ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

শখের বশে মার্সিডিজে ভুল স্টিকার, অতঃপর ‘সরি’ (ভিডিওসহ)

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১১ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৬
শখের বশে মার্সিডিজে ভুল স্টিকার, অতঃপর ‘সরি’ (ভিডিওসহ)

ঢাকা: বিলাসবহুল মার্সিডিজ বেঞ্জ ই-২০০ মডেলের। মালিকের ছোট ভাই শখের বশে স্টিকার লাগিয়েছেন ই-৫০০ মডেলের।

চেকের পর ধরা পড়ল বিষয়টি। অতঃপর দুইপক্ষই বললেন, ‘সরি’!
 
এমন ঘটনাই ঘটেছে সিলেট নগরীতে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সম্প্রতি সারাদেশে কার্নেট ও শুল্কমুক্ত সুবিধার গাড়ি জব্দ করা শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে সিলেট শহরের একজন তরুণ ব্যবসায়ীর ই-৫০০ মডেলের মার্সিডিজ বেঞ্জকে নজরদারি শুরু করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। নেওয়া শুরু করেন কারটির সব তথ্য।
 
বিআরটিএ ও কাস্টমস থেকে শুল্ক গোয়েন্দাদের পাওয়া তথ্য আর গাড়ির মডেলের তথ্যে পাওয়া যায় ব্যাপক গরমিল। অত:পর ডেকে পাঠানো হয় গাড়ির মালিককে।
 
মালিক বেচারা খুবই ভদ্র (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক), বেশ কিছুদিন হয় বিদেশ থেকে পাস করে শুরু করেছেন পেট্রোল পাম্প ব্যবসা। কাজ করছেন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে।
 
রোববার (২৯ মে) শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ে সম্মানের সঙ্গে ডেকে পাঠানো হয় তরুণ ওই ব্যবসায়ীকে।
 
শুল্ক গোয়েন্দার ডাকে সব কাগজপত্র নিয়ে হাজির হলেন ব্যবসায়ী। শুল্ক গোয়েন্দারা দেখলেন, বিআরটিএ ও কাস্টমস থেকে পাওয়া তথ্য আর ব্যবসায়ীর কাগজের সঙ্গে বেশ গরমিল।
 
পড়লেন বিড়ম্বনায়! বিলাসবহুল গাড়ির গায়ে লেখা মার্সিডিজ বেঞ্জ ই-৫০০ মডেলের স্টিকার লাগানো। ই-৫০০ মডেল হলে সিসি ৫ হাজার, শুল্ক ৮৪১ শতাংশ।
 
শুল্কসহ গাড়িটির মূল্য হবে প্রায় তিন কোটি টাকা। কিন্তু বিআরটিএ ও কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, গাড়িটি আমদানি করেছে রেনকম মটরস নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
 
গোলকধাঁধা কাটাতে ডিটেইল পরীক্ষায় দেখা গেল, গাড়িটি ই-২০০, ২ হাজার সিসির ও ২০০৬ মডেলের। যার মূল্য শুল্কসহ ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা।
 
সন্দেহ আর রহস্য ঘণীভূত হতে থাকে গোয়েন্দাদের চোখে। শেষমেষ জিজ্ঞাসা করা হল সেই তরুণ ব্যবসায়ীকে। গাড়ির মালিক ভদ্রলোক নিজেও থ’ হয়ে গেলেন!
 
শেষে ব্যবসায়ী হিসাব মিলিয়ে বললেন,‘ মাত্র আট মাস আগে গাড়ি তিনি কিনেছেন। এর আগে দু’হাত বদল হয়ে তার কাছে এসেছে। কাগজপত্রে কোনো সমস্যা নেই’।
 
শুনে গোয়েন্দাদের চোখ কপালে। আবার বললেন, ‘গাড়িটি আমি বেশি ব্যবহার করি না, ছোট ভাই করেন। বিআরটিএ ও কাস্টমস রেকর্ড, গাড়ির ভেতরের ইঞ্জিন, চেসিস সব তো ঠিক আছে’।
 
ব্যবসায়ী গোয়েন্দাদের প্রশ্ন করলেন, ‘বিপত্তি কোথায়?’। গোয়েন্দারা জানালেন, ‘ভেতরের ইঞ্জিন, চেসিস নম্বর অনুযায়ী বাইরের মডেল তো ই-২০০ হবার কথা। কিন্তু ই-৫০০ কেন?’

ব্যবসায়ীর তো মাথায় হাত। জানালেন আদরের ছোট ভাইয়ের কাণ্ড। বললেন, ‘ছোট ভাই ব্যবহার করেন। বন্ধুদের কাছে ই-২০০ মডেল নাকি ওল্ড মডেল। ই-৫০০ লেটেস্ট মডেল। তাই স্টিকার ই-২০০ মডেলের জায়গায় লাগালেন ই-৫০০ মডেল। ’
 
আরো জানালেন, ‘ই-৫০০ মডেল সাম্প্রতিক (২০১২-১৩ সালের) ও উচ্চ সিসির। বন্ধুদের দৃষ্টি কাড়তে কেবল শখের বশবর্তী হয়ে ছোট ভাইয়ের এমন কাণ্ড’।
 
শেষে ব্যবসায়ীর এক উত্তর- ‘সরি’। শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও সরল স্বীকারোক্তি, একডাকে সহযোগিতা আর শখকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বললেন, ‘সরি’।
 
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বাংলানিউজকে এমন তথ্য জানিয়েছেন।
 
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর কার্নেট ও শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার করা প্রায় তিনশ’ গাড়ি নজরদারিতে রেখেছে। বেশ কিছু বিলাসবহুল গাড়ি জব্দও করেছে। সিলেট অফিসও কয়েকটি গাড়ি জব্দ করেছে।
 


বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৬
আরইউ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।