ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ফ্লাই দুবাই’র গাড়ি আমদানি

শুল্ক অব্যাহতির আদেশ বাতিল চায় এনবিআর

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২২ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৬
শুল্ক অব্যাহতির আদেশ বাতিল চায় এনবিআর

ঢাকা: ব্যবহারের জন্য চারটি বিলাসবহুল গাড়ি শুল্কমুক্তভাবে আমদাননি করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইভিত্তিক এয়ারলাইন্স কোম্পানি ‘ফ্লাই দুবাই’ ঢাকা অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা।

সুকৌশলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ায়, শুল্কমুক্ত কোটায় আমদানি করা গাড়ির শুল্ক অব্যহতির আদেশ বাতিল করে শুল্ক আরোপের দাবি জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো শুল্ক অব্যহতির আদেশ বাতিল চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের লেখা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্লাই দুবাই মিথ্যা তথ্য দিয়ে গাড়ি আমদানি করে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অপরাধ করেছে।

ফ্লাই দুবাইকে যে চুক্তির আওতায় শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে সেই তালিকায় এই চারটি গাড়ি নেই। এক্ষেত্রে এনবিআরের প্রজ্ঞাপন (এসআরও) জারির ক্ষেত্রেও বিষয়টি আড়াল করা হয়েছে। বিষয়টি নজরে আসার পরে শুল্ক অব্যাহতির এসআরও বাতিল করেছে এনবিআর।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অসত্য তথ্যে কাস্টমস অপরাধ বিচারের জন্য কাস্টমস অ্যাক্ট-১৯৬৯ অনুসারে কমিশনারের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের অনিয়মের ক্ষেত্রে এনবিআর অফিস ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত।

এজন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে অন্যান্য এয়ার লাইন্সের ক্ষেত্রে এ ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফ্লাই দুবাই কর্তৃপক্ষ ঢাকা অফিস বাড়ি নম্বর-১০, রোড নম্বর-৫৩, ইউএনটিসি-৪, গুলশান-২ এর অনুকূলে শুল্কমুক্ত কোটায় চার দরজার সেডান কার না এনে তারা চারটি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করে।

২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে এই চারটি বিলাসবহুল গাড়ি ছাড় করানো হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর ছাড় করানো হয়েছে রোলস রয়েস-৬৬০০, মডেল- ২০১৫। এর আগে ফ্লাই দুবাই কর্তৃপক্ষ আরও তিনটি বিলাসবহুল গাড়ি ছাড় করায়।

এর মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড রোলস রয়েস। সব ধরনের শুল্ক করাদি বাদ দিয়ে বিলাসবহুল এ গাড়িটির মূল্য প্রায় তিন লাখ ইউএস ডলার বা দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা।

একইভাবে ফ্লাই দুবাই কর্তৃপক্ষ জার্মানির বিখ্যাত পোরশে এজি কোম্পানির যে গাড়িটি বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে তার সব ধরনের শুল্ক করাদি বাদ দিয়ে সর্বনিম্ন মূল্য ৪৫ হাজার মার্কিন ডলার। রেঞ্জ রোভার স্পোর্টস এসই জিপ গাড়িটি আনা হয়েছে যুক্তরাজ্য থেকে।

যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত মোটর কোম্পানি রেঞ্জ রোভারের তৈরি এই রেঞ্জ রোভার জিপটির মূল্য ৫৮ হাজার ৯শ ৮৫ ডলার। আর শুল্কসহ বাংলাদেশে এর মূল্য দাঁড়ায় প্রায় তিন কোটি টাকা।

যুক্তরাজ্যের রোভার মোটর কোম্পানির ল্যান্ড রোভার ডিসকোভারি ফোর এস মডেলের এই গাড়িটি ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে ছাড় করে ফ্লাই দুবাই কর্তৃপক্ষ। সব ধরনের শুল্ক করাদি বাদ দিয়ে এই গাড়িটির মূল্য ৫৫ হাজার পাউন্ড। আর শুল্ক যুক্ত করলে গাড়িটির মূল্য দাঁড়ায় প্রায় তিন কোটি টাকা।

এই গাড়ি চারটি আমদানির পর ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে ফ্লাই দুবাই ঢাকা অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা। বিনিময়ে হাতি নিয়েছে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার বিপুল পরিমাণ অর্থ।

বাংলাদেশ সময়: ০১১২ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৬
এসই/এসএনএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।