ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঘরে উঠছে স্বপ্ন, বাড়ছে শঙ্কা

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৫ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৬
ঘরে উঠছে স্বপ্ন, বাড়ছে শঙ্কা

ফেনী: গোলায় উঠছে ধান। কৃষকের কাছে এ যেন এক একটা স্বপ্ন কণা।

তারপরও আজানা শঙ্কায় হাসি নেই কৃষকের মুখে। কোনো প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই এবারের বোরো ধান চাষে ফেনীতে বাম্পার ফলন হলেও দুশ্চিন্তা কাটছেনা কৃষকের। সরকারের মূল্য নির্ধারণ না হলেও উৎপাদন খরচ বাড়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে তাদের মধ্যে।

সোনাগাজী চর চান্দিয়া এলাকার কৃষক মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, প্রতি বিঘা বোরো ধান চাষে বীজ, সার, সেচ মজুরিসহ প্রায় ১৮ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। কিন্তু ধান বিক্রি করতে গেলে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকাও পাওয়া যায়না।

মনিরুল জানান, জমি খালি পড়ে আছে, তাই ক্ষতি স্বত্বেও চাষ করতে হয়। শুধু মনিরুল নন, একই অবস্থা জেলার অন্য কৃষকদেরও। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারের বোরো মৌসুমে জেলায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করেন কৃষকরা। এর মধ্যে ৮ জাতের হাইব্রিড, ৫ জাতের উফশী ও স্থানীয় ৫ জাতের ধান চাষ হয় ফেনীর ৬ উপজেলায়।

৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয় ব্রি-২৮ ধান। ব্রি-২৯ ধান চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৯৩৯ হেক্টর জমিতে। নতুন জাতের হাইব্রিড ধান চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৬৭৮ হেক্টর জমিতে।

সূত্র মতে, জেলার ৬ উপজেলায় হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় ১৮ জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ৭ হাজার ৪শ’ হেক্টর উফশী ও ১শ’ হেক্টরে স্থানীয় ধান আবাদ হয়েছে।

ছাগলনাইয়া উপজেলায় ৫ হাজার ৪০ হেক্টরে উফশী জাতের আবাদ হলেও এ উপজেলায় স্থানীয় জাতের কোনো ধান আবাদ হয়নি। ফুলগাজীতে ৪ হাজার ৩০ হেক্টরে উফশী ও ২০ হেক্টরে স্থানীয় ধান, পরশুরামে ৩ হাজার ৩৯০ হেক্টরে উফশী ও ১০ হেক্টর স্থানীয় ধান, দাগনভূঞায় ৩ হাজার ১৭০ হেক্টরে উফশী ও ৩৫০ হেক্টরে স্থানীয় ধান, দাগনভূঞায় ১৩ হাজার ৯৮০ হেক্টরে উফশী ও ৬ হাজার ৫৭০ হেক্টরে স্থানীয় জাতের বোরো ধান আবাদ হয়েছে।

ছাগলনাইয়া উপজেলার মহামায়া ইউনিয়নের পূর্বদেবপুর এলাকার কৃষক কবির আহম্মদ বাংলানিউজকে জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে এবার তিনি ১ একর জমিতে ব্রি-২৮ জাতের বোরো ধান আবাদ করেছেন। এতে তার প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সাড়ে ৩ মাসের মধ্যে এ ফসল ঘরে আসায় তিনি খুশি। তবে এ ধান বিক্রি করতে গিয়ে বাজারে ন্যায্যমূল্য পাবেন কিনা এ নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

ফুলগাজী উপজেলার আমজাদ হাট এলাকার আদর্শ কৃষক জমির উদ্দিন জানান, বাড়তি লাভের আশায় এবার তিনি বিনা-১০ ধান আবাদ করেছেন। কিন্তু ধানের বাজারে নিম্মমুখী প্রবণতায় তিনি হতাশায় ভুগছেন।

ছাগলনাইয়া উপজেলার দক্ষিণ সতর গ্রামের কৃষক আবদুর রশিদ বলেন, ধান বাড়িতে উঠেছে, ফলনও হয়েছে ভালো। ১৮ টাকার ওপরে প্রতি কেজি ধানের মূল্য নির্ধারণের দাবি তার।

এ বিষয়ে ফেনী জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল করিম বলেন, বড়  ক্রেতারা এখনও চাল সংগ্রহ শুরু না করায় ধান ক্রেতাদের মাঝে তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এতে করে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রি করতে পারবেন কিনা এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তাছাড়াও ফেনী বাজারের গুদামগুলো ভারতীয় চালে ভরপুর থাকায় এর প্রভাব পড়বে দেশীয় মাঠে উৎপাদিত ধানের দামের ওপর।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আশ্রাফুল আলম জানান, আগামী কিছুদিনের মধ্যেই ফেনীতে কী পরিমাণ ধান ও চাল সংগ্রহ করা হবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তখন হয়তো দামও নির্ধারিত হবে।

এ বিষয়ে ফেনী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নুরুল হক জানান, মৌসুমের শুরুতেই ধানের বাজারে নিম্মমুখী দামের প্রবণতার প্রভাব কৃষকদেরকে হতাশ করছে। কৃষকরা যদি ন্যায্যমূল্য না পান তারা চাষাবাদে আগ্রহ হারাবেন। তাই কৃষকদের যাবতীয় প্রেষণা-প্রণোদনা ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের দাবি জানান এ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৬
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।