ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

৮ মাস ধরে পাথর উৎপাদন বন্ধ মধ্যপাড়া খনিতে

উপজেলা করসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫০ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৬
৮ মাস ধরে পাথর উৎপাদন বন্ধ মধ্যপাড়া খনিতে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পার্বতীপুর (দিনাজপুর): দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া খনিতে ৮ মাস ধরে পাথর উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এতে খনির লোকসান হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা।

দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ গ্রানাইট শিলা খনিটি ২০০৭ সালের ২৫ মে উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকে এর আগে এত দীর্ঘ সময় কখনই পাথর উৎপাদন বন্ধ থাকেনি।

খনি কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা। তাছাড়া, পাথর উৎপাদন বন্ধ থাকায় ৮ মাস ধরে বেকার হয়ে পড়া প্রায় ৬০০ খনি শ্রমিক পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

এদিকে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি কয়েকদফা ঘোষণা দিয়েও কাজ শুরু করতে না পারায় খনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের মতবিরোধ আরও বাড়ছে। শিগগিরই পাথর উৎপাদনে যেতে না পারলে জিটিসি’র সঙ্গে চুক্তি বাতিলের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে খনি সূত্রে জানা গেছে।

অপরদিকে, প্রায় ৫ মাস ধরে মধ্যপাড়া খনিতে কোনো পাথর নেই। ফলে পাথর ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভারত থেকে পাথর আমদানির দিকে ঝুকে পড়েছে। শিগগিরই উৎপাদন শুরু করা না হলে ক্রেতাদের ধরে রাখা যাবে না। ফলে পরবর্তীতে উৎপাদন শুরু হলে আবারও পাথর বিক্রি নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে খনি কর্তৃপক্ষকে।

পাথর উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত প্রধান খনন যন্ত্রসহ প্রয়োজনীয় মাইনিং ইক্যুইপমেন্টের (উৎপাদন সহায়ক যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ) অভাবে ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে মধ্যপাড়া খনিতে পাথর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

জানা গেছে, খনির উৎপাদন ঠিকাদার জিটিসি ২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পুরাতন যন্ত্রপাতি দিয়ে এক শিফটে পাথর উৎপাদন শুরু করে। জিটিসি উৎপাদন শুরুর ৬ মাসের মধ্যে প্রতিদিন তিন শিফট চালু করে গড়ে পাথর উত্তোলন সাড়ে ৪ হাজার টনে উন্নীত করে।  

চুক্তি অনুযায়ী উৎপাদন সহায়ক সবধরনের মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট সরবরাহ করবে খনি কর্তৃপক্ষ। জিটিসি ২০১৪ সালের ডিসেম্বর ও ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে প্রায় ১৪৪ কোটি টাকার বিভিন্ন মালামাল ক্রয় এবং  প্রয়োজনীয় মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট বিদেশ থেকে আমদানি করার জন্য খনি কর্তৃপক্ষকে চাহিদাপত্র দেয়।

সে সময় মাইনিং ইক্যুইপমেন্টসহ অন্যান্য মালামালের বাজারমূল্য ও উৎপাদন ব্যবস্থাপনা নিয়ে জিটিসির সঙ্গে খনির কর্তৃপক্ষকের মতবিরোধ দেখা দেয়। শুরু হয় পরস্পর সন্দেহ আর অবিশ্বাস। খনির নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা মধ্যপাড়া খনি কর্তৃপক্ষ ও জিটিসি’র মধ্যে সৃষ্ট মতবিরোধ নিরসনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নিয়ে বার বার খনির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পরিবর্তন করে পরিস্থিতি আরও জঠিল করে তুলেছে। গত বছরের আগস্ট মাসে খনির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী আবুল বাসারকে অপসারণ করে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির এমডি আমিনুজ্জামানকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে মধ্যপাড়া খনির এমডি’র দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর সাত মাসের মাথায় গত এপ্রিলে নওশাদ ইসলামকে নতুন এমডি দায়িত্ব দেওয়া হয়।  

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি’র জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জাবেদ সিদ্দিকী বাংলানিউজকে জানান, মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট  বিদেশ থেকে আমদানি করার জন্য বার বার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও খনি কর্তৃপক্ষ ৯ মাস দেরিতে এলসি খুলে দেয়। সঙ্গত কারণেই ওই সময় টুকু তাদের দিতে হবে। তাদের পরিকল্পনা সঠিক এবং আর্থিক অস্বচ্ছলতাও নেই। খনি কর্তৃপক্ষ তাদের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (জিএম-প্রশাসন ও বিপনন) নেয়াজুর রহমান রোববার (২২ মে) দুপুরে বাংলানিউজকে জানান, খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নওশাদ ইসলাম শিগগিরই পাথর উৎপাদন শুরু করার জন্য জিটিসিকে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জুন মাসে স্টোপ উন্নয়ন কাজ শুরু করবে বলে জিটিসি খনি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। কিন্তু তাদের কথায় ভরসা পাওয়া যায় না। জানুয়ারি থেকে এভাবে কয়েকদফা নির্দিষ্ট দিন তারিখ দিয়েও তারা কাজ শুরু করতে পারেনি।

খনির মহাব্যবস্থাপক (জিএম-অপারেশন) মীর আব্দুল হান্নান বাংলানিউজকে জানান, ৩৬টি এলসির মধ্যে ২টি এলসির যন্ত্রপাতি খনিতে এসে পৌঁছেছে এবং ৭টি এলসির যন্ত্রপাতি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে রয়েছে। ৫টি এলসির যন্ত্রপাতি দেশে আসার পথে রয়েছে এবং ৩টি এলসির যন্ত্রপাতি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন শেষ করা হয়েছে। বাকী ১৯টি এলসির যন্ত্রপাতির কী অবস্থা তারা তা জানেন না। সেপ্টেম্বর থেকে একশিফটে পাথর উৎপাদন শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
 
মধ্যপাড়া খনির উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষন ও পরিচালন ঠিকাদার হিসেবে বেলারুশের জেএসসি ট্রেস্ট  সকটোসট্রয় ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া করপোরেশন লিমিটেড নিয়ে গঠিত জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামের (জিটিসি) সঙ্গে ২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।  

চুক্তি অনুযায়ী জিটিসি ১৭১.৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ৬ বছরে ৯২ লাখ (৯.২ মিলিয়ন টন) টন পাথর উত্তোলন করে দিবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেয় এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি পুরাতন যন্ত্রপাতি দিয়ে এক শিফটে পাথর উৎপাদন শুরু করে। জিটিসি এ পর্যন্ত উত্তোলন করেছে ১১ লাখ ৯২ হাজার টন পাথর।

দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় অবস্থিত মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল) নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে ২০০৭ সালের ২৫ মে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায়। তখন থেকেই খনিটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৬
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।