ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

রানা প্লাজার সেই মেয়েটির কী স্বপ্ন!

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৬
রানা প্লাজার সেই মেয়েটির কী স্বপ্ন! ছবি: দীপু-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিআরপি (গণকবাড়ী) থেকে ফিরে: ডান হাতে ক্র্যাচের উপর শরীরের ভার, বাম কাঁধে ঝোলানো স্কুলব্যাগ। পড়ন্ত বিকেলে স্কুল ছুটির পর ফিরছে কিশোরী ইয়ানুর।

চোখে-মুখে তার আত্মবিশ্বাসের ছাপ, এগিয়ে চলছে দৃপ্ত গতিতে। এই মেয়েটি রানা প্লাজার সেই ইয়ানুর আক্তার, ভয়াবহ দুর্ঘটনায় তিনি মাকে হারিয়েছে, নিজেও দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলো।

দুর্ঘটনায় মাকে হারিয়ে এবং নিজের শরীরের প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে তিন বছর পর এখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।

ইতিহাসের ভয়াবহতম দুর্ঘটনা সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর ধ্বংসস্তূপের নিচে ১৬ ঘণ্টা চাপা পড়েছিলো। উদ্ধার হয়ে চিকিৎসা নিয়ে অনেকটা সুস্থ হয়ে সাভারের গণকবাড়ী এলাকায় নিউ মডেল স্কুলে পড়ছে ১৬ বছরের কিশোরী ইয়ানুর।

দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়ে সাভারের পক্ষঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র-সিআরপিতে এক বছরেরও বেশি সময় থেকে সুস্থ হয় সেই পোশাককর্মী।

সাভার সিআরপি থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শ্রীপুরের গণকবাড়ী শাখার তত্ত্বাবধানে থেকে স্কুলে পড়ছে ইয়ানুর।

সোমবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরের পর গণকবাড়ী সিআরপি শাখায় গিয়ে অপেক্ষার পর স্কুল ছুটি শেষে এলো ইয়ানুর। নাম এবং কোন ক্লাসের ছাত্রী- জিজ্ঞাসা করতেই মুচকি হেসে বললো, ইয়ানুর আক্তার। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি।

অভাবের সংসারে মা আনোয়ারা বেগমের সাথে দুর্ঘটনার সাড়ে চার মাস আগে ইয়ানুর যোগ দেয় ষষ্ঠতলায় ইথাটেক্স নামের কারখানায়। হেলপার হিসেবে কাজ করছিলো ইয়ানুর।

দুর্ঘটনার সেই মুহূর্ত মনে করতে না পারলেও জানায়, রাত সাড়ে ১২টায় উদ্ধার করে তাকে নেওয়া হয় সাভার সিএমএইচ হাসপাতালে। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিলো সাত দিন। এরপর  অ্যাপোলো হাসপাতালে ছিলো দুই মাস ১৪ দিন। এরপর সাভার সিআরপি। সেখান থেকে গণকবাড়ী শাখায় স্থানান্তর।

মা আনোয়ারা বেগমও কাজ করতেন ইথারটেক্সে, ১৪ দিন পর অধর চন্দ্র স্কুল মাঠে তার মরদেহ পাওয়া যায় বলে জানায় ইয়ানুর।

প্রায় দেড় বছর আগে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় ইয়ানুর। এখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। দু’পা এবং কোমরে আঘাতপ্রাপ্ত ইয়ানুর এখনও বাম পায়ে ব্যথা অনুভব করে।

বড় হয়ে কী হতে চাও- প্রশ্ন করতেই আত্মবিশ্বাসী ইয়ানুরের এক কথায় ভাষ্য, বড় থেরাপিস্ট হতে চাই।

থেরাপস্টি কেন- দুর্ঘটনার পর সিআরপি থেকে যে সেবা পেয়েছি, তারা অসুস্থ মানুষকে কীভাবে সেবা করে সুস্থ করে তোলে, এখন তাই থেরাপিস্ট হওয়ার চিন্তা।

বন্ধুরা স্কুলে ছুটোছুটি করলেও তা পারে না ইয়ানুর, স্ক্যার্চে ভর দিয়ে তার চলাফেরা। হাঁটু ভেঙে বসে পড়লে একা উঠতে পারে না। দুর্ঘটনার পর সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে যে অনুদান পেয়েছে তা বাবা ইউনুস মুন্সির নামে ব্যাংকে জমা। ছয় সন্তান রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন বাবা। ভাই-বোনগুলো বিভিন্ন ব্যক্তি এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্কুল মাদ্রাসায় ভর্তি। বাবার নতুন সংসারে এক বছরের সন্তান।

বড় থেরাপিস্ট হওয়ার পথে ভবিষৎ নিয়ে তাই শঙ্কা কাজ করে ইয়ানুরের। ‘বাবা আবার ভুলে যাবে না তো?’

ইউনুস মুন্সি সাভারে থাকলেও এখন গ্রামের বাড়ি বরিশালের হিজলায় গেছেন কয়েক দিনের জন্য।

রানা প্লাজার দুর্ঘটনার শিকার পক্ষাঘাগ্রস্ত প্রায় পাঁচশ’ জনকে সিআরপি চিকিৎসা ও পরবর্তী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানের সাভারের ম্যানেজার (ইনক্লুসিভ জব সেন্টার) মন্জুরুল করিম অনু।

সিআরপি গণকবাড়ী সেন্টার ম্যানেজার ফিরোজ সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে ইয়ানুর তাদের তত্ত্বাবধানে পড়ালেখা করছে। থাকা খাওয়াসহ অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে তাকে।

ইয়ানুরকে প্রতিষ্ঠিত করতে সব রকমের সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান ফিরোজ সালাউদ্দিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৬
এমআইএইচ/এমআইএস/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।