ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ম্যানিলার ক্যাসিনো অর্থপাচার আইন মুক্ত

৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের কোনও ভরসা নেই!

ডেস্ক রিপোর্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৬
৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের কোনও ভরসা নেই!

ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থের যে অংশ ফিলিপাইনের ক্যাসিনোতে খরচ হয়েছে তা ফেরত পাওয়ার কোনও আশাই নেই । সুইফট কোড হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ এর ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার খোয়া গেলেও তার মধ্যে ৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার খরচ হয়েছে এই ক্যাসিনোতে।

আর ফিলিপাইনের ক্যাসিনোগুলো যেহেতু অর্থপাচার আইনের বাইরে সেহেতু এই অর্থের কোনটাই ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হবে না। ম্যানিলা থেকে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, এই অর্থ এখন এক জাতিগত চীনা ব্যক্তির হাতে। ম্যানিলাতেই ওই ব্যক্তির বাস।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত কয়েক দিন ধরে একটি বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় দালালের মাধ্যমে ফিলিপাইনের মোট ৭,৮০,০০০ টি ফিলিপিনো ব্যাংকনোটের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়।

ফিলিপিন সিনেটের দুর্নীতি-বিরোধী কমিটির প্রধান তেওফিসটো গুইংগোনা নিশ্চিত করেছেন এক চালানে নয়, কিস্তিতে কিস্তিতে নোটগুলো ওই চীনা ব্যক্তির হাতে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা আগেই বলেছেন, লোপাট হওয়া অর্থ হংকং যেতে পারে। ফিলিপাইনের রিজাল কমার্সিয়াল ব্যাংক কর্পোরেশন (আরসিবিসি) গত সপ্তাহেই বলেছে, তারা সেখানে যে ৮১ মিলিয়ন ডলার জমা করা হয়েছে সে ব্যাপারে তদন্ত করছে।

তেওফিসটো গুইংগোনা বলেছেন আরসিবিসিতে থোক হিসেবে একটি অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা হয়। এবং তার কিছু অংশ ফিলিপিনো মুদ্রা পেসোতে পাল্টেও নেওয়া হয়।

এই ব্যাংক থেকে যখন অর্থ তুলে নেওয়া হচ্ছিলো তখন ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো অকেজো ছিলো। তবে তদন্তে দেখা গেছে ব্যাংক থেকে অর্থগুলো গেছে ফিলরেম সার্ভিস কর্প নামের একটি বৈদেশিক মুদ্রার দালাল প্রতিষ্ঠান হয়ে।

এদিকে ঢাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকে বড় ধরনের পরিবর্তনের পর ব্যাংকের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে তারা আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছেন। কিন্তু আরসিবিসি এই অর্থপাচারের ক্ষেত্রে কোনও দায় নিতেই রাজি হচ্ছে না।

গুইংগোনা বলেন, প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি চীনা ওই ব্যক্তিটি মূল ভূ-খণ্ডের নাকি তাইওয়ানের।

পুরো বিষয়টিতে মুখ খুলছে না ফিলরেম। আরসিবিসি’র একজন মুখোপাত্রও সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ থাকার বিষয়ে কিছু বলতে পারেন নি।

অর্থের মধ্যে ২৯ মিলিয়ন ডলার সোলায়ার নামের একটি ক্যাসিনোতে যায়। এটি দেশটির ব্লুমারি রিসোর্ট কর্পোরেশনের একটি প্রতিষ্ঠান। ফোরবসের হিসেবে ২০১৫ সালে ফিলিপাইনের ৫ম ধনাঢ্য হিসেবে নির্বাচিত এনরিক রাজন এই কর্পোরেশনের মালিক।  

সোলায়ার কর্পোরেট কমিউনিকেশনস এর প্রধান নানা সোরিয়ানো জানিয়েছেন, তদন্তাধীন বিষয়ে তাদের কোনও মন্তব্য নেই। বাকি ২১ মিলিয়ন ডলার গেলে ইস্টার্ন হাওয়াই লেইজার কোম্পানির অ্যাকাউন্টে। এটি ফিলিপাইনের একটি গেইমিং ফার্ম। তবে মিডিয়াগুলো এদের কর্তাব্যক্তিদের কোনও নাগাল করতে পারছে না।

ফিলিপাইনের রাষ্ট্রীয় প্রসিকিউটররা অর্থপাচার বিরোধী কাউন্সিল (এএমএলসি)তে আরসিবিসির বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে ঠিকই কিন্তু আরসিবিসি কোনও দায়িত্ব নিতেই নারাজ। ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপক মারিয়া সানটোস-ডিগুইটো স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলে গিয়ে বলেছেন, তাকে বলির পাঠা বানানোর চেষ্টা চলছে।

আর গুনিংগোনা বলেছেন, দেশটির অর্থপাচার বিরোধী আইনগুলোর আওতা থেকে ক্যাসিনোগুলো পুরোপুরি মুক্ত, সুতরাং চুরি যাওয়া অর্থের কোনও হিল্লে শেষ পর্যন্ত করা সম্ভব হবে কি না, সে নিয়ে তিনি সন্দিহান।

এখানে এসে সবকিছু শেষ হয়ে যায়, আর সেটাই সমস্যা, বলেন তিনি।

বাংলাদেশ সময় ২১৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৬
এমএমকে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।