ঢাকা: সচিবালয়ে বছর শেষের দিনটা একটু সরগরমই থাকে। কিন্তু এবারের শেষ দিনটা যেনো তার চেয়েও বেশি।
সরকারি চাকুরে আবদুল আজিজের দিনটি কেবল বছরের শেষ দিনই ছিলো না, কর্মদিবসেরও শেষদিন তার। এতদিনের কাজের জায়গা ছেড়ে যাওয়ার সময় মুখে কষ্টের ছাপ থাকার কথা, কিন্তু আবদুল আজিজকে আনন্দিতই মনে হলো। হাসিমুখে ঘুরে ঘুরে সহকর্মীদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছিলেন তিনি । সহকর্মীরাও আদুরে গলায় বিদায় দিচ্ছিলেন।
তবে যাওয়ার আগে আবদুল আজিজের পকেটের স্বাস্থ্য ভালো করে দিল সরকার! সেকথাও বললেন কেউ কেউ। ’
৪৭০০ টাকা মাইনেতে সচিবালয়ের অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব শাখার অফিস সহকারীর পদে আবদুল আজিজ কাজ করছিলেন। নতুন স্কেলে তা দাঁড়িয়েছে ৯৩০০ টাকা। এলপিআর সেই হারেই বেতন ভাতা পাবেন। আর অবসরে গিয়ে পেনশনও পাবেন ৯০ শতাংশ করে। চাকুরির শেষভাগে এমন একটি বিষয় আবদুল আজিজকে খুশি করে তুলেছে। আর বলাই বাহুল্য খুশি হয়ে থাকবে তার পরিবারও। কারণ যে পেনশন তিনি পাবেন, তাও বেশ ভালো একটি অংক।
বাংলানিউজকে হাসিমুখে আজিজ বলেন, পরিবার খুব খুশি। শেষ বেলায় বড় টাকা পাব। চার ছেলেমেয়ের পড়ালেখাও প্রায় শেষ। ছোট মেয়েটা ইন্টারমিডিয়েট পড়ে। শেষ বেলায় সরকার মনটা খুশি করে দিছে।
বলেন, আগের হিসেবে ১২ মাসের নগদায়ন পাওয়ার কথা, কিন্তু এখন পাব ১৮ মাসের নগদায়ন। ছুটির হিসেবটাও ১৮ মাসের হবে কিনা সেটা এখনো বুঝতে পারছি না। যা হোক, খুব খুশি আছি।
আবদুল আজিজতো অবসরে যাচ্ছেন। কিন্তু যারা এখনও চাকরিতে বহাল, কিংবা যারা সদ্য চাকরিতে বহাল তাদেরও খুশি ধরে না। কারণ নতুন বেতন কাঠামো অনুসারে মাইনে পাবেন ডিসেম্বর থেকেই।
রোববার (৩ জানুয়ারি, ২০১৬) থেকে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে বাড়তি বেতনের টাকা।
মন্ত্রণালয়গুলোর বিভিন্ন শাখায় ঘুরে এই বেতন-ভাতার আলাপই শোনা যাচ্ছিলো।
হিসাব শাখাগুলোতে খাটুনি বেশি। কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কাগজপত্র, হিসেব, কত বেতন পেতেন-এখন কত পাবেন, সব মিলিয়ে কাজ সমাধা করতে হচ্ছে তাদেরই। কিন্তু তারাও খুশি। এই হিসাবের অংক তাদের ক্ষেত্রেও হচ্ছে প্রযোজ্য।
অর্থবিভাগের অ্যাকাউন্টেন্ট তরুণ কুমার সরকার বাংলানিউজকে জানালেন, ডিসেম্বরের বেতন, জুলাই ও আগস্ট মাসের এরিয়া রোববার থেকে পাওয়া শুরু হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যসহ ফিক্সেশন কপি প্রধান হিসাব রক্ষকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। রেকর্ড ও বেতন নির্ধারণ ফর্মের সঙ্গে মিলিয়ে যাচাই করে তথ্য ঠিক থাকলে জানিয়ে দেওয়া হবে বিল প্রদান বোর্ডকে। সে ভিত্তিতে বেতন ও এরিয়ার টাকা চলে যাবে অ্যাকাউন্টে।
যাদের সব ঠিক আছে, তারা রোববার থেকেই বেতন তুলতে পারবেন, অন্যদের দুই-এক দিন দেরি হতে পারে।
নৌ-মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম খানের সঙ্গে বিষয়টি আলাপ করতেই তিনি বলেন, খুব ভালো লাগছে। নিজের বেতন বাড়ার জন্য শুধু নয়, সহকর্মীদের মধ্যে যাদের বেতন নিয়ে আগে কিছুটা অখুশি ভাব ছিল, তারা এখন সবচে খুশি। এবার ভালো বেতন পাচ্ছেন সবাই। প্রসেসিং-এ এক/দুইদিন সময় লাগতে পারে প্রাথমিকভাবে। তবে সেটাতে কারও আনন্দ কমছে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, আট বছর পর টাইম স্কেল পাওয়ার কথা, দুই মাসের জন্য ধরা খেয়ে গেলাম। সেটিতো আর পাব না। এজন্য একটু মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু পরে হিসেব মিলিয়ে দেখলাম, মন খারাপের কিছু নেই। সব মিলিয়ে সবাই লাভবান হচ্ছি।
তিনি বলেন, ২০১৬’র ৩ জানুয়ারির ভিতরে বকেয়াসহ, জুলাই ও আগস্টের এরিয়ার এবং ডিসেম্বরের বেতন পাব। বড় একটা অ্যামাউন্ট। যা স্রেফ স্বপ্ন ছিল একসময়, সেটাই বাস্তব এখন। যার যার দপ্তরে এসব নিয়েই মেতে আছি। কাজের উৎসাহও কতটা বেড়েছে- তা বলে বোঝানো যাবে না।
নন-গেজেটেড যারা, তারা রোববারই বেতন তুলতে পারবেন বলে অর্থবিভাগ কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেন।
হিসাব শাখাগুলোতে একের পর একজনের বেতনের হিসেব বিল আকারে জমা পড়ছে। ব্যস্ততা আর খুনসুটিতে কাটছে তাদের এ আনন্দের সময়। বলছেন, অনেক প্রতীক্ষা আর প্রার্থণার পর প্রাপ্তিটাও অনেক বড়।
বিবাহিত-অবিবাহিত সহকর্মীদের হাসি-আলাপও বেতনকেন্দ্রীক। ক্যান্টিনে চায়ের টেবিল থেকে কানে আসে, ‘ধুর! আমিও বিয়ে কইরা ফেললাম, বেতনও এখন বাড়লো। বিয়েটা একটা বছর পরে করলেই ভালো করতাম। তোর কপালটা ভালো, মোটা বেতন পাবি, বিয়েটাও আরও ভালো হবে’- বলেই অট্টহাসি সমস্বরে।
বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
এসকেএস/এমএমকে