ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

শাক-সবজির খুচরা দাম পাইকারির দ্বিগুণ

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৫
শাক-সবজির খুচরা দাম পাইকারির দ্বিগুণ ছবি: কাশেম হারুন- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: শীতকাল মানেই বাংলাদেশে শাক-সবজির ভরা মৌসুম। সাধারণত অক্টোবর মাসের শেষের দিক থেকেই বাজারে আসতে থাকে শীতের শাক-সবজি।



নভেম্বরের শেষ প্রান্তিক থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই বাজারে চলে আসে শীতের মৌসুমী সব শাক-সবজি। এ সময়ে বাজারে শাক-সবজির যোগান যেমন বেশি থাকে, তেমনি দামও থাকে কমতির দিকে।
 
বুধবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে তারই প্রমাণ পাওয়া গেলো। প্রতিটি বাজারেই শীতের সব ধরণের শাক-সবজির সমাহার।   এতে করে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব রকম শাক-সবজির দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে।

কিন্তু পাইকারি বাজারগুলোতে যে দামে শাক-সবজি বিক্রি হচ্ছে খুরচা বাজার তার অধিকাংশই বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ বা তারও বেশি দামে।

এদিন বাংলানিউজের পক্ষ থেকে দিনের বেলা রামপুরা, যাত্রাবাড়ী, হাতিরপুল, মতিঝিল, কমলাপুর, খিলগাঁও, বনশ্রী, শান্তিবাগ ও মালিবাগের কয়েকটি খুচরা বাজার এবং রাতের বেলা কারওয়ান বাজার ও মিরপুরের পাইকারি বাজার ঘুরে বিভিন্ন শাক-সবজির দামের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
 
এতে দেখা যায়, খুচরা বাজারগুলোতে প্রতিটি মাঝারি সাইজের ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়। একই দামে বিক্রি হতে দেখা যায় বাধাকপি। যা পাইকারি বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ টাকায়। বড় সাইজের যে লাউ খুচরা বাজারে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পাইকারি বাজারে সেই লাউ বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়।

শুধু ফুলকপি, বাধাকপি বা লাউ নয় পাইকারি ও খুচরা বাজারে প্রায় প্রতিটি সবজির দামেরই পার্থক্য এমন। পাইকারি বাজারে এক পাল্লা (৫ কেজি) শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। অর্থাৎ এক কেজি সিমের দাম ১২ থেকে ১৪ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজার থেকে এই শিম কেজিদরে কিনতে ভোক্তাদের খরচ করতে হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
 
পাইকারি বাজারে কেজি ১৪ টাকা দরে এক পাল্লা কাঁচা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দামে। এছাড়া পাকা টমেটো প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে (পাল্লা ২৫০ টাকা) দরে বিক্রি হচ্ছে। এমনকি, রাজধানীর কোনো খুচরা বাজারেই এক কেজি কাঁচা টমেটো ৩০ টাকা এবং পাকা টমেটো ৮০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না।
 
পাইকারি বাজারে এক কেজি বরবটির দাম ২৮ টাকা (পাল্লা ১৪০ টাকা), ঝিঙা ৩০ টাকা (পাল্লা ১৫০ টাকা), করলা ২৪ টাকা (পাল্লা ১২০ টাকা), মুলা ৫ টাকা (পাল্লা ২৫ টাকা), বেগুন ২০ টাকা (পাল্লা ১০০ টাকা) ও নতুন গোল আলু ৩৬ টাকা (পাল্লা ১৮০ টাকা)। অথচ খুচরা বাজারে এক কেজি রববটি ৪০ টাকা, ঝিঙা ৫০ টাকা, করলা ৫০ টাকা, মুলা ১০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা ও নতুন গোল আলু ৭০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
 
সবজির মতো শাকের দামও পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা বাজারে দ্বিগুণ দেখা গেছে। লাল শাক খুচরা বাজারে এক আটি বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা দামে। পাইকারি বাজারে যার দাম দেড় টাকা থেকে ২ টাকা। পুঁইশাক পাইকারি বাজারে এক আটি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৭ টাকায়। যা খুচরা বাজারে কিনতে লাগছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।

পাইকারি বাজারে এক আটি লাউ শাকের দাম ১০ টাকা। খুচরা বাজারে যার দাম ২০ টাকা। পালং শাক পাইকারি বাজারে এক আটি বিক্রি হচ্ছে ২ টাকা দরে। খুচরা বাজারে তা ৫ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। এক আটি মেথি শাকের পাইকারি দাম ২ টাকা। যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা দামে।
 
কারওয়ান বাজারে কথা হয় সবজি ব্যাপারী কামাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, ১০ দিনের ব্যবধানে প্রতিটি সবজির দামই প্রায় অর্ধেকে চলে এসেছে। তবে মঙ্গলবারের (১ ডিসেম্বর) তুলনায় বুধবার দাম কিছুটা বেশি।

তার ভাষ্যমতে, মঙ্গলবার যে ফুলকপি ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হয়েছে, তা বুধবার বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৪ টাকায়। ১০০ টাকার এক পাল্লা করলা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হওয়া শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। ১৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া বরবটির দাম বেড়ে হয়েছে ১৪০ টাকা পাল্লা।
 
দাম বাড়ার কারণ কি জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, গতকালের চেয়ে আজ সবজির আমদানি কম। এ জন্যই দাম একটু বেশি। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় দামে বেশ কম। একই কথা বলেন, যশোর থেকে ফুলকপি নিয়ে আসা ইদ্রিস আলী ও রিংকু ব্যাপারী।    
 
মিরপুরের শাহ আলী মাজার থেকে একটু পূর্বদিকের রাস্তার উপর বসা পাইকারি বাজারে কথা হয় সাভারের ব্যাপারী মে. মনির হোসেন ও কবির হোসেনের সঙ্গে।

তারা বলেন, ভাই পাইকারি ও খুচরা বাজারে শাক-সবজির যে দামই থাকুক মূলত কৃষক প্রকৃত দাম পাচ্ছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কৃষকদের লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে। বিশেষ করে শাকের ক্ষেত্রে প্রতিটি কৃষকের লোকসান হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে কৃষক ব্যাপারীদের হাত ধরে নিয়ে গিয়ে শাক বিক্রি করছে।
 
পাইকারি ও খুচরা বাজারের পার্থক্যের বিষয়ে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারে কামাল হোসেন, ইদ্রিস আলী ও রিংকু ব্যাপারী এবং মিরপুরে মনির হোসেন ও কবির হোসেন প্রত্যেকেই বলেন, পাইকারি বাজার থেকে পণ্য কেনার সময় খুচরা ব্যবসায়ীদের আড়তদারকে শতকরা ১০ টাকা কমিশন দিতে হয়। এর সঙ্গে গাড়ি ভাড়া ও শতকরা ১৫ টাকা লাভ ধরলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা যে পণ্য একশ টাকায় কেনেন তার বিক্রয় মূল্য ১৩০ টাকার উপরে হতে পারে না।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৫
এএসএস/এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।