ঢাকা: গ্রাহক ঠকাতে কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ফন্দি-ফিকির ভেস্তে গেছে। এ সাধারণ বিমা কোম্পানিটি এসবি নিটওয়্যার নামে এক গ্রাহকের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে সোনালী সার্ভেয়ারকে দিয়ে মিথ্যা জরিপ প্রতিবেদন তৈরি করেছিল।
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) তদন্তে মিথ্যা জরিপ প্রতিবেদনের প্রমাণ বের হয়ে এসেছে। এজন্য এসবি নিটওয়্যারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৯ লাখ ৪০ হাজার ৯৮০ টাকা প্রদান করতে কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সকে নির্দেশ দিয়েছে আইডিআরএ।
গত ২২ ডিসেম্বর আইডিআরএ’র এক কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নির্দেশনা কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বিমা দাবির টাকা পরিশোধ করতে বিমা কোম্পানিটিকে ৭ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বিমা গ্রাহক এসবি নিটওয়্যারকে ফাঁকি দিতে সোনালী সার্ভেয়ারকে দিয়ে ক্ষতির বিষয়ে মিথ্যা জরিপ প্রতিবেদন তৈরি করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ বিমা কোম্পানি। জরিপ প্রতিবেদনে সোনালী সার্ভেয়ার ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে মাত্র ২৩ হাজার টাকা।
এসবি নিটওয়্যারের এ বিমা দাবিটি উত্থাপন করা হয় ২০১৪ সালে। ওই বছরের এপ্রিল মাসে প্রতিষ্ঠানটির কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর আগে কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স থেকে ২০১২ সালে দু’টি বিমা পলিসি ক্রয় করে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সদস্য এই প্রতিষ্ঠান।
মেয়াদ শেষে CIL/NGJ/FP – 0123/03/2014 এবং CIL/NGJ/FP-0194/04/2014 নম্বরের ওই পলিসি দু’টি ২০১৪ সালের ৩ মার্চ ও ৩ এপ্রিল আবার নবায়ন করা হয়। এর পরই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এসবি নিটওয়্যারের কারখানায়। এ অগ্নিকাণ্ডের বিমা দাবি নির্ণয় করতে জরিপ প্রতিষ্ঠান সোনালী সার্ভেকে নিয়োগ দেয় কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স।
জরিপ শেষে সোনালী সার্ভে ক্ষতির পরিমাণ ২৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, কারখানাটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। অগ্নিকাণ্ডের তিনদিন পর কারখানার ভেতরে ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি পানি জমে ছিল। সাকার ও বয়লার মেশিনে কোনো কালো ধোঁয়া বা আগুনে পোড়ার দাগ নেই, মেশিন দু’টিতে মাকড়শার জাল দেখা গেছে।
জরিপ প্রতিবেদন পাওয়ার পর সোনালী সার্ভের প্রতিবেদনটি মিথ্যা বলে আইডিআরএ’র কাছে অভিযোগ করেন এসবি নিটওয়্যারের মালিক আব্দুর রহমান। লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, বিমা পলিসি দু’টির একটি নবায়ন করা হয়েছে অগ্নিকাণ্ডের ৩ দিন আগে এবং অন্যটি ১ মাস ৩ দিন আগে।
এছাড়া প্রতি মাসে এলসি করা হয়েছে। আর জানুয়ারি মাসে একদিন (২২ তারিখ), ফেব্রুয়ারিতে পাঁচদিন (৪, ১১, ১৭, ২৬ ও ২৮ তারিখ) এবং মার্চে তিনদিন (৩, ১১ ও ২৫ তারিখে) শিপমেন্ট করা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়, কারখানা বন্ধ ছিল না।
মাকড়শার জালের বিষয়ে অভিযোগে বলা হয়, ফায়ার ব্রিগেডের হোসপাইপ দিয়ে বিপুল পরিমাণ পানি নিক্ষেপের কারণে কারখানার ভেতরে ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি পানি জমে যায়। অথচ সেই পানিতে কারখানার ভেতরে থাকা সাকার ও বয়লারের মাকড়শার জাল ছিড়ে যায়নি- এটাও অবান্তর। এতেই প্রমাণিত হয়, সার্ভে রিপোটটি মিথ্যা। আর ফায়ার ব্রিগেডের জমে যাওয়া পানি থেকেই বোঝা যায় আগুনের ভয়াবহতা।
আব্দুর রহমান অভিযোগে আরও বলেন, জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু কার্টন আধা পোড়া অবস্থায় পাওয়া গেছে। অধিকাংশ কার্টন ফায়ার ব্রিগেডের ছোড়া পানিতে বিনষ্ট হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, সার্ভেয়ার অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া কারখানার মূল প্যাকিং ও ফিনিশিং সেকশনের চিত্র তুলে ধরেননি। নিজস্ব উদ্দেশ্য সাধনে কারখানার পুড়ে যাওয়া অংশের আশপাশের চিত্র তুলে ধরেছেন।
এ অভিযোগের পর ঘটনার তদন্ত করার উদ্যোগ নেয় বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা। নতুন করে জরিপের জন্য মেসার্স এশিয়ান সার্ভেয়ার নামে একটি জরিপ প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এতেই বের হয়ে আসে সোনালী সার্ভেয়ারের মিথ্যা জরিপ প্রতিবেদন দেওয়ার তথ্য। এশিয়ান সার্ভেয়ারের জরিপে প্রথমে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৪২ হাজার ২০০ টাকা। দ্বিতীয় দফায় তা আরও বেড়ে হয় ১৯ লাখ ৪০ হাজার ৯৮০ টাকা।
ক্ষতি নির্ধারণের বিষয়ে এশিয়ান সার্ভেয়ারের জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষতিগ্রস্ত দ্রব্যাদি সরিয়ে ফেলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দ্রব্যাদি দেখা ও পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ফলে কাগজ-পত্র ও ক্ষতিগ্রস্ত সম্পত্তির ছবির ওপর নির্ভর করে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে।
আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, দ্বিতীয় জরিপে (এশিয়ান সার্ভেয়ারের জরিপ) প্রমাণিত হয়েছে, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের বিমা গ্রাহক এসবি নিটওয়্যারের ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ সংক্রান্ত সোনালী সার্ভের প্রতিবেদনটি সঠিক ছিল না। এ জন্য এশিয়ান সার্ভেয়ারের জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী গ্রাহকের বিমা দাবির টাকা পরিশোধ করতে কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজিরুল ইসলামের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে এবং অফিসের ফোনে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আর কোম্পানির চেয়ারম্যান এ কে এম আজিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৫
এএসএস/এএসআর