ঢাকা: শতভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংককে মূলধন ঘাটতি পূরণে তিনদফায় আড়াই হাজার কোটি টাকা দিয়েছে সরকার।
বুধবার (৩০ডিসেম্বর) তৃতীয় কিস্তিতে ১ হাজার ২শ কোটি টাকা দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেসিক ব্যাংকের মূলধন যোগান দিতে অর্থমন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। তার আলোকেই তৃতীয় কিস্তির ১হাজার ২শ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।
জানতে চাইলে বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও পরিমাণের বিষয়ে কোনো নিদিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি।
অর্থ-মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ জানায়, ২০১৪ সালের মে মাসে ১ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা মূলধন সহায়তা চেয়ে আবেদন করে বেসিক ব্যাংক। ওই বছরের ডিসেম্বরেই ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি পূরণে ৭৯০ কোটি টাকা দেয় সরকার। দ্বিতীয় দফায় আরও ৪০০ কোটি টাকা দেয় অর্থ বিভাগ।
ব্যাপক ঋণ অনিয়মের ফলে মূলধন ঘাটতি চরম আকার ধারণ করেছে বেসিক ব্যাংকের। আগে দু’দফায় ১ হাজার ১৯০ কোটি টাকা মূলধন যোগান দেওয়ার পরেও ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি রয়েছে ৩ হাজার ৫০ কোটি টাকা।
ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তৃতীয় বারের মত আরও ২ হাজার কোটি টাকার মূলধন সহায়তা চেয়ে আবেদন করে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। ঘুরে দাঁড়াতেই ব্যাংকটিকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা মূলধন যোগান দিল সরকার। অর্থ-মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ বুধবারই এ অর্থছাড় করেছে।
করের টাকায় বারবার ব্যাংকের মূলধন যোগান দেওয়াকে অনৈতিক বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ড. খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তিনি বলেন, পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে মূলধন ঘাটতি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোতে। মালিক হিসেবে সরকার মূলধনের যোগান দেওয়াটা বেআইনি না হলেও অনৈতিক। বেসিক ব্যাংকে ডাকাতি হয়েছে। কতিপয় ব্যক্তির দুর্নীতির খেসারত দেশের সব জনগণ দেবে এটা হতে পারে না।
সূত্র জানায়, ২০১২-১৩ সালে বেসিক ব্যাংকের শান্তিনগর, গুলশান ও দিলকুশা শাখা থেকে অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বের করে নেয় কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপ। এ ঘটনায় ২০১৪ সালের ২৫ মে তৎকালীন এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ ও ২৯ মে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার আগেই পদত্যাগ করেন তখনকার চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু। এরপর আলাউদ্দিন এ মজিদের নেতৃত্বাধীন পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৭ কর্মকর্তাকে অপসারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ৮ ডিসেম্বর অপসারণ করা হয় ব্যাংকের তিন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও একজন মহাব্যবস্থাপককে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ব্যাংকের ৬৮ শাখার মধ্যে লোকসানী ৩৮টি। খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণে সুবিধা পেতে ব্যাংকের হিসাব থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা বাদ দেওয়া হয়েছে।
এরপরও গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
এসই/এসএইচ