ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হয়েছে। সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
২০ এপ্রিল (বুধবার) সন্ধ্যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে জমা দেওয়া অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে দায়িত্বে অবহেলাকারী ৩০ থেকে ৩২ জন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ উল্লেখ করলেও হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারের সঙ্গে কোনো কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি।
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীর, তদন্ত কমিটির সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ এবং সদস্য সচিব অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস উপস্থিত ছিলেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে।
ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য বেশ কিছু সুপারিশও করেছে।
সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রযুক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশি সফটওয়্যার ব্যবহার করা; এজন্য তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ খোলা; সেখানে তিনজন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া ও তাদের নেতৃত্বে প্রযুক্তি ব্যবস্থা পরিচালিত করা।
দীর্ঘদিন থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে ত্রুটি ছিল। বিষয়টি চলতি বছরের মার্চ মাসে ধরা পড়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়াও অবৈধ অর্থ পরিশোধ ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া পদক্ষেপ পর্যাপ্ত ছিল কি না, রিজার্ভ চুরির বিষয় কেন বাংলাদেশ ব্যাংক শুরুতে সরকারের কাছে গোপন করে, এর পেছনে যৌক্তিকতা কতটুকু- তা বের করতে নির্দেশ ছিল কি-না সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রায় দুই মাস পর জমা দেওয়ার কথা রয়েছে টেকনিক্যাল প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনে এসব বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হবে। একই সঙ্গে চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনা, ভবিষ্যতে হ্যাকাররা যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটাতে পারে তার জন্য কি কি নতুন পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তারও সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করবে এই কমিটি।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের জমা রাখা অর্থ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইন ও শ্রীলংকার দু’টি ব্যাংকে সরানো হয়েছিল ভুয়া বার্তা পাঠানোর মাধ্যমে।
রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় চলতি বছরের ১৫ মার্চ ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি করে সরকার। কমিটির কার্যপরিধি অনুযায়ী, ৩০ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন ও ৭৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল: ২১, ২০১৬
এসই/এএ