ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

উত্তরাঞ্চলে ভারী শিল্পায়নের হাতছানি

শফিক ছোটন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৬
উত্তরাঞ্চলে ভারী শিল্পায়নের হাতছানি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নওগাঁ: দেশের উত্তরাঞ্চলে ভারী শিল্পায়নে সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে নওগাঁ-জয়পুরহাটের খনিজ সম্পদ। প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ও চিনামাটির সন্ধান পাওয়ায় আশায় বুক বাঁধছেন এ অঞ্চলের শিল্পোদ্যোক্তারা।

 
 
শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, কেবল যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন আর বিনিয়োগ বাড়ানো গেলেই অঞ্চলটি হতে পারে খনিজ সম্পদ আহরণের একটি বড় ক্ষেত্র। পাশাপাশি গড়ে তোলা যেতে পারে শিল্প জোন।  
 
ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) সূত্র জানায়, ১৯৬২ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলে অন্তত ৫/৭টি স্থানে খনিজ সম্পদের সন্ধানে প্রাথমিক জরিপ চালানো হয়। জরিপের পর কূপ খনন করে নওগাঁর পত্নীতলায় চিনামাটি, জয়পুরহাটের জামালগঞ্জে কয়লার সন্ধান পাওয়া যায়।   
 
জিএসবির মহাপরিচালক ড. নেহাল উদ্দিন জানান, জামালগঞ্জের খনি দেশের প্রথম ও সবচেয়ে বড় কয়লা খনি। জয়পুরহাট ও নওগাঁ জেলার প্রায় ১২ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এ খনির বিস্তৃতি। খনিতে প্রায় ১ হাজার ৫০ মিলিয়ন টন কয়লার মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।  
 
তিনি জানান, জামালগঞ্জ কয়লা খনিতে রয়েছে মিথেন গ্যাস। কিন্তু কি পরিমাণ আছে তা এখনও জানা যায়নি। এ বছরের (২০১৬) শুরুতেই ওই খনিতে মিথেন গ্যাসের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সিবিএম পদ্ধতিতে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ তেল গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)।  
 
পেট্রোবাংলা জামালগঞ্জ সিবিএম স্টাডি প্রকল্পের পরিচালক আখতারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, জয়পুরহাটের বড় মাঝিপাড়া এলাকায় কূপ খনন চলছে। গ্যাসের পরিমাণ নির্ণয়ে ওই খনি এলাকায় ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর দি এক্সট্রাকশন অব কোল বেড মিথেন (সিবিএম) এ্যাট জামালগঞ্জ কোল ফিল্ড’ এই প্রকল্পের আওতায় মোট ৩টি কূপ খনন করে নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে।  
 
তিনি বলেন, আশা করা হচ্ছে জামালগঞ্জ খনি থেকে প্রাপ্ত গ্যাস দেশের জ্বালানি খাতের সঙ্গে একটি বড় অংশ যোগ হবে। এছাড়া প্রাপ্ত গাসের পরিমাণ আশানুরুপ হলে এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।   
 
এদিকে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার তাজপুরে মূল্যবান খনিজ সম্পদের সন্ধানে কাজ শুরু করেছে জিএসবি। সংশ্লিষ্টরা জানায়, তাজপুরে স্তরতাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহ ও খনিজ সম্পদের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে একটি নিরীক্ষা কূপ খনন শুরু করা হয়েছে। আগামী ৫ থেকে ৭ মাস ধরে অন্তত ৪ হাজার ফিট গভীর করে কূপ খননের মাধ্যমে খনিজ সম্পদের সম্ভাব্যতা নিয়ে গবেষণা চালানো হবে।  
 
তাজপুর কূপ খনন টিমের টিম লিডার ও জিএসবির  উপ পরিচালক মহিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, তাজপুরে কয়লা পাওয়া গেলে এটি হবে দেশের ৬ষ্ঠ কয়লা খনি। এর আগে যেসব কয়লা খনি আবিষ্কার হয়েছে সেগুলো জিএসবির গবেষকরাই আবিষ্কার করেছেন।  
 
তিনি জানান, তাজপুরে মাটির ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার ফুট নিচে পাললিক শিলার পুরুত্ব বেশি পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এখানে কয়লা, সাদা মাটি ও মিথেন গ্যাসসহ মূল্যবান খনিজ সম্পদ রয়েছে।  
 
বিভিন্ন খনিজ সম্পদের প্রাপ্তি ও সম্ভাবনাকে আশির্বাদ হিসেবে দেখছেন এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। নওগাঁ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোহাম্মদ আলী দ্বীন বাংলানিউজকে জানান, এ পর্যন্ত কৃষি ভিত্তিক কিছু ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের শিল্প গড়ে উঠলেও উত্তরাঞ্চলে পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি হয়নি ভারী শিল্পায়নের। কিন্তু প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ প্রাপ্তির খবরে নতুন করে আশার আলো দেখছেন এ অঞ্চলের শিল্পোদ্যোক্তারা।  
 
তিনি বলেন, তুলনামূলকভাবে অনেকটা পিছিয়ে চলছে নওগাঁ, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোরসহ আশপাশের জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য। গ্যাস ও পর্যাপ্ত বিদ্যুতের অভাবে এ অঞ্চলের শিল্প দিন-দিন মুখ থুবড়ে পড়ছে। উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ায় অন্যান্য এলাকার তৈরি পণ্যের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলা যাচ্ছে না।  
 
সম্প্রতি খনিজ সম্পদ, বিশেষ করে মিথেন গ্যাস তথা প্রাকৃতিক গ্যাস প্রাপ্তির খবরে ব্যবসায়ীরা উত্তরাঞ্চলে ভারী শিল্পায়নের স্বপ্ন দেখছেন বলে জানান তিনি।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৬           
এমজেড/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।