ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

থাকবে না মাটির রাস্তা, বসছে ‘ইট-বালি’

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৪ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৬
থাকবে না মাটির রাস্তা, বসছে ‘ইট-বালি’

ঢাকা: দেশের আনাচে-কানাচে এখনও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে প্রায় ২ লাখ ৯৫ হাজার কিলোমিটার মাটির রাস্তা। বর্ষা মৌসুমে গ্রামীণ মাটির রাস্তাগুলো কর্দমাক্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে ও রাস্তার উপরিভাগ ক্ষয় হয়ে যায়।

ফলে প্রতি বছর ক্ষয়ে যাওয়া ও নষ্ট হয়ে যাওয়া রাস্তাগুলো মেরামতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়। যা দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
 
গ্রামীণ মাটির রাস্তা রক্ষা ও টেকসই করার লক্ষ্যে হেরিংবোন বন্ড (এইচবিবি) পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে। এ পদ্ধতিতে মাটির সড়কের ওপরে বালি ও পাকা ইট বিছানো হবে। রাস্তা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বিদ্যমান মাটির রাস্তার ওপরই এইচবিবি করা হবে।

‘গ্রামীণ মাটির রাস্তাসমূহ টেকসইকরণের লক্ষ্যে হেরিংবোন বন্ড (এইচবিবি) করণ’ প্রকল্পের আওতায় দেশের যেখানেই মাটির রাস্তা, সেখানেই ইট ও বালি বিছানো হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গ্রামীণ এলাকায় কোনো মাটির সড়কই আর থাকবে না।  

এইচবিবি করতে এক ঘনমিটার ইটের গাঁথুনির কাজে প্রচলিত ইটের প্রয়োজন ৪১০টি, এক ঘনফুট ইটের গাঁথুনির কাজে প্রচলিত ইটের প্রয়োজন ১২টি। অন্যদিকে এক ঘনমমিটার ইটের গাঁথুনির কাজে মট্রেকি ইটের প্রয়োজন ৫০০টি এবং এক ঘনফুট ইটের গাঁথুনির কাজে মট্রেকি ইটের প্রয়োজন ১৪ দশমিক ২৮টি। এছাড়া প্রতি বর্গমিটার জায়গায় একস্তর ইটের ফ্ল্যাট সেলিংয়ের জন্য ইটের প্রয়োজন ৩১টি। এর সঙ্গে পর্যাপ্ত বালি ও পানি প্রয়োজন। তবে তা নির্ভর করে মাটির রাস্তার সড়কের ওপর।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কর্মবণ্টনে রাস্তা নির্মাণের বিষয়টি উল্লেখ না থাকলেও ১৯৭৫ সাল থেকে গ্রামীণ এলাকায় মাটির রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব রাস্তা এ মন্ত্রণালয় সংরক্ষণ করে আসছে। বর্ষা মৌসুমে মাটির রাস্তা কর্দমাক্ত হয় এবং নষ্ট হয়ে যায়। তাই রাস্তার আয়ুষ্কাল বাড়ানো এবং রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় কমানোর জন্য প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে।
 
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় এ অর্থ খরচ করা হবে। চলতি সময় থেকে ২০১৮ সালের মধ্যেই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক  মো. রিয়াজ আহমেদ বলেন, অন্য কোনো প্রকল্পের স্কিমের সঙ্গে এ প্রকল্পের স্কিমের দ্বৈততা পরিহার করে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। উপজেলা থেকে প্রতিটি প্রকল্পের বিপরীতে প্রত্যয়নপত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে স্কিমগুলো নির্বাচন করা হবে। উপজেলা প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের উপজেলা প্রকৌশলীও অন্তর্ভুক্ত থাকেন। কাজেই স্কিমের ওভারল্যাপিং হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মাটির রাস্তা এইচবিবি করার সময় বিভিন্ন দিক খেয়াল রাখা হবে’।
 
‘জনগণের সুবিধার কথা চিন্তা করে লোকাল লেভেল মনিটরিং নিশ্চিত করতে স্ব স্ব এলাকার জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হবে। প্রকল্পে বিভিন্ন ধরনের জনবল নিয়োগের জন্য ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। দেশব্যাপী প্রকল্পের কাজ তদারকির জন্য ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি জিপ কেনা হবে’।

২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ প্রকল্পের জন্য ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
 
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের আওতায় পর্যায়ক্রমে দেশের সকল মাটির রাস্তার ওপর ইট-বালি বিছানো হবে। আমাদের সম্পদ সীমিত, কিন্তু চাহিদা সীমাহীন। এর মধ্যেই পর্যায়ক্রমে দেশের সকল গ্রামীণ মাটির রাস্তার ওপর হেরিংবোন বন্ড (এইচবিবি) করা হবে। এর ফলে বর্ষা মৌসুমে একদিকে যেমন সড়কগুলো রক্ষা পাবে, অন্যদিকে তেমনি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভোগান্তি কমবে’।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৫
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।