ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সময়ের আগেই পাকছে লিচু, দাম কম স্থানীয় বাজারে

আবু খালিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১১ ঘণ্টা, মে ১, ২০১৬
সময়ের আগেই পাকছে লিচু, দাম কম স্থানীয় বাজারে ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঈশ্বরদী, আবদুলপুর জংশন থেকে: নাটোরের আবদুলপুর জংশনে মধুমতি এক্সপ্রেস থামতেই শোনা গেলো, ‘এই… লিচুর ‘শ’ একশ টাকা, মোজাফ্ফর ১০০ টাকা’। ‘কম দামে লিচু খান’।

‘লিচুর এলাকায় দাম একটু কম হবে এটাই স্বাভাবিক’ শাহরিয়ার নামের যাত্রীর এই কথা শেষ না হতেই আক্ষেপের সুরে সেন্টু মিয়া বলে ওঠলেন, বাগানের চিত্রটি দেখলে বুঝতে পারতেন, কেন এতো কম দামে লিচু বিক্রি করতে হচ্ছে।

কাছে গিয়ে কথা বলতে গিয়ে সব গোমর ফাঁস হলো। সেন্টু বললেন, এবারই প্রথম এতো কম দামে লিচু বিক্রি করছি। তাও আবার লিচুর মৌসুম শুরুর দিকে। যে গাছে পাঁচ হাজার লিচু হওয়ার কথা সেই গাছে মাত্র ৫০০টি লিচু ভালো পেয়েছি। বাকি সব রোদে পুড়ে ফেটে নষ্ট হয়ে গেছে।

পাশেই থাকা আরেক লিচু চাষি বারেক মিয়া জানালেন, লিচুর মান অনুযায়ী এসব লিচু পাইকারি ১০০টি লিচুর দাম পরতো দুই থেকে তিন শত টাকা। কিন্তু সময়ের আগেই পেকে যাওয়ায় ক্ষতিতে বিক্রি করছেন। তাছাড়া সংরক্ষণও করে রাখতে পারছেন না। তাই এখন তাদের ক্রেতাদের পেছনে ছুটতে হচ্ছে, নইলে বিপরীত চিত্র হতো।

বাংলানিউজের সরেজমিনে শনিবার (৩০ এপ্রিল) চাষিদের সঙ্গে কথা বলে ওঠে আসলো চলতি মৌসুমে লিচুর দুর্যোগের এমন চিত্র। চাষিরা জানালেন, দেশী আগাম জাতের লিচুর পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ফেটে যাওয়ার গল্প।

রূপনগরের চাষি খলিলুর রহমান জানান, লিচুর রাজধানী খ্যাত ঈশ্বরদী উপজেলার আশপাশে জেলাগুলোতেও এবার লিচুর ওপর দুর্যোগ নেমে এসেছে। বর্তমানে যে আকারের লিচু বাজারে পাওয়া যাচ্ছে তার দ্বিগুণ আকার হতো অন্যান্য বছরে। ফলে ছোট আকৃতির এসব লিচু বাজারে কেউ কিনছেন না। সময়ের আগেই অপুক্ত অবস্থায় লাল হয়ে যাচ্ছে লিচুগুলো।

সেন্টু জানালেন, এই সময়ে লিচুর বাগানে মন খুলে কাজ অথবা গল্প করে সময় কাটানোর কথা। বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা লিচু নেয়ার জন্য পেছনে পেছনে ছুটে বেড়াতো। অথচ তাকেই প্লাটফর্মে হকারের মতো লিচু বিক্রি করতে হচ্ছে। এবার তার প্রায় ৫০টি গাছের লিচু একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে।

সরেজমিনে পাওয়া গেলো, গত দশদিন ধরে এভাবে লিচু পুড়ে যাওয়ার পরও কোনো ভালো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না চাষিরা। কারও কাছেই মিলছে না বিপদ কাটিয়ে ওঠার সঠিক মন্ত্র। ফলে দিন যত যাচ্ছে ততই হতাশা গ্রাস করছে তৃণমূল পর্যায়ের এসব চাষিদের।

দুপুরের কড়া রোদে ঈশ্বরদী উপজেলার দিয়ার সাহাপুর এলাকার শাওন আহমেদ ফেটে যাওয়া লিচুগুলো আলাদা করছিলেন। তিনি জানালেন, লিচুর দাম মৌসুমের শুরু আর শেষে বেশি পাওয়া যায়। অথচ বাজারে নিয়ে গেলে এসব লিচু থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন ক্রেতারা।
জানা গেলো, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে এখনো সেভাবে লিচু ওঠতে শুরু করেনি। তবে যাই ওঠেছে তার দাম চড়া। আর গত বছর মোজাফফর লিচু পাইকারি বিক্রি হয়েছে ‘শ’ প্রতি ২০০ থেকে আড়াই শত টাকা। খুচরা কিনতে হয়েছে ‘শ’ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়।

জয়নগরের লিচু চাষি আফতাব আহমেদ বলেন, গাছ থেকে সব লিচু একসঙ্গে পাড়ার পর বাজারে নিয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি নেই। আরও কিছুদিন পর লিচু পাকতে শুরু করতো। কিন্তু রোদে পুরে এখনই অপুক্ত অবস্থায় লাল হয়ে ফেটে যাচ্ছে। এভাবে চোখের সামনে লিচু নষ্ট হতে দেখে ভালো লাগছে না। তাই স্থানীয়ভাবে যতটুকু সম্ভব বিক্রি করছি।

তবে চলতি মৌসুমে লিচুর দাম একটু বেশি হতে পারে এমন শঙ্কা প্রকাশ করলেন স্থানীয় লিচু ব্যবসায়ী ও চাষিরা। তাদের দাবি, আগাম জাত হওয়ায় দেশি লিচু বেশি চাষ করেন তারা। কিন্তু এবার অর্ধেকের বেশি লিচু নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বাজারে এর প্রভাব পরবে।

বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকা এসব চাষিদের লিচুর মৌসুমটি একেবারেই খারাপ যাচ্ছে। এখন বৃষ্টি হলে আবার পরিস্থিতি কেমন হয়। এরকম নানান দু:শ্চিন্তা ভর করে সময় পার করছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৬
একে/এএনজি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।