ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে সাইফ পাওয়ারটেক

এনসিটি নিয়ে এখন শুধুই এগিয়ে যাওয়া

বিশেষ সংবাদদাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৫
এনসিটি নিয়ে এখন শুধুই এগিয়ে যাওয়া

ঢাকা: চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল নিয়ে এখন শুধুই এগিয়ে চলা। আমাদের চোখ সামনের দিকে।

পেছনে কি হয়েছে, সমস্যা কিংবা সঙ্কট- তা নয়, আমরা এখন বলবো শুধুই সম্ভাবনার কথা। আর সে সম্ভাবনা নিশ্চিত হবে কোন পথে সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

সাংবাদিকদের একটি টিমকে টার্মিনাল ঘুরিয়ে দেখাতে দেখাতে কথাগুলো বলছিলেন তরফদার রুহুল আমিন। শনিবারই যাত্রা শুরু হয়েছে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল-এনসিটির। আর তা পরিচালিত হতে শুরু করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক’র হাতে। এই সাইফ পাওয়ারটেকেরই কর্ণধার রুহুল আমিন। পেশায় ব্যবসায়ী হলেও একজন জনপ্রিয় ক্রীড়া সংগঠকও তিনি।

বললেন, ভীষণ উত্তেজনা কাজ করছে, আমরা ভালো কিছু করতে যাচ্ছি, পুরোটাই চ্যালেঞ্জিং, তবে পুরোপুরিই আস্থাশীল।

এই নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল উদ্বোধনকে বলা চলে একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন। দেশের অর্থনীতিতে এই টার্মিনাল সুনির্দিষ্ট অবদান রাখতে পারবে, আস্থা ঝড়ছিলো রুহুল আমিনের কণ্ঠে।

‘প্রধানমন্ত্রী যে সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন তার বাস্তবায়নে একধাপ অগ্রগতিই বলতে হবে এই টার্মিনালের উদ্বোধনকে। ’

তরফদার রুহুল আমিন জানালেন, এই টার্মিনালে চারটি জেটিতে কনটেইনার ওঠানো নামানোর কাজ নতুন করে শুরুর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা দ্বিগুন বেড়ে গেলো।

বন্দর সূত্র জানায়, জাহাজ থেকে কন্টেইনার ওঠানো-নামানোর সবচেয়ে বড় টার্মিনাল এই এনসিটি। টেন্ডারের মাধ্যমে দুটি পৃথক দরপত্র আহ্বানে সাড়া দিয়ে টার্মিনালের পরিচালনার কাজটি পায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক।

এই কনটেইনার টার্মিনাল শনিবার সন্ধ্যা থেকেই সচল হয়ে যায়। বিকেলে বন্দর ঘুরে দেখা গেলো বড় বড় দুটি জাহাজ শত শত কনটেইনারে বোঝাই হয়ে ভীড়ে আছে বন্দরে।
 
বিকেলে বেলুন উড়িয়ে, শান্তির প্রতীক পায়রা অবমুক্ত করে টার্মিনালের উদ্বোধন করলেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। এরপর যখন বন্দরেই শুরু হলো আলোচনা অনুষ্ঠান, ততক্ষণে নামতে শুরু করেছে জাহাজের কনটেইনারগুলো। বিশাল এই কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করছেন সাইফ পাওয়ারটেকের শ্রমিকরা।



আস্থা ও প্রত্যাশার কথা শোনা গেলো মন্ত্রী শাজাহান খানের বক্তৃতায়ও। চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক টার্মিনাল হিসেবে এনসিটির নাম ঘোষণা করে তিনি বললেন, এর মধ্য দিয়ে পণ্য ওঠানামায় নতুন মাইলফলক রচিত হলো। এর মাধ্যমে বন্দরের পণ্য ওঠানামার সক্ষমতা একধাপ বাড়ল।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, পটিয়া থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ ও সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন।
 
তাদের বক্তব্যে অবশ্য নিউমুরিং কনটেইনটার টার্মিনাল নিয়ে অতীতের জটিলতার কথা শোনা গেলো। দীর্ঘ সাত বছরের আইনি জটিলতা ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে আজ যে এই টার্মিনাল চালু করা সম্ভব হলো তাতেই তারা খুশি।

প্রত্যেকেরই বক্তব্যে ঝড়লো সম্ভাবনার কথা।

বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানালেন, প্রতিবছর ১২ থেকে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এই চাপ সামলাতে হবে চট্টগ্রাম বন্দরকেই। তারই প্রস্তুতি হিসেবে এনসিটি চালু করা হলো।      

গত ২৫ জুন বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের মধ্যে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের ৪ ও ৫ নম্বর জেটি পরিচালন-সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সেটির চুক্তিমূল্য ছিল ৪৯ কোটি ৬৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই দরপত্রে সাইফ পাওয়ারটেকের সঙ্গে মেয়র আ জ ম নাছিরের প্রতিষ্ঠান এম এইচ চৌধুরী লিমিটেডের ৩০ শতাংশ এবং নোয়াখালীর সদর আসনের সরকারদলীয় সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর প্রতিষ্ঠান এ অ্যান্ড জে ট্রেডার্সের ৩০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

এরপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর টার্মিনালটির ২ ও ৩ নম্বর জেটি পরিচালনার জন্য বন্দরের সঙ্গে সাইফ পাওয়ারটেকের চুক্তি হয়। এই চুক্তিটির মূল্য ৪৯ কোটি ৮৭ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।

তরফদার রুহুল আমিন জানান, এরই মধ্যে তারা দুই হাজারের বেশি শ্রমিক, কারিগরি ও প্রকৌশলী বিভাগে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী নিয়োগ দিয়েছেন। নিয়ে আসা হয়েছে বিদেশি দক্ষ শ্রমিক-প্রকৌশলী। শনিবার সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়ে গেছে তাদের অগ্রযাত্রা।

আলাপচারিতার ফাঁকে ফাঁকে কর্মীদের নানা দিক-নির্দেশনাও দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।



সাইফ পাওয়ারটেক বন্দরের ভেতরেই খুলেছে তার নিজস্ব কার্যালয়। তাতে গিয়ে দেখা গেলো কন্টেইনার ব্যবস্থাপনায় আধুনিক আয়োজনের ছোঁয়া। ডিজিটাল বোর্ডে মূহূর্তে মূহুর্তে আপডেট দিচ্ছে বন্দরের চিত্র। যা থেকে গোটা বন্দরের তথ্য পাওয়া সম্ভব। এবং তার ভিত্তিতে নেওয়া সম্ভব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

৯৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এনসিটি টার্মিনালে একসাথে কন্টেইনারবাহী পাঁচটি জাহাজ বার্থ নিতে পারবে। চারটি জেটিতে বছরে ১২ লাখ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করতে পারবে।  

এনসিটি নির্মাণ শুরু হয় ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হয়। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের খরচ হয় ৪৬৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। পরে দুটি জেটির পেছনের কনটেইনার রাখার চত্বর তৈরিতে ব্যয় হয় প্রায় ৯৮ লাখ টাকা। কিন্তু এরপর আট বছর কেটে গেলেও সম্ভব হয়নি বন্দরটি সচল করা।

তবে টার্মিনালের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর নতুন গতি পাবে। গতি পাবে দেশের অর্থনীতিও, এমনটাই প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ সময় ১৮২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৫
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।