ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

শীতে বীজতলা,গম, ভুট্টা, তুলাসহ বিভিন্ন ফসলের যত্ন

আবু খালিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
শীতে বীজতলা,গম, ভুট্টা, তুলাসহ বিভিন্ন ফসলের যত্ন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: পৌষ মাসে মাঠে বোরো ধানের বীজ তলা তৈরি, গম, ভুট্টা, আলু, তুলা, ডাল ও তেল ফসলসহ শাকসবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার  করছেন কৃষকরা। এ মাসে তীব্র শীতে ফসলের বিভিন্ন ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

তাই ঠিক সময়ে সঠিক পরিচর্যা করা জরুরি। কৃষিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে কোন ফসলে কেমন পরিচর্যা করতে হবে তা কৃষকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

বোরো ধান: পুরো মাস জুড়েই ধান চাষিরা বোরো ধানের বীজ তলা ও বীজ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করবেন। অতিরিক্ত শীতে আলাদা যত্ন নিতে হবে বীজতলার। ঘন কুয়াশা ও বেশি শীতের সময়ে রাতে বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে আর দিনে তুলে ফেলতে হবে। আগাছা ও পাখির আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বীজ গজানোর ৪ থেকে ৫ দিন পর বেডের ওপর ২ থেকে ৩ সেমি. পানি রাখতে হবে।

চারাগাছ হলদে হয়ে গেলে প্রতি বর্গমিটারে ৭ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। এরপরও যদি চারা সবুজ না হয় তবে প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম করে জিপসাম দিতে হবে। মূল জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে পানিসহ কাদা করতে হবে।

জমিতে জৈবসার দিতে হবে এবং শেষ চাষের আগে দিতে হবে ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার। চারার বয়স ৩০ থেকে ৪০ দিন হলে মূল জমিতে চারা রোপণ শুরু করা যাবে। একটি সারি থেকে আরেকটি সারির দূরত্ব ২৫ সেন্টিমিটার এবং গোছা থেকে গোছার দূরত্ব ১৫ সেন্টিমিটার রেখে প্রতি গোছায় দুই থেকে তিনটি সুস্থ চারা রোপণ করলে ফলন ভালো হয়।

ধানের চারা রোপণের ১৫ থেকে ২০ দিন পর প্রথম কিস্তি, ৩০ থেকে ৪০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি এবং ৫০ থেকে ৫৫ দিন পর শেষ কিস্তি হিসেবে ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।

গম: গমের জমিতে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ এবং প্রয়োজনীয় সেচ দিতে হবে। চারার বয়স ১৭ থেকে ২১ দিন হলে গমক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করে হেক্টরপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগের পাশাপাশি সেচ দিতে হবে। সেচ দেয়ার পর জমিতে জো আসলে মাটির ওপর চটা ভেঙে দিতে হবে। গমের জমিতে যেখানে ঘন চারা রয়েছে সেখানে কিছু চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে।

ভুট্টা: এ মাসে ভুট্টা ক্ষেতের গাছের গোড়ার মাটি তুলে দিতে হবে। গোড়ার মাটির সঙ্গে ইউরিয়া সার ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর সেচ দিতে হবে। গাছের নিচের দিকের মরা পাতা ভেঙে দিতে হবে। ভুট্টার সঙ্গে সাথী বা মিশ্র ফসলের চাষ করে থাকলে সেগুলোর প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করতে হবে।

আলু: চারা গাছের উচ্চতা ১০-১৫ সেন্টিমিটার হলে ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। দুই সারির মাঝে সার দিয়ে কোদালের সাহায্যে মাটি কুপিয়ে সারির মাঝের মাটি গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হবে। ১০-১২ দিন পরপর এভাবে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে না দিলে গাছ হেলে পড়বে এবং ফলন কমে যাবে।

