ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাণিজ্যমেলার উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী

নতুন নতুন বাজার খুঁজতে হবে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৬
নতুন নতুন বাজার খুঁজতে হবে

ঢাকা: দেশের ব্যবসায়ীদের পণ্য বহুমুখীকরণের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বে নতুন নতুন বাজার খুঁজতে হবে। কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা আছে তা বিশ্লেষণ করতে হবে।

সে অনুযায়ী রফতানিযোগ্য পণ্য উৎপাদনে দৃষ্টি দিতে হবে।

শুক্রবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের পণ্যের অনেক সুনাম রয়েছে। পাট একসময় রফতানি হতো বিভিন্ন দেশে। মসলিন একসময় খুব নামকরা ছিল। তাই আমাদের এখন যেসব পণ্য আছে, সেগুলো বহুমুখীকরণ করতে হবে। আমাদের নতুন নতুন বাজার খুঁজতে হবে।

বাণিজ্য মেলার গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ মেলা নিয়ে অন্যদের আগ্রহও সৃষ্টি হয়েছে। বিদেশিদের অংশগ্রহণের ফলে অভিজ্ঞতা বিনিময় করা যায়। বাংলাদেশি পণ্য বাইরে প্রচুর রফতানি করা হচ্ছে। এতে নতুন পণ্য রফতানির সম্ভাবনাও বাড়ছে। বিষয়টি মাথায় রেখে ব্যবসায়ীদের কাজ করতে হবে। শুধু একটি পণ্যকে ধরেই নয়, যেসব পণ্য রফতানি করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা আছে তা বিশ্লেষণ করতে হবে ব্যবসায়ীদের। কোন রফতানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন করা যায় সে দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

এ সময় জাহাজ ও সিরামিক শিল্পের সম্ভাবনার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ মিঠাপানির মাছ রফতানিতে চতুর্থ স্থানে আছে। আন্তর্জাতিক মানে প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে এটা বিশ্ববাজারে আরও সমাদর পাবে। আর তা করতে পারলে কর্মসংস্থানও বাড়বে।

‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এতো খাল-নদী বিশ্বের আর কোথাও নেই। আমাদের বিশাল সমুদ্র সীমা রয়েছে। এটাও সম্ভাবনাময় খাত। আওয়ামী লীগ সরকার এসব খাত নিয়ে গবেষণায় গুরুত্ব দিয়েছে। ’

বাংলাদেশে অনেক শাক-সবজি উৎপাদন ও রফতানি হচ্ছে এবং এ খাত নিয়ে আরও কাজ করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অনেক মুসলিম দেশ আছে যারা বাইরের দেশ থেকে হালাল মাংস কেনে। তবে, আমরা কেন সেটি করতে পারছি না?

বক্তৃতায় চামড়া শিল্পের সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কেবল চামড়া কেন রফতানি করবো? এটা প্রক্রিয়াজাত করে পণ্য উৎপাদন করেও তো রফতানি করতে পারি। এক্ষেত্রেও ব্যবসায়ীদের নজর দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা অনেক ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ তৈরি করতে পারি। আরও সুযোগ রয়েছে। ব্যবসায়ীরা সে সুযোগ নিতে পারেন। আমরা তরুণদের দক্ষ করে তুলে তাদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নিতে পারি। এতে বাংলাদেশ যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ব্যবসা করতে ক্ষমতায় আসিনি। দেশের উন্নয়নে কাজ করতে এসেছি। আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসাবান্ধব। আমরা ব্যবসায়ীদের জন্য পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করতে এসেছি।

আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে গত সাত বছরে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে এ দেশ ছিল ঘূর্ণিঝড়, দুযোর্গের দেশ। কিন্তু এখন অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো করছে, সেটা বিশ্বদরবারেই বলা হচ্ছে।

‘বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। ছেলে-মেয়েদের বিনামূল্যে বই পৌঁছে দিচ্ছি। অনেকে অবাক হয়ে যায়। আমাদের ছেলে-মেয়েরা নতুন নতুন বই পেয়ে ভালোভাবে পড়াশোনা করে সুশিক্ষিত হয়ে দেশের নেতৃত্ব দেবে, এটাই আমরা চাই। ’

‘আমাদের এগিয়ে যাওয়ার একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে। জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছি। আমরা বিজয়ী জাতি। মাথা উ‍ঁচু করেই আমরা নিজেদের গড়ে তুলবো। এজন্য আরও ব্যবসা-শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। ’

শেখ হাসিনা বলেন, রফতানি আয় বিএনপির আমলে ১০ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার ছিল। এখন তা ৩১ দশমিক ৩ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। নতুন মার্কেট খুঁজলে তা আরও বাড়বে। পরমুখাপেক্ষী হয়ে চলতে হবে না। রিজার্ভ বেড়েছে। বাজেট চারগুণের বেশি বেড়েছে।

বাংলাদেশকে একসময় যারা কটাক্ষ করতো, এখন তারা ভালো আখ্যা দিয়ে প্রশংসা করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ২০৫০ সালে পশ্চিমা দেশগুলোকেও উন্নয়নে ছাড়িয়ে যাবে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করেছে, কিন্তু বিজয়ী জাতি নিম্ন থাকবে না। উঁচু স্তরে যাবে।

‘বাংলাদেশে দারিদ্র্য হ্রাস পাচ্ছে। গ্রামের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। ৮ হাজার পোস্ট অফিস ডিজিটাল সেন্টারে পরিণত হবে। আড়াই হাজার ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। বাকিগুলো হচ্ছে। অনলাইনে সব কিছুই করা যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তব। সবই অনলাইনে কেনা যাবে।

শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের পণ্যের মান বাড়াতে হবে, ব্র্যান্ডিংয়ের প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে। পণ্যের মান বাড়লেই চাহিদা বাড়বে। এখন সেদিকেই দৃষ্টি দিতে হবে।

বক্তৃতার পর শেখ হাসিনা ২১তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই‘র সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদসহ দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী, বেসামরিক-সামরিক কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৬/আপডেট ১৭১২ ঘণ্টা
এমইউএম/আরএ/এমএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।