ঢাকা: দ্বিপাক্ষিকভাবে অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় ক্রমাগত ব্যর্থ হচ্ছে দেশগুলো। একারণে অভিবাসীদের সুরক্ষায় একটি বৈশ্বিক কাঠামো তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো।
গত বছর তুরস্কের কাছ থেকে এ সংস্থার চেয়ারম্যান পদ পেয়ে এবারের সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ। তবে শুধু আয়োজনের মাধ্যমে নয় যুগান্তকারী কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে অভিবাসন খাতেও বিশ্বে নেতৃত্বের স্বাক্ষর রাখলো বাংলাদেশ।
সোমবার (১২ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পাঁচ দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের সমাপনী পর্বে তাই বারবার উচ্চারিত হয়েছে বাংলাদেশের নাম।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, বিশ্বের প্রায় ১৩০টি দেশের প্রায় এক হাজারেরও বেশি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধিরা এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। সেখানে বৈশ্বিকভাবে অভিবাসনকে পরিচালনা করার একটি দলিল তৈরির বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন। কারণ, দ্বিপাক্ষিকভাবে অভিবাসন ব্যবস্থাপনা করা যাচ্ছে না আর।
সফলভাবে সম্মেলন আয়োজনের পাশাপাশি বৈশ্বিক অভিবাসনকে সুশৃঙ্খল করতে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব রাখে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা তিন ধরনের কমপ্যাক্ট হতে পারে বলে প্রস্তাব রেখেছি। কনভেশন-যেটা সকল সদস্য দেশের ওপর বাধ্যতামূলক হবে। এছাড়া কমপ্যাক্টটি এসডিজি মডেলে হতে পারে- যেখানে মাইগ্রেশন লক্ষ্য ও সূচক থাকবে। এটা বাধ্যতামূলক নয়, তবে সবাই এই শর্ত পালন করবে; যেভাবে এমডিজি, এসডিজি’র ক্ষেত্রে করছে। এই দুটো (কনভেনশন ও এসডিজি মডেল) মিলিয়েও হতে পারে। যার কিছু কিছু নিয়ম পালন বাধ্যতামূলক থাকবে।
অভিবাসন ও কানেকটিভিটি, অভিবাসনে সুশাসন আনার মতো বিষয়েরও প্রস্তাবক বাংলাদেশ। যা সবকটি আলোচনায় বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী উন্নয়ন, জলবায় পরিবর্তন ও দারিদ্র্যতা বিমোচনের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়ে সারা বিশ্বের একটি মডেল দাঁড় করিয়েছেন। এই প্রথমবারের মতো তিনি নেতৃত্বে এলেন এবং স্বপ্নদ্রষ্টা নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেন। যেটা নিয়ে সারা বিশ্বে আলোচনাত হচ্ছে। সে বিবেচনায় এটি একটি বড় অর্জন।
এ সম্মেলনে ভূ-রাজনীতি, অর্থনীতি, নিরাপত্তা, ভবিষ্যত কমপ্যাক্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
শহীদুল হক আরও বলেন, এবারের সম্মেলনে নতুন কিছু বিষয় আলোচনায় এনেছি। কানেকটিভিটি ও অভিবাসন, অভিবাসন ও উন্নয়নের অর্থনীতি, সামাজিক প্রেক্ষাপট ও সুশাসন এই তিনটি বিষয়ে অভিবাসন খরচ, মানুষে মানুষে যোগাযোগ, অভিবাসীদের গন্তব্য, অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষা, সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি ও দুর্যোগ চলাকালে কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হবে, নিরাপদ অভিবাসনের জন্য করণীয় আলোচনা প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
তিনি জানান, অভিবাসীদের সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক কাঠামো তৈরির বিষয়ে সকল দেশই একমত হয়েছে। এর অবয়ব কেমন হবে সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে এখনও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়নি। আশা করা যাচ্ছে আগামী বছরের মাঝামাঝি এর প্রাথমিক খসড়া তৈরি হতে পারে।
এবারের সম্মেলনে ব্যবসায়ী কমিউনিটি প্রথমবারের মতো অংশ নেওয়ায় অভিবাসন খরচ নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্র সচিব।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬
জেপি/এমজেএফ