আলু ফসলে নাবি ধসা রোগ দেখা দিতে পারে। সে কারণে স্প্রেয়িং শিডিউল মেনে চলতে হবে। মড়ক রোগ দমনে দেরি না করে ২ গ্রাম ডায়থেন এম ৪৫ অথবা সিকিউর অথবা ইন্ডোফিল প্রতি লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে ৭ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে। মড়ক লাগা জমিতে সেচ দেয়া বন্ধ রাখতে হবে। তাছাড়া আলু ফসলে মালচিং, সেচ প্রয়োগ, আগাছা দমনের কাজগুলোও করতে হবে। আলু গাছের বয়স ৯০ দিন হলে মাটির সমান করে গাছ কেটে দিতে হবে এবং ১০ দিন পর আলু তুলে ফেলতে হবে। আলু তোলার পর ভালো করে শুকিয়ে বাছাই করতে হবে এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
 
তুলা: তুলা সংগ্রহের কাজ শুরু করতে হবে। তুলা সাধারণত ৩ পর্যায়ে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। শুরুতে ৫০% বোল ফাটলে প্রথমবার, বাকি ফলের ৩০% পরিপক্ব হলে দ্বিতীয়বার এবং অবশিষ্ট ফসল পরিপক্ব হলে শেষ অংশের তুলা সংগ্রহ করতে হবে।

রৌদ্রময় শুকনা দিনে বীজ তুলা উঠাতে হয়। ভালো তুলা আলাদাভাবে তুলে ৩-৪ বার রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, ভালো তুলার সঙ্গে যেন খারাপ তুলা (পোকায় খাওয়া, রোগাক্রান্ত) কখনো না মেশে।

ডাল ও তেল ফসল: এখন মাঠে মসুর, ছোলা, মটর, মাসকালাই, মুগ, তিসি পাকতে শুরু করেছে। সরিষা, তিসি বেশি পাকলে রোদের তাপে ফেটে গিয়ে বীজ পড়ে যেতে পারে, তাই এগুলো ৮০ ভাগ পাকলেই সংগ্রহের ব্যবস্থা নিতে হবে। আর ডাল ফসলের ক্ষেত্রে গাছ গোড়াসহ না উঠিয়ে মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি রেখে ফসল সংগ্রহ করতে হবে। এতে জমিতে উর্বরতা এবং নাইট্রোজেন সরবরাহ বাড়বে।

শাকসবজি: ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, ওলকপি, শালগম, গাজর, শিম, লাউ, কুমড়া, মটরশুঁটি এসবের নিয়মিত যত্ন নিতে হবে। টমেটো ফসলের মারাত্মক পোকা হলো ফলছিদ্রকারী পোকা। এ পোকার আক্রমণে ফলের বৃন্তে একটি ক্ষুদ্র আংশিক বদ্ধ কালচে ছিদ্র দেখা যাবে।

ক্ষতিগ্রস্ত ফলের ভেতরে পোকার বিষ্ঠা ও পচন দেখা যাবে। ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে এ পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রতি বিঘা জমির জন্য ১৫টি ফাঁদ স্থাপন করতে হবে। আধাভাঙ্গা নিম বীজের নির্যাস (৫০ গ্রাম এক লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে ১২ ঘণ্টা ভেজাতে হবে এবং পরে মিশ্রণটি ভালো করে ছাকতে হবে) ১০ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করে এই পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

আক্রমণ তীব্র হলে কুইনালফস গ্রুপের কীটনাশক (দেবিকইন ২৫ ইসি/কিনালাক্স ২৫ ইসি/করোলাক্স ২৫ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার পরিমাণ মিশিয়ে স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়।

টমেটো সংগ্রহ করে বাসায় সংরক্ষণ করার জন্য আধা পাকা টমেটোসহ টমেটো গাছ তুলে ঘরের ঠাণ্ডা জায়গায় উপুড় করে ঝুলিয়ে টমেটোগুলোকে পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। পরবর্তীতে ৪-৫ মাস পর্যন্ত অনায়াসে এ টমেটো ব্যবহার করা যাবে।
শীতকালে মাটিতে রস কমে যায় বলে সবজি ক্ষেতে চাহিদামাফিক নিয়মিত সেচ দিতে হবে। এ ছাড়া আগাছা পরিষ্কার, গোড়ায় মাটি তুলে দেওয়া, সারের উপরিপ্রয়োগ ও রোগবালাই প্রতিরোধ করা জরুরি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
একে/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।