ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কর ন্যায্যতা নিশ্চিত করার দাবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০১৬
কর ন্যায্যতা নিশ্চিত করার দাবি ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: অর্থবছরের শুরু থেকেই কর নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি কর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। একই সঙ্গে সরকারকে করের টাকার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য আরও বেশি সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানান তারা।

 

রোববার (০৩ এপ্রিল) দুপুরে গুলশানের একটি হোটেলে ‘সমৃদ্ধির পথে অগ্রযাত্রা: দায়িত্বপূর্ণ করপোরেট কর ব্যবস্থা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে আলোচকরা এ দাবি জানান। অ্যাকশন এইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের এক্সিকিউটিভ চেয়ারপারসন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ, ডেনমার্ক দূতাবাসের ডেভলপমেন্ট কাউন্সিলর পিটার ভোগস জনসন। অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি (কান্ট্রি ডিরেক্টর) ফারাহ্ কবির।

অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমরা ট্যাক্সের চাইতে ভ্যাটের দিকে জোর দিচ্ছি বেশি। দামি গাড়ি, বিলাসবহুল পণ্য কিনতে হলে বেশি করে ভ্যাট দিতে হবে।

তিনি বলেন, বিধিবদ্ধ সমাজে বসবাস করতে হলে ট্যাক্স দিতেই হবে। পৃথিবীর কেউ ট্যাক্স না দিয়ে থাকতে পারেন না।

করপোরেট ট্যাক্স নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য করপোরেট ট্যাক্সে চাপ দেওয়া কঠিন।

সভাপতির বক্তব্যে এম হাফিজ উদ্দিন বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য বিনিয়োগ দরকার। কিন্তু সেই সঙ্গে কর ন্যায্যতাও নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের এখানে কর ন্যায্যতার বড় অভাব। যার কাছে যে পরিমাণ কর আদায় করার দরকার তা হচ্ছে না। আবার যারা দিচ্ছেন তাদের ওপর পুনরায় কর বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

‘নতুন করে কর নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি না করে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর করের অংক বাড়ানো হয়,’ মত দেন হাফিজ উদ্দিন।

এনবিআর’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ বলেন, আমাদের জিডিপির মাত্র ১১ শতাংশ ট্যাক্স থেকে আসে। এর আওতা ১৬-১৭ শতাংশ হওয়া উচিত। এমনটা না হওয়াতেই প্রতি অর্থবছরে বাজেটে ৫ শতাংশ ঘাটতি থেকে যায়। এজন্য কর নেটওয়ার্ক বাড়াতে সামাজিক আন্দোলন করতে হবে।

ট্যাক্স ‍‌আদায়ে ফাঁকিঝুঁকির সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ট্যাক্সের জন্য আমাদের যে আইন রয়েছে- তা ১৯২৪ সালে ব্রিটিশরা করে গেছেন। তারা নিজেরাই ট্যাক্স দিতেন না। তাই যারা ট্যাক্স দেন না বা যারা আদায় করেন না, তাদের আইন দিয়ে কতটুকু কার্যকর হবে। এজন্য আইন কাঠামোরও একটি পরিবর্তন দরকার। তবে আইন বা নীতিমালা করার ক্ষেত্রে এটিও মাথায় রাখতে হবে যিনি নীতিমালা করবেন, তাকে প্রয়োগের ক্ষমতা দেওয়া যাবে না। তাহলে সে ফাঁকফোকর রেখেই কাজ করবেন।

অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল ব্যবসা এক দেশে। তারা বাংলাদেশে এসে ব্যবসা করে আর আয় নিয়ে যায় তার মূল প্রতিষ্ঠানের দেশে। তারা তো আয়ের কর অন্য দেশে দিচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রতিবেদনের একাংশ তুলে ধরে অ্যাকশন এইড ইন্টারন্যাশনালের এডভোকেসি এডভাইজার ইয়ান লিভিং স্টন বলেন, নাগরিক সুবিধা বাড়াতে করের আওতা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে নতুন নিয়ম নীতি প্রয়োজন। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর প্রদানে আরও দায়বদ্ধ হতে হবে।

এদিকে অ্যাকশন এইডের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে করপোরেট ট্যাক্স ফাঁকি ঠেকানো জরুরি। জটিল বিধি ও আইনের ফাঁকের সুযোগ নিয়ে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বড় অংকের কর দেওয়ার দায়ভার সুকৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে জিডিপির তুলনায় প্রয়োজনীয় কর আদায়ে পিছিয়ে পড়ছে দেশ। জনগুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যয় বাড়াতে পারছে না সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৬/আপডেট ১৮০৬
এসএম/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।