ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বার্ষিক ব্যবসার হিসাব

কঠোর অবস্থানে আইডিআরএ

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫
কঠোর অবস্থানে আইডিআরএ

ঢাকা: জীবন বিমা কোম্পানির ২০১৫ সালের ব্যবসার হিসাব তৈরি করতে ১৫টি ছক নির্ধারণ করেছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। আগামী ১৪ জানুয়ারির মধ্যে এ ১৫টি নির্ধারিত ছকে চলতি বছরের ব্যবসার হিসাব আইডিআরএ’তে জমা দিতে হবে দেশে ব্যবসারত সকল জীবন বিমা কোম্পানিকে।



বিমা আইন ২০১০’র ৪৯ ধারার ক্ষমতাবলে কোম্পানিগুলোকে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছে আইডিআরএ।

কোনো কোম্পানি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হলে অথবা হিসাব প্রতিবেদনে কোনো ধরনের গড়মিল করলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যবস্থার অংশ হিসেবে হিসাবে গড়মিল করা কোম্পানি ও কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে।

আইডিআরএ জানিয়েছে, ২০১৫ সালে প্রদর্শিত প্রথম বর্ষ বিমা ব্যবসার বিপরীতে ব্যাংক জমা অবশ্যই বছরটির ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে হতে হবে। আর ৩১ ডিসেম্বরের পরে ব্যাংক জমা দেখানো হলে তা ২০১৬ সালের হিসাবে গণ্য হবে। এছাড়া প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের বিপরীতে কালেকশন ইন হ্যান্ড, ক্যাশ ইন ট্রানজিট, কালেকশন কন্ট্রোল অ্যাকাউন্ট ও ব্রাঞ্চ কন্ট্রোল অ্যাকাউন্ট শিরোনামে কোনো অর্থ প্রদর্শন করা যাবে না।

আর ব্যবসার সমাপনী বিবরণীতে আউটস্ট্যান্ডিং প্রিমিয়াম (নবায়ন প্রিমিয়ামের বিপরীতে প্রদর্শন করা হয়) শিরোনামে দেখানো অর্থের যে অংশ ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে আদায় হবে তা উল্লেখ করে বিস্তারিত বিবরণী আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আইডিআরএ’তে জমা দিতে হবে।

এদিকে ৩০ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাংক বন্ধ থাকবে এবং ৩১ ডিসেম্বর বছরের শেষ দিন হিসেবে ব্যাংক বন্ধ থাকবে। তাই হিসাব সম্পন্ন করার সময় ৩১ ডিসেম্বরের পরিবর্তে কিছুদিন বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আইডিআরএ’র কাছে আবেদন করেছে বিমা মালিক ও নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)। তবে তাদের এ আবেদন আমলে নিচ্ছে না আইডিআরএ।

আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, নির্দেশনায় হিসাব সম্পন্ন করার জন্য কোম্পানিগুলোকে যে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তাই কার্যকর থাকবে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই সকল কোম্পানিকে হিসাব সম্পন্ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো কোম্পানি ব্যর্থ হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আইডিআরএ সূত্র জানায়, হিসাব প্রতিবেদনে আইডিআরএ নির্ধারিত ১৫টি ছকের মধ্যে রয়েছে- প্রথম বর্ষ ব্যবসা, কমিশন প্রদান, উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন, নবায়ন প্রিমিয়াম, নবায়ন কমিশন, প্রশাসনিক ও অন্য খরচ, মোট ব্যবস্থাপনা খরচ, ৩১ ডিসেম্বর’২০১৫ পর্যন্ত ব্যাংক জমা, জীবন বিমা তহবিল, বিনিয়োগ, ৩১ ডিসেম্বর’২০১৫ পর্যন্ত ব্যাংক ব্যালেন্স, ৩১ ডিসেম্বর’২০১৫ পর্যন্ত ক্যাশ ব্যালেন্স, ৩১ ডিসেম্বর’২০১৫ পর্যন্ত এজেন্ট ব্যালেন্স, অগ্রিম ব্যয় ও আউটস্ট্যান্ডিং প্রিমিয়াম।

