ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

জবির ভর্তিতে শিওর ক্যাশ এজেন্টদের বাড়তি অর্থ আদায়!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৭
জবির ভর্তিতে শিওর ক্যাশ এজেন্টদের বাড়তি অর্থ আদায়!

জবি: প্রতিবছর ভর্তি শুরু মানেই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অবিভাবকদের ভোগান্তির ষোলকলা। সকাল-সন্ধ্যা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দেওয়ার দু:সহ অগ্নিপরীক্ষা। দুর্ভোগের এই চিত্র পাল্টে দিতে তাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) প্রশাসনের সর্বশেষ মানবিক পন্থা শিওর ক্যাশের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে ভর্তি। কিন্তু এখানেও অনিয়ম। শিওর ক্যাশ এজেন্টরা অবৈধ সিন্ডিকেট করে ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে আদায় করছে অতিরিক্ত টাকা।

জানা যায়, জবির ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে অনলাইনে সম্পন্ন হচ্ছে ১ম বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম। রূপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশের মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে ভর্তির নির্ধারিত ফি।

বিগত বছরগুলোর তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের ভোগান্তি কমাতেই এই উদ্যোগ গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এতেও লাভ হলো না। শিওর ক্যাশ এজেন্টরা সিন্ডিকেট করে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। পুরাণ ঢাকার এই অঞ্চলে শিওরক্যাশের এজেন্ট কম থাকার সুযোগে যে ক’জন আছে তারা বাড়তি টাকা আদায় করছে। ভর্তি প্রক্রিয়াটি তাই স্বস্তিকর হওয়ার বদলে হয়ে উঠেছে গলার কাঁটা। যোগ হয়েছে নতুন ভোগান্তির।  

রোববার(৩ ডিসেম্বর) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শিওর ক্যাশের দোকানগুলোতে উপচে-পড়া ভিড়। আর এ সুযোগে এজেন্টরা আদায় করছেন অতিরিক্ত ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। উপায়ান্তর না পেয়ে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরাও ভর্তির জন্য অতিরিক্ত টাকা দিচ্ছেন।

কথা হয় ভর্তিচ্ছু তানিয়া আক্তারের বাবা আব্দুর রহিমের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, "শিওর ক্যাশ ভালো সিস্টেম। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী এই সিস্টেমের সুনাম নষ্ট করছে। আমি নিজেও ৩৫০ টাকা বেশি দিয়েছি। কোনো উপায় দেখছিলাম না। তবে এ এলাকায় যদি শিউর ক্যাশের আরো কিছু দোকান থাকতো তাহলে আমরা আর ভালোভাবে হয়তো বাড়তি টাকা না দিয়েই টাকা পেমেন্ট করতে পারতাম। "

ময়মনসিংহ থেকে আসা 'এ' ইউনিটে ভর্তিচ্ছু জামিলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, "আমি গ্রাম থেকে এসেছি। খুব বেশি কিছু জানি না। এখানে টাকা জমা দিতে এসে অন্যের দেখাদেখি আমিও ২৫০ টাকা অতিরিক্ত দিয়েছি। পরে মেসেজ দেখে বুঝতে পারলাম সার্ভিস চার্জ 'অনলি' (মাত্র) ৩০ টাকা।   বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিওর ক্যাশ কর্তৃপক্ষ সবারই এ ব্যাপারে কঠোর হওয়া উচিত। "

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ক্রিয়েটিভ কম্পিউটারের মালিক মোঃ কাইয়ুম বাংলানিউজকেকে বলেন, "মাস শেষে দোকান মালিককে ২০,০০০ টাকা দিতে হয়। শিওর ক্যাশ থেকে আমাদের কোনো টাকা দেওয়া হয় না। আমরা ব্যবসায়ী মানুষ। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে অল্প কিছু টাকা বেশি আদায় করি। "

তিনি আরো বলেন, "এখানে সবাই একই মূল্য ধরে কাজ করে। সবাই যেমন নিচ্ছে আমরা তেমন নিচ্ছি। ৩০০ টাকা নেওয়া তো বেশি না। বরং অন্য অনেকে তো অতিরিক্ত ৫০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। "

এ ব্যাপারে রূপালী ব্যাংকের 'শিওর ক্যাশ' ডিপার্টমেন্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার সালাহউদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, "আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩০ টাকা সার্ভিস চার্জ নিচ্ছি। এই ৩০ টাকার মধ্যে শিওর ক্যাশ এজেন্টদের নির্দিষ্ট হারে টাকা দিচ্ছি। এজেন্টরা এর অতিরিক্ত টাকা নিলে প্রমাণ সাপেক্ষে আমারা তাদের এজেন্সি বাতিল করে দেওয়াসহ আইনগত ব্যবস্থা নেব। "

শিওর ক্যাশের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জবি আই.টির সিনিয়র প্রোগ্রামার হাফিজুর রহমান(হাফিজ) বাংলানিউজকে বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে এই অনলাইন প্রক্রিয়াটা চালু করলাম। আর চালু করার আগেই শিওর ক্যাশের সাথে কথা বলে নিয়েছি, যেন অতিরিক্ত টাকা না নেওয়া হয়। শিওর ক্যাশে সর্বনিম্ন চার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ত্রিশ টাকা পর্যন্ত পেমেন্ট চার্জ আসতে পারে। তাই আমরা শিওর ক্যাশের সাথেই চুক্তিটা করেছি, তা না করে  তো অন্যটাও করতে পারতাম।   আমরা বারবার শিওর ক্যাশের অথিরিটিকে(কর্তৃপক্ষ) জানিয়েছি যেন কোনো এজেন্ট থেকে এমন কাজ করা না হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সেলিম ভুঁইয়াকে কল করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ০২২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৭
ডিআর/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।