
 
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স’র ম‍ুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মজুর নাদীম বাংলানিউজকে বলেন, আইডিআরএ থেকে এশিয়ান সার্ভেয়ার্স’র জরিপ প্রতিবেদনের বিষয়ে আমাদের এখনো কিছু জানানো হয়নি। আইডিআরএ’র নির্দেশনা পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
 
আর এসবি নিটওয়্যার’র মালিক আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমি জানুয়ারি মাসের ২৬ তারিখে আইডিআরএ কাছে অভিযোগ করি। কিন্তু প্রায় ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও দাবির টাকা পাইনি। আর বিমা দাবির টাকা না পাওয়ার কারণে শ্রমিক নিয়ে বেশ কষ্টে আছি। এলসিও খুলতে পারছি না। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত বিমা দাবির টাকা আদায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে আইডিআরএ’র কাছে দাবি জানাচ্ছি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৫
এএসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।