ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের আহ্বান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৭
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের আহ্বান প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছেন ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ

ঢাকা: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত থেকে ভ্যাট তুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।

মঙ্গলবার (০৪ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে প্রাক বাজেট আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানান তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ সকল সার্বজনীন বিষয়ে ভ্যাট তুলে দিতে হবে।

কেননা, এটি সবার প্রয়োজন। আর এটি তুলে দিলে সবার ভালো হবে। দিন দিন সার্বজনীন ব্যবহারকৃত বিষয়গুলোর চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। অন্যদিকে ভ্যাট হলো বিক্রয় কর, যা ভোক্তার ওপর আরোপ করা হয়। তাই ভ্যাট আদায়ে ব্যবসায়ীদের উৎসাহী করতে এবং ভ্যাট আদায়ে কর প্রশাসনের সক্ষমতা বাড়াতে হবে’।

তিনি আরও বলেন, ‘নতুন ভ্যাট আইনের দ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরি। তবে আমাদের দেশে ভ্যাট দেওয়ার মতো কতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে, তার কোনো হিসাব কারো কাছে নেই। নিবন্ধিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কতো ভ্যাট দিচ্ছে, তারও কোনো হিসাব নেই। কিন্তু আমাদের যদি হিসাব থাকতো, তাহলে আমরা জানতে পারতাম, বছরে কি পরিমাণ ভ্যাট আদায় হচ্ছে। আসল ভ্যাট ফাঁকিবাজদেরও আমরা ধরতে পারতাম এবং ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ হতো’।

‘তাই ভ্যাট আইন সুন্দর হলেও সেটি বাস্তবায়িত না হলে কোনো লাভ নেই। ভ্যাট আইনের দ্রুত বাস্তবায়ন করতে এবং তার যথাযথ ব্যবহার করতে হবে’।

ভ্যাট আদায়ের পর সরকারের কোষাগারে জমা হচ্ছে কি-না, সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে উল্লেখ করে ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, ‘ভোক্তার কাছ থেকে বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ভ্যাট আদায় করছে। কিন্তু আদায়কৃত ভ্যাট আসলে কি সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে? যদি হয়ে থাকে, তাহলে তার পরিমাণ কতো, সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে। না হলে ভোক্তারা ভ্যাট দিতে চাইবেন না। তখন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করেও আশানুরূপ কোনো সফলতা আসবে না’।  

‘এছাড়া কর ফাঁকি বন্ধ করতে হলে আমাদের সবার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। এক্ষেত্রে এনবিআর’কে অবশ্যই যারা কর দিচ্ছেন না, তাদের নাম প্রকাশ করতে হবে। তাহলে সম্মানের ভয়ে কেউ আর কর ফাঁকি দেবেন না’।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ড. তৌফিকুল আলম বলেন, ‘আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় বিষয় যেমন বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ভ্যাট রাখা হবে কি-না, সেটি চিন্তা করতে হবে। এছাড়া কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো হবে কি-না, সেটিও দেখতে হবে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারের বাইরে ও ভেতরে যেসব কোম্পানি রয়েছে, তাদের বৈষম্য দূর করতে হবে। কেননা, অনলাইনে ভ্যাট বাস্তবায়নের আগে বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন। না হলে বাস্তবায়িত হওয়ার পর বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেবে। তখন সফলতার চেয়ে বরং ব্যর্থতার দায়ভার নিতে হবে এনবিআরকে’।

বিআইডিএস’র আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘কর আদায়ে এনবিআরকে আরও সতর্ক হতে হবে।   দেশের অনেক স্থানে নারী কৃষক রয়েছেন। তাদের কাছ থেকে কর আদায়ে সুবিধা দিতে হবে। এখনো কর দিতে বিভিন্ন স্থানে হয়রানির শিকার হতে হয়। কিন্তু এখন সময় এসেছে, সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার। তাই যত দ্রুত সম্ভব এনবিআরকে নতুন ভ্যাট আইনের বাস্তবায়ন করতে হবে’।

সভাপতির বক্তব্যে এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধে ও সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে এনবিআর কাজ করছে। আইএফসি’র খসড়াগুলোরও রিভিউ করা হচ্ছে। আইনগুলো বাংলায় করতে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করছি, সকল সমস্যা দূর হবে। এছাড়া আমরা ডিজিটাল এনবিআর করছি। ভ্যাট অনলাইনসহ সব কিছু এখন অনলাইনে করছি। ফলে হয়রানি শব্দটি এখন মুছে যাবে। এনবিআরের কোথাও আর হয়রানি থাকবে না’।

বাজেট আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন পিডব্লিউসি, বাংলাদেশের ম্যানেজিং পার্টনার মো. মামুনুর রশীদসহ এনবিআরের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, ০৪ এপ্রিল, ২০১৭
এসজে/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।