ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

জমি সংকটে আটকে আছে সম্ভাবনাময় তুলা চাষ

আবু খালিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০১৬
জমি সংকটে আটকে আছে সম্ভাবনাময় তুলা চাষ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় ফসল ‍তুলার উৎপাদন বাড়লেও, বাড়ছে না তুলা চাষের জমির পরিমাণ। গত ছয় বছরের ব্যবধানে তুলার উৎপাদন বেড়েছে তিনগুণ।

কিন্তু জমির পরিমাণ বেড়েছে মাত্র চার ভাগের এক ভাগ।

এছাড়া স্বল্প জনবল নিয়ে তুলার চাষ সম্প্রসারণেও গতি পাচ্ছে না তুলা উন্নয়ন বোর্ড। সব মিলিয়ে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তুলা চাষের সফলতা আটকে আছে।

তুলা উন্নয়ন বোর্ড বলছে, জমি ও জনবল উভয় সংকটে তুলার চাষ ও উৎপাদন আশানুরূপভাবে বাড়ানো যাচ্ছে না। তবে উৎপাদনে সাড়া মিলেছে।

আর সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উচ্চ ফলনশীল নতুন নতুন জাতের সম্প্রসারণ, কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অপ্রচলিত জমিতে তুলার চাষ বৃদ্ধি করতে পারলেই তুলা চাষে সর্ব্বোচ্চ সফলতা পাওয়া যাবে।

তুলা চাষ ও উৎপাদনের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র উঠে এসেছে। তবে তুলা চাষে অনেক চাষির মুখে হাসিও ফুটে উঠেছে।
 
বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. ফরিদ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্বের মধ্য তুলা আমদানি ও ব্যবহারের দিক দিয়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। অথচ দেশে তুলা চাষ ও উৎপাদনের সম্ভাবনা অনেক বেশি।

তিনি জানান, এ পরিসংখ্যানই বলে দেয়, দেশে তুলার চাহিদা ও ব্যবহার কতো বেশি। আর আমাদের দেশের মাটিও তুলা চাষের উপযোগী। সুতরাং, এ বিষয়ে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিলে আট থেকে দশ লাখ বেল তুলা উৎপাদন সম্ভব। এতে রফতানি ব্যয় কমার পাশাপাশি ধরা দেবে সফলতা।
তুলার চাষ ও উৎপাদন বাড়াতে সরকারের প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা দরকার বলেও মনে করেন এ ঊর্ধতন কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৩২ হাজার ৬০০ হেক্টর পাহাড়ি ও সমতল জমিতে তুলা উৎপাদন হয়েছে ৫০ হাজার ১৭৫ বেল। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে তুলা উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ৫২ হাজার ৫৩৬ বেল।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ছয় বছরের ব্যবধানে পাহাড়ি ও সমতল জমি বেড়েছে ১০ হাজার ৬০০ হেক্টর। আর ‍উৎপাদন বেড়েছে এক লাখ দুই হাজার ৩৬১ বেল।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গত অর্থবছরে বিদেশ থেকে ৫৫ লাখ বেল তুলা আমদানি করতে হয়েছে। কিন্তু এই আমদানি করা তুলার মান নিয়ে আমদানিকারকদের মাঝে অসন্তুষ্টি আছে। অথচ দেশে উৎপাদিত তুলার গুণগত মান অনেক ভালো। বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে দেশের তুলার মান অনেক ভালো।

বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ডের (সদর দফতর) উপ-পরিচালক ড. তাসদিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, তুলার গুরুত্ব অপরিসীম। এর বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে। সুতরাং, আমাদের দেশে তুলার চাষ ও উৎপাদন বাড়ানো খুবই জরুরি।

তিনি জানান, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নেওয়া পদক্ষেপে তুলার উৎপাদনের সঙ্গে সফল চাষির সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু তা চাহিদার তুলনায় খুবই সীমিত। সবজি, আমন ধানসহ একাধিক ফসলের সঙ্গে লড়াই করে তুলার চাষ বৃদ্ধি করতে হচ্ছে।

এ কর্মকর্তা মনে করেন, তুলার চাষ সম্প্রসারণ বৃদ্ধিতে চাষিদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর পাশাপাশি কমপক্ষে প্রতিটি জেলায় তুলা বোর্ডের অফিস ও জনবল থাকতে হবে।

সূত্র জানায়, জনবল সীমিত থাকায় বর্তমানে প্রত্যক্ষভাবে মাত্র ৩২ জেলায় তুলার উন্নয়নে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। মাত্র ১৩টি জেলায় অফিস রয়েছে। ৮৮০ পদের বিপরীতে ৭০০ জনের মতো জনবল রয়েছে। অথচ দরকার কয়েক হাজার কর্মীবল।

তবে সারা দেশে অল্প পরিসরে বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদন করে তুলা চাষ এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড।
 
কর্মকর্তারা জানান, চরাঞ্চল, বরেন্দ্রভূমি, লবণাক্ত জমি, পাহাড়ি এলাকা, তামাক চাষের জমি, খরা সহিষ্ণুসহ প্রায় সব এলাকাতেই এখন তুলা চাষ সম্ভব হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে বোর্ড। এছাড়া ধানসহ বিভিন্ন ফসলের সঙ্গেও তুলা চাষে সফলতা পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০১৬
একে/আরআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।