ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ধানে লাভ কম, বিকল্প সংস্থানে চাঙ্গা অর্থনীতি

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৬
ধানে লাভ কম, বিকল্প সংস্থানে চাঙ্গা অর্থনীতি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রংপুর থেকে:  দিন বদলের হাওয়া লেগেছে গ্রামেও। গ্রামের অর্থনীতি ক্রমেই বদলে যাচ্ছে।

প্রধান কৃষিপণ্য ধান চাষাবাদে লাভ কম হওয়ায় কৃষক ঝুঁকছেন বিকল্প চাষাবাদের দিকে।

ধানের জমিতে বেড়েছে পাট, কচুর মত জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু ফসলের চাষ। নিচু জমিতে ধানের পাশাপাশি বার মাস মাছের চাষই এখন প্রধান চিত্র। পুকুরে মাছ, উপরে হাঁস-মুরগির খামার। একই জমিতে নানামুখী ফসলের চাষে দ্বিগুণ লাভ পাচ্ছেন কৃষকরা।

চাহিদা মিটিয়ে এমন নানান বিকল্প অর্থনৈতিক সংস্থানের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পাল্টে যাচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি এবং সেই সঙ্গে উন্নত হচ্ছে গ্রামীণ জীবনমান।  

ধান, গমসহ প্রধান প্রধান কৃষিপণ্য এবং বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষের প্রবণতা রংপুর অঞ্চলের মানুষের মধ্যে। কয়েক বছর আগেও এসব কৃষিজাত ফসলের উপর নির্ভরতা ছিল এ অঞ্চলের মানুষ। কিন্তু এখন বিকল্প চাষাবাদ শুরু করেছেন এ অঞ্চলের বাসিন্দারা।

রংপুর সদর, মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এই বর্ষাকালে নিচু জমিতে পাট, কচু, মাছ চাষের চিত্র দেখা যায়। উঁচু জমিতে পেঁপে চাষে বেড়েছে আয়।

সদর উপজেলার ফাজিলখাঁ এলাকার পাঁচ যুবক একসঙ্গে গড়ে তুলেছেন ব্রয়লার মুরগির খামার। দেড় মাসের মধ্যে সেই খামার থেকে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় পাঁচ হাজার মুরগি।
উদ্যোক্তাদের একজন এরশাদ হোসেন বলেন, ধানচাষে যে পরিমাণ খরচ ও কামলা (শ্রম), তার থেকে কম কামলা ও সময়ে খামার থেকে লাভ বেশি।

এরশাদ জানান, এসব এলাকায় বেশ কয়েকটি খামার গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি এইসব এলাকার উঁচু জমিগুলোতে মরিচ, কুমড়া, শষা, পটলের মত সবজিগুলোর চাষ বেড়েছে আগের থেকে বেশি।

মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের মন্ডলপাড়ার আবু তাহের বলেন, কিছু দিন আগে ধানের মণ আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ টাকা হলেও এখন কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চারশ’ টাকায়। উৎপাদন খরচ না উঠায় এখন আর মানুষ বেশি ধান চাষ করছেন না। কেবল খাবারের জন্য চাষ হচ্ছে ধান।

লালমাটি হওয়ায় এই এলাকায় ফলফলাদি বিশেষ করে আমের বাম্পার ফলন হয়। এলাকার অনেক জমিতে আমের চারা লাগানো হচ্ছে বলে জানান আবু তাহের।

তিনি নিজে চলতি মৌসুমে আমের ব্যবসা করছেন জানিয়ে বলেন, আমের মধ্যে হাড়িভাঙা, ফজলি, আম্রপালির কদর বেশি। হাড়িভাঙা আমে যে দরে কিনছেন তার থেকে প্রায় দ্বিগুণ লাভ করছেন।

এসব এলাকায় এক সময় বেশি বেশি ধান চাষ হলেও এখন কৃষক ঝুঁকছেন আম চাষের দিকে। শত শত বিঘা জমিতে হচ্ছে আম চাষ।

তাহের বলেন, এসব বিকল্প সংস্থান জীবনমানেরও পরিবর্তন এনেছে। মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি রোজগার জীবনমান বদলে দিয়েছে।

সদর উপজেলার সদ্যপুস্করিণী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি মুরগির খামার গড়ে উঠেছে। তুলনামূলক নিচু জমি হওয়ায় পুকুরে মাছ চাষ এবং উপরে মাচা তৈরি করে করছেন হাঁস-মুরগি চাষ।

রিপন নামের এক খামারী বলেন, ঈদের আগে তার খামার থেকে অন্য সময়ের থেকে দ্বিগুণ লাভ হয়েছে।

গ্রামের এসব পরিবর্তনের পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে, বেড়েছে সামাজিক বনায়ন। ফলমূলের গাছের পাশাপাশি বেড়ে উঠছে বিভিন্ন কাঠগাছ।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫১ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৬
এমআইএইচ/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।