ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

শ্রমিককল্যাণ ফান্ডে টাকা দিচ্ছে না কোম্পানিগুলো!

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৭
শ্রমিককল্যাণ ফান্ডে টাকা দিচ্ছে না কোম্পানিগুলো!

ঢাকা: শ্রমিকদের কল্যাণে শ্রমআইন-২০০৬ গঠন করা হয়। আইন অনুযায়ী সকল প্রাতিষ্ঠানি‍ক, অ-প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানকে তাদের আয়ের একটা অংশ শ্রমকল্যাণ ফান্ডে জমা দেওয়ার কথা। অথচ আইন প্রণয়নের পর দশ বছর অতিবাহিত হলেও কল্যাণ ফান্ডে সারা নেই বেশিরভাগ কোম্পানির।

কয়েক হাজার কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৮৪টি কোম্পানি নিয়মিত শ্রমিককল্যাণ ফান্ডে টাকা জমা দিচ্ছে। বাকিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে।

 

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মার্চ পর্যন্ত এই ফান্ডে ২০৫ কোটি টাকা জমা পড়েছে। দেশে কোম্পানিগুলোর হিসাব করলে প্রতিবছর ৮০ কোটি টাকা জমা হওয়ার কথা।  

শ্রমআইন অনুযায়ী যেসকল কোম্পানির মূলধন ২ কোটি টাকার উপরে, তাদের ঘোষিত লভ্যাংশের ৫ শতাংশ আলাদা করতে হবে শ্রমিকদের জন্য। এই ৫ শতাংশকে ১০ ভাগ করে ৮ ভাগ ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। আর একভাগ ওই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিককল্যাণ ফান্ডে জমা দিতে হবে। বাকি একভাগ জমা পড়বে শ্রমমন্ত্রণালয়ের শ্রমিককল্যাণ ফান্ডে।  

কল্যাণ ফান্ডের এই টাকা অসুস্থ, অসহায়, দুর্ঘটনায় কবলিত শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করার কথা। এখন পর্যন্ত জমাকৃত টাকার কিছু অংশ তাজরিন ফ্যাশন লিমিটেডের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এবং রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ব্যয় করা হয়েছে। তা-ও খুবই সামান্য। টাকার সঠিক হিসাব মন্ত্রণালয়েও পাওয়া যায়নি।

‘শ্রমিককল্যাণ ফাণ্ডে টাকা জমার হার এতো কম কেন?’-- এবিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্ন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগে তো ছিলই না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর কিছুটা বাড়ছে। আমাদের কোম্পানি আছে হাজার হাজার। অথচ শ্রমিককল্যাণ ফান্ডে টাকা জমা দিচ্ছে মাত্র ৮৪টি। এটা আরও ব্যাপক হওয়া উচিত। আমরা চেষ্টা করছি অডিট ফার্মকে যুক্ত করে কোম্পানিগুলোকে চাপ দিতে। আশা করি বাড়বে। এখন অডিট রিপোর্ট দেওয়ার আগে এটা নিশ্চিত করার হচ্ছে। এটা আইনেই আছে। আইন সবার জন্য সমান। তাই টাকা দিতেই হবে। ’

এদিকে শ্রমিককল্যাণ ফান্ডের টাকা গরিব অসহায় শ্রমিকদের সন্তানদের লেখাপড়ায় ব্যয় করার উদ্যেগ নিয়েছে সরকার। কোনো শ্রমিকের সন্তান যদি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারে, তাহলে তাকে এককালীন ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে।

একইভাবে কোনো শ্রমিকের সন্তান যদি পাবলিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি হতে পারে, তাহলে সেও পাবে ৩ লাখ টাকা। আর যদি কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ‍পারে, তাহলে তাকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এজন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ৫০/৬০ জন আবেদন করেছে এই খাতের সহায়তার জন্য।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রথমবার আমরা চাইছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত দিয়ে এই টাকা দিতে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। তিনি সময় দিলেই চলতি মাসেই শ্রমিকদের মেধাবী সন্তানদের হাতে এই টাকা তুলে দেওয়া হবে।  

তিনি বলেন, আমরা টাকা নিয়ে বসে আছি। শ্রমিকদের মেধাবী সন্তানরা দাবি নিয়ে এলেই দেওয়া হবে।

এখন পর্যন্ত যেসকল কোম্পানি শ্রমিককল্যাণ ফান্ডে টাকা দিয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে:কোটস বাংলাদেশ লিমিটেড, রেনেটা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, রেনেটা লিমিটেড, ফু-ওয়াং সিরামিক, নেক্সাস সুয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ (প্রা:) লিমিটেড,  দি বেঙ্গল গ্লাসওয়্যার লিমিটেড, এসিএস টেক্সটাইল বাংলাদেশ লিমিটেড, ব্রিটিশ- আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ,  নেসলে বাংলাদেশ, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট লিমিটেড,টিএম টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্ট লিমিটেড, ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড, রবি আজিয়াটা বাংলাদেশ, গ্রামীণফোন লিমিটেডসহ ৮৪টি প্রতিষ্ঠান তাদের ঘোষিত লভ্যাংশের অংশবিশেষ জমা দিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০২২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৭
এসএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।