ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

যমুনায় স্টিল রেলসেতু নির্মাণে ৯৭৩৪ কোটি টাকা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৬
যমুনায় স্টিল রেলসেতু নির্মাণে ৯৭৩৪ কোটি টাকা

বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে দুই অংশকে একত্রিত করেছে। সড়কের পাশাপাশি সেতুটিতে রেল সংযোগও রয়েছে। তবে কচ্ছপগতিতে এগিয়ে চলে ট্রেন।

ঢাকা: বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে দুই অংশকে একত্রিত করেছে। সড়কের পাশাপাশি সেতুটিতে রেল সংযোগও রয়েছে।

তবে কচ্ছপগতিতে এগিয়ে চলে ট্রেন।

কারণ, ট্রেনের আউটার সিগন্যালিং খাঁচা ভেঙে ফেলেছে দুস্কৃতকারীরা। এর আগে কয়েকবার সেতুতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন যাত্রীরা।

এসব কারণে এবার বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুতে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারের স্টিল রেলসেতু নির্মাণ করবে রেলপথ মন্ত্রণালয়। বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর সমান্তরাল ৩০০ মিটার উজানে নির্মিত হবে সেটি।

এ লক্ষ্যে ‘যমুনা রেলওয়ে সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (০৬ ডিসেম্বর) শেরে বাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ও একনেকের চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠক শেষে প্রকল্পটির বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তিনি জানান, এ প্রকল্পের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গ, পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ নিরাপদ ও দ্রুতগামী রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা পেতে যাচ্ছেন।

পদ্মানদীতে ১ দশমিক ৮ কিমি দৈর্ঘ্যের লালন শাহ সড়ক সেতু  ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ রেলসেতু যেভাবে পাশাপাশি অবস্থান করছে, একইভাবে যমুনায়ও বঙ্গবন্ধু সেতু ও রেলসেতু স্থাপন করা হবে।

রেল মন্ত্রণলয় থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, যমুনায় রেলসেতু নির্মাণ প্রকল্পের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। ২০১৪ সালের মে মাসে জাপান সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সে সময় প্রকল্পটির বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছিল। প্রকল্পের তাৎপর্য ও গুরুত্ব এবং বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর ঝুঁকি বিবেচনা করে ঋণ দিতে সম্মত হয় জাইকা।
 
আধুনিক সকল সুযোগ-‍সুবিধার সমন্বয়ে নির্মিত হবে রেলসেতুটি। বঙ্গবন্ধু সেতু ইস্ট (বিবিই) স্টেশন ও বঙ্গবন্ধু সেতু ওয়েস্ট (বিবিডব্লিউ) স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিংকিং (সিবিআই) সিগন্যালিং সিস্টেম থাকবে। সেতু বরাবর গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইনও থাকবে।

সেতুটি সম্পূর্ণভাবে নির্মিত হলে উত্তরবঙ্গ, পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে আশির্বাদে পরিণত হবে বলেও মনে করছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।  

প্রকল্পটি চলতি সময় থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে। স্টিল রেলসেতু নির্মাণে ৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে জাইকা।

বর্তমানে দেশে ২ হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে অদূর ভবিষ্যতে দাঁড়াবে ৪ হাজার ৭৩০ কিলোমিটার। গড়ে প্রতিদিন ২৫ থেকে ২৬টি ট্রেন বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে পার হয়। কিন্তু ঝুঁকির কারণে কন্টেইনারবাহী ট্রেন চলাচল প্রায় বন্ধ রয়েছে।
 
প্রকল্পটির আওতায় ভারি পণ্য পরিবহনেরও মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২৩ সালে ৩০টি ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে থাকবে দু’টি কন্টেইনার, একটি পেট্রোলিয়াম ও দু’টি খনিজ সম্পদবাহী ট্রেন। ২০৩৩ সালে ৫০টি ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে থাকবে ৫টি কন্টেইনার একটি পেট্রোলিয়াম ও দু’টি খনিজ পণ্যবাহী ট্রেন। ২০৪৩ সালে যমুনা নদীর ওপর দিয়ে ৭০টি ট্রেন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮টি কন্টেইনার, ৪টি পেট্রোলিয়াম ও দু’টি খনিজবাহী ট্রেন চলাচল করবে।
 
২০১৮ সালের মধ্যেই মংলা পোর্ট উন্নয়নের কাজ সম্পূর্ণ হবে। তখন বঙ্গবন্ধু সেতুর গুরুত্ব কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। উন্নত দেশের মতো ২০২৩ সাল নাগাদ ৫০ শতাংশ ভারি পণ্য রেলপথে পরিবহনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।    
 
একনেকের বৈঠকে মোট ১২টি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। সেগুলোর মোট ব্যয় ১ লাখ ৫২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ১ লাখ ১৬ হাজার ১৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি সভায় লাখ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে ইতিহাসও সৃষ্টি করলো বর্তমান সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।