ঢাকা: আমানতকারীদের মূলধনের যথেচ্ছ ব্যবহার রোধে ব্যাংক মালিকদের কর্মকাণ্ডের উপর নজরদারি বেড়েছে। একইসঙ্গে মালিকদের ঋণ, ঋণ অনুমোদনে হস্তক্ষেপ, কর্মকর্তাদের উপর অনৈতিক চাপ মনিটরিং করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অভ্যন্তরীণ কন্ট্রোল ও কমপ্লায়েন্স, আইসিসিসহ উচ্চ পর্যায়ের কমিটিগুলোকে কার্যকর ও শক্তিশালী করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব কমিটি আইন মেনে কাজ করছে কিনা তা সুপারভিশনে এরইমধ্যে সরকারি সাত ব্যাংকসহ ১২টি ব্যাংকের পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া।
দেশের ব্যাংকগুলোর সুপারভিশন জোরদার করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা একটি পত্রে তুলে ধরা হয়েছে এসব বিষয়। ব্যাংকগুলোতে সুপারভিশন শক্তিশালী করতে ওই পত্রে ২৮টি পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পদক্ষেপগুলো হলো- বাৎসরিক ভিত্তিতে ঋণ, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ, দায় ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, ব্যাংকের ঝুঁকি মোকাবেলার কাঠামো প্রণয়ন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের নিজ প্রতিষ্ঠান ও অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণের বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারি, পরিচালক, নির্বাহী কমিটি, অডিট কমটি এবং শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কমিটি (ম্যানকম) কার্যক্রম সুপারভিশনের আওতায় আনা ও কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার চালু করা।
এছাড়া নির্ভুল আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে বাংলাদেশ ব্যাংক গুরুত্ব দিচ্ছে। এজন্য বার্ষিক রিপোর্টের আগে যেন ব্যাংকগুলোর শীর্ষ পরিচালনা কর্তৃপক্ষ অংশ নেয় এবং তাদের মতামত দেয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
ব্যাংকগুলোর পরিদর্শন প্রতিবেদন তৈরির জন্য পর্ষদের বিশেষ সভা আয়োজন নিশ্চিত করা, মোবাইল, অনলাইন ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং ঝুঁকিমুক্ত করতে প্রযুক্তি নির্ভর অডিট এবং পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা ব্যবস্থা চালু করা, প্রতিটি ব্যাংকের সব তথ্য আরও নির্ভুলভাবে যাচাই-বাছাই ও দুর্বলতা খুঁটিয়ে খুঁজে বের করতে ইন্ট্রিগ্রেডেট সুপারভিশন সিস্টেম চালুর কথা বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পত্রে বলা হয়েছে, ঝুঁকিমুক্ত ব্যাংকিং খাত গড়ে তোলার কাজ হয়েছে অনেক বেশি। ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা ও ঋণের গুণগত মান বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। এজন্য ঋণের সঠিক তথ্য নিশ্চিতভাবে পাওয়ার ক্ষেত্রে নীতিতে ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে। উন্নত করা হয়েছে খেলাপি, প্রভিশনিং ও পুনঃতফসিলের নীতি।
এসব নীতির প্রয়োগ হচ্ছে কিনা তার জন্য পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি তারল্য, মুনাফা ও মূলধনের পরিমাণ এবং গুণগত মান বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এজন্য সংস্কার ও উন্নত করা হয়েছে ক্যামেলস নির্ধারণ পদ্ধতির। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা গাইডলাইন্স জারি করে ঝুঁকি নির্ণয় পদ্ধতি আলাদা করে আরও উন্নত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলধনের মাত্র ১০-১২ শতাংশ শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের। কিন্তু কম মালিকই আমানতকারীদের ৮৮- ৯০ শতাংশ মূলধনের দায়িত্বে থেকে যথেচ্ছভাবে অপব্যবহার করছে। এটি অনৈতিক।
মালিকরা অনেক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের জোরপূর্বক অপসারণ করেছেন। তবে আশার দিক বাংলাদেশ ব্যাংক এসব বিষয়ে কঠোর নজরদারি করছে। অনেক পরিচালককে অপসারণ করেছে। প্রধান নির্বাহীদের চাকরি ফিরে পেতে বাধ্য করেছেন। তবে অবস্থার সন্তোষজনক উন্নতি হয়নি। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীনভাবে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যাংক পরিচালনায় যারা যুক্ত সেই মালিকরা অনেক বেশি ক্ষমতাবান। আমানতকারীদের স্বার্থ দেখার জন্য পর্ষদে কেউ থাকে না। একজন স্বাধীন পরিচালক থাকার বিধান থাকলেও সেই পরিচালকও নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগ করেন মালিকরা। মালিকদের এই কর্তৃত্ববাদী আমানতকারীদের জন্য বড় ঝুঁকি। তবে অবস্থার উন্নতি হয়নি বিষয়টি তা নয়। অনেক পরিচালক এমনকি ব্যাংকের চেয়ারম্যানকেও বাংলাদেশ ব্যাংকে অপরসারণ করেছে। এটি ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি নিরসনের জন্য ভালো উদাহরণ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ কর্মকর্তারা আরও বলেন, ঝুঁকি মোকাবেলার সবচেয়ে বড় কাজ হলো একটি আইনি কাঠামো দাঁড় করানো। অনেক নিয়ম-কানুন আগেও ছিলো বিচ্ছিন্নভাবে। এগুলোকে একত্রিত করে সময়োপযোগী করা হয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে একটি সমন্বিত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৫
এএ/