ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাজেটে বাড়তি উৎসে কর-ভ্যাট মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা

বিশেষ সংবাদদাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৬ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৬
বাজেটে বাড়তি উৎসে কর-ভ্যাট মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা

ঢাকা: বাইরে ক্রেতার চাপ দর কমাও, ঘরে সরকার বলে কর বাড়াও এই দুই দিকের চাপে পড়ে দেশের ক্ষুদ্র-মাঝারি-বৃহৎ সকল রপ্তানিকারকের ত্রাহি দশা হয়েছে। এ অবস্থায় ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেটে উৎসে কর ও মূল্য সংযোজন করা (মুসক) বেড়ে যাওয়ার ঘোষণাকে মরার ওপর খাড়ার ঘা বলে আখ্যা দিয়েছেন অনেক রপ্তানিকারক।

বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন মাঝারি মানের রপ্তানিকারকের যারা ছোট কারখানার মালিক ও সুনির্দিষ্ট কিছু তৈরি পোশাক পণ্য উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করছেন। এছাড়াও রয়েছেন ঠিকাদার, সাপ্লায়ার।

পুঁজি বেশি না থাকলেও গুনে মানে উন্নত পণ্য উৎপাদনে তাদের খ্যাতিও রয়েছে। কিন্তু এবারের বাজেট তাদের জন্য এমন বার্তা নিয়ে এসেছে যে অনেকেই এখন ব্যবসা ছেড়ে দিতে চাইছেন। কেউ কেউ মনে করছেন এভাবে চলতে থাকলে দেশে বিনিয়োগ না করে বিদেশে গিয়ে ব্যবসা করবেন।

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক খালিদ হোসেন বলছিলেন, আমাদের মতো মাঝারি মানের ব্যবসায়ীদের এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে নামতে হবে। তিনি জানালেন, রপ্তানিকারকদের জন্য উৎসে কর এই বাজেটে এক ধাক্কায় ০.৯ শতাংশ বাড়িয়ে ১.৫ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়াও ভ্যাট বেড়ে গেছে ৫ শতাংশ। ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। ওদিকে ক্রেতারা উপর্যুপরি চাপ দিয়ে যাচ্ছেন পণ্যের দাম কমানোর জন্য। কেবল চাপই নয়, তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে দর কমিয়ে দিচ্ছেন ফলে ঘরে-বাইরে দুই দিকের চাপে পড়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনামের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো এই সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের অনেক আন্তর্জাতিক ব্যবসা দখল করে নেবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই ব্যবসায়ী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, এবারের বাজেট হোম টেক্সটাইলে বাংলাদেশের শিল্পে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হবে। আগে থেকেই জিএসপি সুবিধা বঞ্চিত হয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে এই খাত প্রতিযোগিতায় পর্যুদস্ত হয়ে ছিলো। ফলে অনেকটা জিরো মার্জিনে কিংবা সামান্য মুনাফায় এতদিন টিকে ছিলো এই বাণিজ্য। এ অবস্থায় নতুন করে করারোপ করা হলে তা হবে মরার ওপর খাড়ার ঘা।

পোশাক শিল্পের অ্যাকসেসরিজ উৎপাদনকারী একজন ব্যবসায়ী জানালেন, মাত্র দুই বছর আগেও যে একেকটি লেবেল তিনি ২ টাকা ১০ পয়সায় বিক্রি করতেন তার দাম কমিয়ে বায়াররা এখন কিনছেন মাত্র ৯০ পয়সায়। অথচ ঢাকায় এর উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে বেড়েছে।

এর বাইরে ছোট ও মাঝারি মানের ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে ব্যবসায় লগ্নি করেন। ব্যাংকের সুদের হার সবচেয়ে চড়া। যা ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ বলেই জানালেন তিনি। এ অবস্থায় অনেক ক্ষেত্রেই ক্রেতারা পেমেন্ট দিতে দেরি করেন যা চার থেকে ছয় মাস পর্যন্ত প্রলম্বিত হয়। এতে গুনতে হয় বাড়তি ব্যাংক সুদ।

এ অবস্থায় কর ও ভ্যাটের বাড়তি চাপ এলে এই ব্যবসা তাকে গুটিয়ে ফেলতে হবে। ‘আমাদের এখন টিকে থাকাই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে’ বলেন এই ব্যবসায়ী।
টিকে থাকার বিকল্প পথ খুঁজছেন তার মতো অনেক ব্যবসায়ীই, জানালেন তিনি।

একই ধরনের কথা বলেন ঠিকাদার ব্যবসায়ী নাজমুল আহসান। তিনি জানালেন চলতি বাজেটে তাদের ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে ১৫ শতাংশ। যা আগে ছিলো ১১ শতাংশ। মাঝারি মানের এই ঠিকাদার বলেন, তাদের ব্যবসায় প্রতিযোগিতা রয়েছে। ফলে মুনাফার হার ৬ থেকে ৭ শতাংশের বেশি রাখলে কাজটিই পাওয়া যায় না। এ অবস্থায় নতুন ভ্যাটের চাপে এই ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে। আর ঠিকাদারদের ওপর এভাবে চাপ সৃষ্টি হলে কাজের মান পড়ে যাবে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই ব্যবসায়ী।

বিকল্প হিসেবে বিদেশে গিয়ে অর্থ লগ্নি করার কথা ভাবছেন অনেক ব্যবসায়ী। তারা বলছেন যে কর বাংলাদেশে ১৫ শতাংশ করা হলো তা মালয়েশিয়ায় মাত্র ৩ শতাংশ। এছাড়া অন্যান্য হয়রাণিও নেই। ফলে দেশে বিনিয়োগের চেয়ে বাইরে বিনিয়োগকেই তারা বেশি সহজ ও সুবিধাজনক দেখছেন।

একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, একদিকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিয়ে দেশে বিনিয়োগ করার জন্য ডাকা হচ্ছে অন্যদিকে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের ওপর নানা ধরনের করের বোঝা চাপিয়ে তাদের বিনিয়োগ বন্ধ করতে বাধ্য করে তুলছে সরকার। বিষয়টিকে তারা সরকারের দ্বৈতনীতি হিসেবে দেখছেন।

বাংলাদেশ সময় ১১২২ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৬
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।