ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

রাইপেনে পাকছে টমেটো!

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৬
রাইপেনে পাকছে টমেটো! ছবি: দীপু মালাকার / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজশাহী থেকে ফিরে: রাজশাহী শহর পেরিয়ে কাঁকনহাট থেকে গোদাগাড়ি যাওয়ার পথে দু’পাশে ক্ষেত লাল হয়ে আছে টমেটোতে। তবে এই টমেটো এখনই পেকে যাওয়ার কথা নয়।

সরেজমিন দেখা যায়, টমেটো পাকানো হচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক দিয়ে। মশার ওষুধের মতোই রাসায়নিক স্প্রে করা হচ্ছে সবুজ টমেটোর গায়ে। সেখান থেকেই বাংলানিউজের হাতে আসে কৃত্রিমভাবে টমেটো পাকানোর রাসায়নিক উপাদান রাইপেন-১৫ এর কৌটা।
 
চীন থেকে আসা রাইপেন-১৫ এর কৌটায় স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে, কোন কৃষিজ পণ্য/ফল/সব্জি-ফল পকানোর জন্যে রাইপেন ১৫ ব্যবহার করা যাবে না।   
 
রাইপেন-১৫ একটি প্ল্যান্ট গ্রোথ রেগুলেটর। যার মূল উপাদন হলো ৮০ শতাংশ ইথোফোন। মূলত তুলা, আখ এবং আনারসের আগাম ফুল-ফল আনয়ন, ফোর্স ফ্লাওয়ারিং ও ফলন বৃদ্ধি এবং আখের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা ও ফলন বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার হয়। তবে রঙিন এ রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার হচ্ছে টমেটোকে রঙিন করে তুলতে।
 
গোদাগাড়ি পথের দু’পাড়েই এ ধরনের টমেটো পাকানোর ক্ষেত। ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তিন দিনের মতো সময় লাগে এ টমেটো পাকাতে। টমেটো লাল হয়ে যায়। এরপর সারা দেশের বাজারগুলোতেই পাওয়া যায় এ টমেটো। রাইপেন দিয়ে পাকানো টমেটো এক সপ্তাহ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত ঠিক থাকে বলে জানান তিনি।
 
রাইপেন ছাড়াও ফিলফেট, প্রোমোট, ফে মার্শাল ও রাইনো নামের তরল ও পাউডার জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ পানির সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে মেশিনের সাহায্যে ছিটানো হয় বলেও জানান এই ব্যবসায়ী। গোদাগাড়ি থেকে দেশের বিভিন্ন বাজারে সবচেয়ে বেশি টমেটো যায় বলে জানান নুরুল।
 
দিনে দুপুরে প্রকাশ্যেই চলছে এই অবৈধ প্রক্রিয়ায় টমেটো পাকানো। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এটা এখানে পুলিশ প্রশাসন থেকে সবাই জানে। এখানে ব্যবসায়ীরা স্বীকার করে না এটি অবৈধ প্রক্রিয়া।

গোদাগাড়ির বিভিন্ন মাঠে এই স্প্রে ছিটানোর কাজ করেন রশিদ মিয়া। তিনি বলেন, আখের অংকুরোদগম বৃদ্ধির জন্যে প্রতি ২০০ লিটার পানিতে মাত্র ১০০ মিলি রাইপেন মিশিয়ে আখের সেটগুলো চুবিয়ে নিতে হয়। তবে টমেটো পাকানোর জন্যে ৫০ মন টমেটোতে ৩০ লিটার পানিতে একশ’ মিলি রাইপেন দেয়া হয়। এতে টমেটো দ্রুত লাল হয়ে যায়।
 
জমি থেকে টমেটো তুলে ২৪ ঘণ্টায় দু’বার রাইপেন ছিটানো হয়। এরপর তা শুকনো কাঁথা ও ধানের নাড়া বা কুটো দিয়ে জাগ দেওয়া হয়।
 
ব্যবসায়ী তুহিন বাংলানিউজকে বলেন, স্বাভাবিকভাবে টমেটো পাকতে অনেক সময় লাগে। এছাড়‍াও ওষুধ না দিলে দ্রুত পচে যায়। তখন বাজারে দাম কমে যায়। টমেটো না পচার জন্যেই ২০-২৫ দিন আগে টমেটো তুলে রাইপেন মিশিয়ে পাকানো হয়।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুরাইয়া ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শীতকালীন এই সব্জি যেমন ফলের মতো খাওয়া যায়, তেমনি সব্জি হিসেবেও বিপুল জনপ্রিয়। এটি খেতে যেমন ভাল তেমন প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ ও আয়রন থাকায় শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ায় এবং এতে আপেলের সমপরিমাণ ভিটামিন পাওয়া যায়। তবে মানবদেহের অনুপযোগী এসব রাসায়নিক পদার্থ টমেটোতে মেশানো হচ্ছে পাকানোর জন্যে। যেসব রাসায়নিক দেহে প্রবেশ করলে দ্রুততর সময়ের মধ্যে মানুষের হৃদরোগ, কিডনি ও লিভার সমস্যা হতে পারে।
 
বিষমিশ্রিত এসব টমেটো গোদাগাড়ীর সবচেয়ে বড় দুটি টমেটোবাজার রেলগেট-রেলবাজার ও বাসলীতলা এলাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে কেমিক্যালমুক্ত কাঁচা টমেটো বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি সাড়ে ১০০০ থেকে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত। অপরদিকে কেমিক্যালযুক্ত কৃত্রিম পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায়।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫  ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৫
এমএন/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।