ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

নিয়ম বহির্ভূত পদোন্নতি ও স্থায়ীকরণ বাংলাদেশ ব্যাংকে!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৭
নিয়ম বহির্ভূত পদোন্নতি ও স্থায়ীকরণ বাংলাদেশ ব্যাংকে!

ঢাকা: পদোন্নতি ও স্থায়ীকরণের বিষয়টি স্বচ্ছভাবে করা হয় বলে সুনাম রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। তবে এবার নিয়ম বহির্ভূতভাবে এক কর্মকর্তার চাকরি স্থায়ীকরণ কার্যকরের মেয়াদ ৪ থেকে ৯ বছর এগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের হিউম্যান রিসোর্সেস বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি হলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কর্মকর্তারা।

তবে পদোন্নতি পাওয়া ওই কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন বলেছেন, অনেক আগেই যে অধিকার তার পাওয়ার কথা ছিল, সেটি নিশ্চিত করা হয়েছে।

 
 
অফিসার পদে তার নিয়মিতকরণ ৬ বছর, সহকারী পরিচালক (এডি) পদে পদোন্নতি ৯ বছর, উপ-পরিচালক (ডিডি) পদে পদোন্নতি ৪ বছর ও যুগ্ম পরিচালক (জেডি) পদে পদোন্নতি ৪ বছর এগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে অন্য কর্মকর্তাদের আগেই তার পদোন্নতি হয়েছে ও হবে।    
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগে কর্মরত জাহিদ হোসেন গত বছরের ৩১ আগস্ট যুগ্ম পরিচালক হয়েছেন। কিন্তু তিনি ২০১২ সালের ২৯ জুলাই থেকে যুগ্ম পরিচালক হয়েছেন বল্যে গণ্য হবেন। অর্থাৎ চার বছর আগে থেকেই তাকে জেডি হিসেবে গণ্য করতে হবে। তার জ্যেষ্ঠতার অবস্থান একেএম মাসুদ করিমের ওপরে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
 
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য মেধা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তালিকা করা হয়। ওই তালিকার ক্রমানুসারে একে একে কর্মকর্তারা পদোন্নতি পান। ২০১২ সালে ২৯ জুলাই ৫৭ জন জেডির তালিকা করা হয়েছে। ওই তালিকা থেকে ডিজিএম পদে পদোন্নতি দেওয়া শুরু হবে। গত বছরের পদোন্নতি পাওয়ায় আগের ওই তালিকায় জাহিদ হোসেনের নাম নেই। কিন্তু জ্যেষ্ঠতা পুনর্নির্ধারণ করে ওই তালিকায় তার নাম ৪ নম্বর স্থানে রাখা হয়েছে।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, ‘১০ থেকে ১২ বছর আগে অফিসার হিসেবে তিনি আমাদের অধীনে কাজ করেছেন। এখন তিনি ডিজিএম হবেন। তার অধীনে আমাদের কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে এমন অন্যায় আর হয়নি’।
 
কর্মকর্তারা আরও জানান, জাহিদ হোসেনের বাবা বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরিরত অবস্থায় মারা যান। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাকে অফিসার পদে নিয়োগ দেন তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদ। তবে তার নিয়োগের শর্তে বলা হয়, স্থায়ীভাবে নিয়োগ পেতে হলে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা বা প্রচলিত নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি উত্তীর্ণ হতে পারেননি।
 
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘চাকরির সব শর্ত আমি পূরণ করেছি। আমার জুনিয়ররা এখন ডিজিএম। আমাকে ঠকানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি ঝুলে ছিল। অনেক চেষ্টার পর সেটির সমাধান করতে পেরেছি। কোনো সূত্র ধরে নয়, আমার যোগ্যতার ন্যায্য পাওনা পেয়েছি’।
 
তবে কবে থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করছেন, সে প্রশ্নের উত্তর দেননি জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘যা শুনছেন, তার অনেক আগে থেকেই আমি চাকরি করছি’।
 
অফিস আদেশে আরও বলা হয়, অফিসার পদে জাহিদ হোসেনের চাকরি নিয়মিত করা হয় ১৯৯৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর। কিন্তু ১৯৯১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তার চাকরি নিয়মিত হয়েছে বলে গণ্য হবে। সহকারী পরিচালক (এডি) পদে তিনি ২০০৬ সালে পদোন্নতি পেলেও তা ১৯৯৭ সালে পেয়েছেন বলে গণ্য করতে হবে। উপ-পরিচালক (ডিডি) পদে পদোন্নতি পান ২০১১ সালে। এটি চার বছর পিছিয়ে ২০০৭ সালে পেয়েছেন বলে গণ্য করতে হবে।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক  শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। কারো বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত হলে পদোন্নতি স্থগিত রাখা হয়। নির্দোষ প্রমাণিত হলে আগের মর্যাদা অনুসারে তার পদোন্নতি কার্যকর হয়। এক্ষেত্রে কি হয়েছে, তা আমার জানা নেই।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৭
এসই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।