ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কোটি টাকার ল্যান্ড রোভার

রেজিস্ট্রেশন ডেসার, গাড়ি কার্নেট সুবিধার!

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৩ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৬
রেজিস্ট্রেশন ডেসার, গাড়ি কার্নেট সুবিধার!

ঢাকা: প্রকল্প ২৩ বছর আগের। গাড়ি নিলামে বিক্রি হয়ে গেছে ১৯৯২ সালে।

সেই প্রকল্পের গাড়ির রেজিস্ট্রেশন জালিয়াতি করে বিলাসবহুল ল্যান্ড রোভার চলছে রাস্তায়!

 

শুল্কসহ প্রায় দেড় কোটি টাকার গাড়িটি কার্নেট সুবিধায় আমদানি করা। কিন্তু জালিয়াতি করা সেই রেজিস্ট্রেশন ব্যবহার করে গাড়িটির মালিকানা বদল হয়েছে অন্তত চারবার।
 
গাড়ির সঙ্গে রেজিস্ট্রেশনও অবৈধ। নিলামে ওঠা সেই প্রকল্পের গাড়ির রেজিস্ট্রেশন কিভাবে এ ২৩ বছর পর ব্যবহার করা হলো- বিষয়টি শুনে চোখ কপালে ওঠার মতো!
 
মঙ্গলবার (৩১ মে) কার্নেট সুবিধার অপব্যবহার ও ভুয়া রেজিস্ট্রেশনের এমনই একটি বিলাসবহুল ল্যাভ রোভার গাড়ি জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।
 
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বাংলানিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
 
সম্প্রতি সারাদেশে শুল্কমুক্ত কার্নেট সুবিধার অপব্যবহার করা গাড়ির জব্দের কাজ শুরু করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। বেশ কিছুদিন আগে থেকে গাড়িটিকে নজরদারিতে রাখা হয়।
 
কিন্তু গাড়িটি স্থান বদলাতে থাকে। সর্বশেষ সোমবার (৩০ মে) গোয়েন্দারা সন্ধান পান, গাড়িটি রাজধানীর উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের মাইলস্টোন স্কুলের সামনে পার্কিং অবস্থায় রয়েছে।
 
কাস্টমস ও বিআরটিএ’র তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় গোয়েন্দাদের মধ্যে। বিআরটিএ’র সব তথ্য নেওয়া শেষ। সর্বশেষ হানা ডেসার অফিসে। তাদের তথ্য দেখে তো মাথায় হাত।
 
ডেসার তথ্যানুযায়ী, ডেসার ‘বৃহৎ ঢাকা বিদ্যুৎ প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্পের ১৪টি গাড়ি ছিল। তাও ১৯৯০ মডেলের সাদা রঙের ৩ ডোরের (দরজার)।
 
কিন্তু জব্দ করা গাড়িটি বিলাসবহুল ল্যান্ড রোভার। তাও ৫ ডোরের (দরজার)। প্রকল্পের গাড়িগুলো এতো দামি না হলেও ল্যান্ড রোভারের মূল্য শুল্কসহ প্রায় দেড় কোটি টাকা।
 
আরো জানা যায়, ডেসার প্রকল্প শেষে ১৯৯২ সালে ১৪টি গাড়ি নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়। জালিয়াতির শুরুও তখন থেকেই।
 
জালিয়াতির ধরন বলছে, ল্যান্ড রোভারে ব্যবহার করা রেজিস্ট্রেশন নম্বরপ্লেট ঢাকা মেট্টো ঘ ০২-২০৩২ ডেসার সেই প্রকল্পে ব্যবহার করা একটি রেজিস্ট্রেশন।
 
বিআরটিএ’র তথ্যানুযায়ী, সর্বশেষ ল্যান্ড রোভারটি ২০১৫ সালের তাকওয়া অটো ওয়ার্ক থেকে কিনেছেন বাংলাদেশ বিমানের এয়ারবাসের একজন ক্যাপ্টেন।
 
এর আগে একই রেজিস্ট্রেশনে কিনে কাজী নাইমুল ইসলাম ও নাভিল অটোসের মালিক নুরুল ইসলাম গাড়িটি ব্যবহার করেছেন।
 
ক্যাপ্টেনের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন জালিয়াতির গাড়িটি সর্বশেষ আসে গাজীপুরের ব্যবসায়ী কামরুজ্জামানের কাছে। জালিয়াতি ঢাকতে মুছে ফেলা হয়েছে চেসিস ও ইঞ্জিন নম্বর।
 
মূলত কার্নেট সুবিধার অপব্যবহার ঢাকতে এসব মুছে ফেলা হয়েছে। ২০০৩ সালের মডেলের ল্যান্ড রোভারটি গত ৩ মাস আগে কিনে নিয়েছেন কামরুজ্জামান।
 
প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, গাড়ি নিলামে বিক্রি হয়েছে প্রায় ২৩ বছর, অস্বতিত্বহীন রেজিস্ট্রেশন কিভাবে ব্যবহৃত হয়েছে?- প্রশ্ন ড. মইনুল খানের।
 
তিনি বলেন, ‘শুল্ক ফাঁকির উদ্দেশ্যে কাগজপত্রে সরকারি প্রকল্পের নম্বরপ্লেট ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা প্রকৃত ঘটনা অনুসন্ধান করে বের করার চেষ্টা করছি’।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৬
আরইউ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।