এ ১৫টি ছকে ৬৬টি বিষয়ের তথ্য পৃথক পৃথকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। এর মধ্যে প্রথম বর্ষ ব্যবসা, উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন, নবায়ন প্রিমিয়াম, প্রশাসনিক ও অন্য খরচ, ৩১ ডিসেম্বর’২০১৫ পর্যন্ত ব্যাংক জমা, বিনিয়োগ, এজেন্ট ব্যালেন্স ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫, ৩১ ডিসেম্বর’২০১৫ পর্যন্ত এজেন্ট ব্যালেন্স এবং অগ্রিম ব্যয়গুলোর বিস্তারিত বিবরণ আলাদাভাবে সংযুক্ত করতে হবে।

এছাড়া ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের অনিয়ম বন্ধ করতে এ খাতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ খাতে যেসব ব্যয় হবে তা পৃথক পৃথকভাবে হিসাব বিবরণীতে দেখাতে বলা হয়েছে। যেমন- অফিস ভাড়া, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন, গাড়ির জ্বালানি ও অবচয়, মনিহারি ব্যয় এসব খরচের খাতের যে ব্যয় হবে তার প্রতিটি পৃথকভাবে দেখাতে হবে।

সূত্রটি জানায়, নির্ধারিত ছকে প্রতিবেদন চেয়ে কোম্পানিগুলোকে পৃথক পৃথক চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে প্রতিবেদন দাখিলে ব্যর্থ হলে বিমা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে জরুরি সভায়র জন্য তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে এ জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, মুখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত নিম্নপদের দায়িত্বরত কর্মকর্তা, কোম্পানি সচিব, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ও প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তাকে উপস্থিত থাকতে হবে। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে এ সভায় প্রতিবেদনের সহায়ক নথি উপস্থাপন করতে হবে।

সূত্রটি আরও জানায়, ব্যবসার হিসাব প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে জীবন বিমা কোম্পানিগুলো কালেকশন ইন হ্যান্ড ও আউটস্ট্যান্ডিং প্রিমিয়ামের হিসাবে বড় ধরনের অনিয়ম করে। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো ইচ্ছামত হিসাব দেখিয়ে বেশি প্রিমিয়াম আয় ও লাইফ ফান্ড বাড়িয়ে দেখায়। এমনকি এ দুই হিসাবে অনিয়ম করে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পর্ষদের একটি অংশ কোম্পানি থেকে অনৈতিক সুবিধাও গ্রহণ করেন।

এজন্য আইডিআরএ থেকে কালেকশন ইন হ্যান্ড শিরোনামে কোনো অর্থ প্রদর্শন করা যাবে না বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর আউটস্ট্যান্ডিং প্রিমিয়ামের সঙ্গা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

আউটস্ট্যান্ডিং প্রিমিয়ামের সঙ্গায় আইডিআরএ বলেছে, নবায়ন প্রিমিয়াম আয়ের যে অংশ ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে জমা হয়নি, কিন্তু ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি বা গ্রেস প্রিরিয়ডের মধ্যে আদায় হবে, তাই হবে আউটস্ট্যান্ডিং প্র্রিমিয়াম।

একাধিক বিমা কোম্পানির সিইও বলেন, আইডিআরএ’র নির্ধারিত ছকে ব্যবসার হিসাব দিতে অনেক কোম্পানিই বিপাকে পড়ে যাবে। বিশেষ করে কালেকশন ইন হ্যান্ড ও আউটস্ট্যান্ডিং প্রিমিয়ামের প্রতিবেদন তৈরিতে সমস্যা হবে। কারণ, অধিকাংশ কোম্পানিই কালেকশন ইন হ্যান্ড ও আউটস্ট্যান্ডিং প্রিমিয়াম ইচ্ছামতো দেখিয়ে প্রিমিয়াম আয় বাড়িয়ে দেখায়। কিন্তু এবার আইডিআরএ কালেকশন ইন হ্যান্ডের অপশনই উঠিয়ে দিয়েছে। আর আউটস্ট্যান্ডিং প্রিমিয়ামের যে সঙ্গা নির্ধারণ করে দিয়েছে, তাতে অতিরিক্ত অর্থ দেখানোর সুযোগ পাবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫
এএসএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।