ঢাকা: রাজধানীর দক্ষিণ বাসাবোর টাইলস ব্যবসায়ী মো. মমিনুল হক। এবার প্রথম ই-টিআইএন নিলেন।
সম্প্রতি আয়কর রিটার্ন জমা দিতে গিয়ে পড়লেন বিপাকে। কর সার্কেল-১১৩ ঠিকানা ২১, পুরানা পল্টন লাইন, ঢাকা। ৩ ঘণ্টা খুঁজে অবশেষে রিটার্ন দিলেন হক।
খন্দকার ফেরদৌস আহমেদ। চাকরি করেন এনা গ্রুপে। তিনিও প্রথমবার ই-টিআইএন নিলেন। কর অঞ্চল-৭ এর সার্কেল-১৪২ কর দিতে হবে।
সার্কেল-১৪২ (বৈতনিক), ৯, তোপখানা রোড, সেগুনবাগিচা। সম্প্রতি তিনিও অনেক খুঁজে সার্কেল বের করে জমা দিলেন আয়কর রিটার্ন।
রাজধানীতে কর সার্কেলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় মমিনুল আর ফেরদৌস আহমদের মতো অসংখ্য করদাতা ভোগান্তিতে পড়ছেন বলে জানা গেছে।
এতে নতুন করদাতারা বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। এ বিষয়ে গত কয়েক বছর ধরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) জানিয়েও লাভ হয়নি বলে জানিয়েছেন করদাতারা।
রাজস্ব সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সার্কেল ভোগান্তিতে পুরাতন কর বিমুখ হচ্ছেন করদাতারা। আর নতুন করদাতারা কর না দিয়ে বাঁচার পথ খুঁজছেন।
আশার কথা জানিয়ে এনবিআর বলছে, আগারগাঁওয়ে নির্মাণাধীন ৩০ তলা নতুন কর ভবনের কাজ ২০১৬ সালে শেষ হবে। সব অফিস স্থানান্তরিত হলে করদাতাদের ভোগান্তি আর থাকবে না।
ব্যবসায়ী মো. মমিনুল হক বাংলানিউজকে বলেন, নতুন একটি ব্যাংকে হিসাব পরিচালনা করতে ই-টিআইএন করেছি। রিটার্ন দিতে এসে সার্কেল খুঁজে হয়রান।
তিনি বলেন, মানুষ কর দিতে চান। কিন্তু এ রকম হয়রানির গল্পে কর বিমুখ হন তারা। সব অফিস এক জায়গায় হলে অথবা অনলাইনে কর নিলে হয়রানি থাকবে না।
এনবিআর সূত্র জানায়, করদাতাদের এসব ভোগান্তির কথা বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০১০ সাল থেকে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলার আয়োজন করে আসছে।
মেলায় সব অফিসের বুথ এক স্থানে থাকায় পুরনো করদাতারা ঝামেলা ছাড়াই কর দিতে পারেন। এসব সেবা থাকায় নতুন করদাতারাও আগ্রহ দেখান।
সূত্র আরো জানায়, করদাতাদের ভোগান্তি লাঘবে চলতি বছর এনবিআর প্রথমবারের মতো তিন দিনব্যাপী শীতকালীন আয়কর মেলা করে। এতেও সাড়া দেন করদাতারা।
দু’টি মেলায় করদাতারা সার্কেল জটিলতা, কর অঞ্চলে হয়রানিসহ কয়েক হাজার অভিযোগ দেন মেলায়। বিষয়গুলো এনবিআর খতিয়ে দেখছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে এনবিআরের ৩১টি কর অঞ্চল ও ৬৪৯টি কর সার্কেল রয়েছে। এর মধ্যে ১৭ কর অঞ্চল ঢাকায়। ৮৫টি উপজেলায় কর সার্কেল রয়েছে। এছাড়া প্রতি জেলা ও উপজেলায় কর অফিস করবে এনবিআর। তবে কর অঞ্চল ও সার্কেলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় ভোগান্তি আর হয়রানি শেষ হচ্ছে না।
সূত্র আরো জানায়, এনবিআর ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, ২০১৬ সালের কর মেলা হবে নতুন ভবনে। মেলার আগেই সব অফিস সেখানে স্থানান্তরিত হবে। সেজন্য ভবন নির্মাণের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
ভোগান্তি আর হয়রানির অভিযোগের কথা স্বীকার করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) মো. আবদুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, করের প্রায় অফিসই ভাড়া বাড়িতে। জায়গা জটিলতায় কর ভবন করতে সময় লেগেছে। শিগগিরই ভবন হয়ে যাবে। এরপর থেকে কোনো ভোগান্তি থাকবে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, করদাতারা কর দিতে বা সেবা নিতে এসে ভোগান্তির শিকার হবেন, তা মানা যায় না। ভোগান্তি ও হয়রানির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সার্কেল আর কর অফিসের ভোগান্তি লাঘবে ৩০ তলা ভবন হচ্ছে। সব অফিস সেখানে চলে যাবে। এতে সব করদাতা নির্বিঘ্নে সেবা পাবেন।
তিনি আরও বলেন, শুধু ঢাকায় কর ভবন নয়, চট্টগ্রামে দেশে সর্বোচ্চ ৪০ তলা কর ভবন করা হবে। সারাদেশে অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় স্থানেও কর ভবন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
আরইউ/এএসআর