ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘বাজেটে কোনোই ফলপ্রসু সমাধান পায়নি রিহ্যাব’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৮ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৬
‘বাজেটে কোনোই ফলপ্রসু সমাধান পায়নি রিহ্যাব’ ছবি: পিয়াস- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘সিঙ্গেল ডিজিটের সুদে হাউজিং লোনের জন্য যেকোনো পরিমাণের একটি তহবিল গঠন, রেজিস্ট্রেশন ব্যয় হ্রাস, আয়কর কমানোসহ বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করেও কোনো ফলপ্রসু সমাধান পাইনি’ উল্লেখ করে বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন।

রোববার (১২ জুন) দুপুরে নগরীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘রিহ্যাবের মতামত: প্রস্তাবিত বাজেট ২০১৬-১৬’ বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, ‘রিহ্যাবের বাজেট প্রস্তাবনায় আমরা সরকারের পক্ষ থেকে একটি তহবিল গঠনের ওপর সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছিলাম। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের জন্য আবাসন সমস্যা নিরসনে সিঙ্গেল ডিজিটের সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে বলেছিলাম। আবাসন খাতে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আমরা ‘হাউজিং লোন’ নামে একটি রি-ফিন্যান্সিং তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছিলাম, যা পূরণ হয়নি। ’

‘ঘোষিত বাজেটে তহবিল গঠনের কোনো আশা প্রতিফলিত হয়নি’।

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকঋণের সুদ কমলেও তা যেকোনো সময় বাড়তে পারে বলে ক্রেতারা সে ঋণ তেমন নিচ্ছেন না। ব্যাংকগুলোও তা সহজে দিচ্ছে না। সরকারের বরাদ্দ করা আবাসন লোন হলে সেক্ষেত্রে সুদ স্থিতিশীল থাকে’।

রিহ্যাব সভাপতি বলেন, ঢাকার আশেপাশে ১২৫০ বর্গফুট বা তার চেয়ে বেশি আয়তনের ফ্ল্যাট কেনার জন্য ৭ থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হলেও আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়াবে।   এ দাবিও মানা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত জমি রেজিস্ট্রেশন। তবে রেজিস্ট্রেশন খরচ ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ হওয়ার কারণে সারা দেশে জমি বেচা-কেনা ৮০ শতাংশ কমেছে।   এজন্য রেজিস্ট্রেশন খরচ ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছি। কিন্তু আমাদের দাবি বিবেচনা করা হয়নি’।

এ বাজেট ঘোষণায় আবাসন খাতে প্রস্তাবিত আয়করের পরিমাণ পরিবর্তনের ফলে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের মৌলিক অধিকার বাসস্থানের জন্য ব্যয় বেড়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ঘোষিত বাজেট লজ্জার
আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন। অনেকেই বাজেটকে উচ্চভিলাষী বলছেন। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের উন্নয়নে এমন বাজেটই কাম্য। তবে আবাসন খাতের জন্য এই বাজেট লজ্জার। আমাদের একটি দাবিও বাজেটে রাখা হয়নি। তাই বাজেট ঘোষণার আগ মুহুর্তে এনবিআরের সঙ্গে যে সংলাপ হয়, তাতে রিহ্যাবের অংশ নেওয়া নিয়ে সংশয় আছে। আমরা খাটা খাটনি করে প্রস্তাব দিলাম, অথচ একটিও রাখা হয়নি’।

২০ হাজার কোটি টাকা পুনর্বিবেচনার দাবি
স্বল্প আয়ের মানুষকে ফ্ল্যাট দিতে বাজেটে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানিয়ে রিহ্যাব সভাপতি  বলেন, সরকার মৌলিক চাহিদা খাদ্যে যেমন স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, আবাসন খাতেও সমস্যা নিরসন করা তেমনি জরুরি। বার বার দাবি জানিয়েও বাজেটে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়নি। এটা যেন বাজেটে রাখা হয়।

ফ্ল্যাট কিনতে ৬৯ হাজার কোটি টাকা পাচার
মালয়েশিয়া, দুবাই, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে ফ্ল্যাট কিনতে ৬৯ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন রিহ্যাব সভাপতি। তিনি বলেন, ‘অল্প টাকায় ফ্ল্যাট পেলে ও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকলে ৬৯ হাজার কোটি টাকা আমাদের দেশের আবাসন খাতে খরচ হতো’।

রিহ্যাবের ৭ দফা
আবাসন খাতের নানা সমস্যা নিরসনে সংবাদ সম্মেলনে ৭ দফা দাবি জানায় রিহ্যাব। জরুরি ভিত্তিতে ওই ৭ দফা পূরণের আবেদন জানান রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন।

দাবিগুলো হচ্ছে- আবাসন শিল্পের ক্রান্তিকাল উত্তরণের জন্য স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা নিতে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা এবং স্টিম্যুলাস প্যাকেজ দেওয়া, শহর এলাকায় ৫ বছর এবং শহরের বাইরে ১০ বছরের জন্য ‘ট্যাক্স হলিডে’ প্রচলন, নগদ ও খুচরা পণ্য ক্রয়ে ভ্যাট ও উৎসে কর বন্ধ, এ খাতে শিল্পঋণ দেওয়া, নির্মাণ প্রকল্পে ইউটিলিটি বিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেটে নির্ধারণ, সিঙ্গেল ডিজিট সুদে রি-ফাইন্যান্সিং পুন:প্রচলন, রেজিস্ট্রেশন ব্যয় ৪ শতাংশ করে কমানো, কালো টাকা সৃষ্টির প্রবণতা কমানো এবং সেকেন্ডারি মার্কেটের রেজিস্ট্রেশন ব্যয় ১ শতাংশ ও ২ শতাংশ করে মানি ফ্লো বাড়ানো।

গৃহায়ন শিল্পের মারাত্মক ও অপূরণীয় ক্ষতি হবে
রিহ্যাব সভাপতি বলেন, ‘আমাদের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের একান্ত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা এ খাত সম্প্রতি নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। উদীয়মান এই খাতে নানা কর আরোপ ও সরকারের নীতি সহায়তার অভাবে ক্রমে দেশের আবাসন খাত মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ছে। মানুষের সামর্থে্যর মধ্যে মাসিক কিস্তি সুবিধা দেওয়ার মতো এই খাতে পর্যাপ্ত আর্থিক ঋণ প্রবাহ না থাকায় অনেকের বাসস্থানের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না’।

‘এখন প্রায় ২২ হাজার ক্রেতা, ২ হাজার জমির মালিক এবং রিহ্যাব সদস্য ও সদস্য নয় এমন ২ হাজার ৫০০ ডেভেলপার মহাসংকটে পড়েছেন। তৈরি ফ্ল্যাট বিক্রি না হওয়ায় সকল সদস্যের নিজস্ব পুঁজি ও ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ আটকে গেছে বলে সেই সকল কোম্পানির বিক্রিত ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকঋণের সুদ বেড়ে কোম্পানিগুলো দিন দিন ভয়ানক সংকটে পড়ছে। এ অবস্থায় সরকারের আশু পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ সংকট উত্তরণ অসম্ভব’।

তিনি বলেন, ‘সমগ্র গৃহায়ন খাতের বিক্রয় পরিমাণ প্রায় ৮০ শতাংশ কমছে। একই সঙ্গে উদ্যোক্তাদের নতুন প্রকল্প গ্রহণের হার ৯০ শতাংশ কমছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক ও অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে এ খাতে প্রচণ্ড পরিমাণ তারল্য সংকটসহ মূলধন ব্যয় জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কর্মসংস্থানের বড় খাত হওয়া সত্ত্বেও গত তিন বছর কোম্পানিগুলো কেবল লোকবল ছাঁটাই করছে’।

‘পর্যটন এলাকাগুলোতে নির্মাণাধীন প্রায় সব প্রকল্প বন্ধ হয়ে আছে। অথচ পর্যটন এলাকায় একটি বিশাল বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল যা ২০১৩ সালের রাজনৈতিক গোলযোগের পর বন্ধ হয়ে যায়। সে পরিস্থিতি আর বদলায়নি। সেজন্যই রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিনিয়োগে সমস্যা হওয়ায় সরকারের অতিরিক্ত সহায়তা জরুরি ছিল। কিন্তু সরকার কোনো বাজেটেই বা কোনোভাবেই সে সুবিধা দেয়নি। বরং প্রতিটি বাজেটের পর ব্যয় বেড়েছে। উচ্চ রেজিস্ট্রেশন ব্যয়ের ফলে ক্রেতারা রেজিস্ট্রেশনে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তাই সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাচ্ছে’।

‘এই মুহূর্তে যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তবে এ দেশের গৃহায়ন শিল্পের মারাত্মক ও অপূরণীয় ক্ষতি হবে। প্রকারান্তরে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। সরকারের প্রবৃদ্ধির টার্গেট অর্জনও ঝুঁকিতে পড়বে’- বলেন আলমগীর শামসুল আলামিন।

মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের ব্যয় বেড়ে যাবে
রিহ্যাব সভাপতি আরও বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে শ্রেণী-৩ এ আবাসিকে ৬০০ টাকার পরিবর্তে করা হয়েছে এক হাজার টাকা। যেখানে আমাদের দাবি ছিল, ৩০০ টাকা। ফলে খুব সহজেই মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের ব্যয় বেড়ে যাবে।   ফলশ্রুতিতে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ২ কোটি মানুষের আয়ের এ খাতটি আরো মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। আর আবাসন খাতের এই সংকট ২৬৯টি লিংকেজ শিল্পকে আরো সংকটে ফেলবে’।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রিহ্যাবের সিনিয়র সহ সভাপতি নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন, সহ সভাপতি লিয়াকত আলী ভূ‍ঁইয়া, আহকাম উল্লাহ, প্রকৌশলী সরদার মোহাম্মদ আমিন, প্রকৌশলী মোহাম্মদ সোহেল রানা প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৫
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।