এখন কিস্তি বা সুদ-আসল পরিশোধে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে ঋণে জর্জরিত তাঁতী পরিবারগুলো। আধুনিক প্রশিক্ষণের অভাবেও তাঁত বন্ধ রেখে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন অনেক তাঁতী।
তাঁতীরা জানান, সুতাসহ উপকরণের দাম বাড়ায় কম্বল তৈরির খরচও অনেক বেড়ে গেছে। তাদের বেশিরভাগই বর্তমানে সরকারি টেন্ডারের কম্বল তৈরি করে সরবরাহ করছেন। কিন্তু পরিশ্রম অনুসারে মজুরি বা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। এর বাইরে তৈরি করা কম্বলের কিছু কিছু বিক্রিও করতে পারছেন না।
ফলে কেউ কেউ নিজেদের সামান্য পুঁজি খাটিয়ে কম্বল তৈরি করে কিছুটা লাভের মুখ দেখলেও বেশিরভাগেরই করুণদশা।
ঠাকুরগাঁও শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের কেশুরবাড়ি গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শীতের শুরু থেকেই তাঁতীদের ঘরে ঘরে চলছে কম্বল তৈরির কর্মযজ্ঞ। তৈরি হওয়া কম্বল কিনতে আসছেন স্থানীয় বাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
এবারের শীত মৌসুমে এ গ্রাম থেকে সরকারি টেন্ডারের মাধ্যমে প্রায় ৪০ হাজার কম্বল কেনা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ঠিকাদার।
তবে তাঁতী শ্যামল চন্দ্র দেবনাথ বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রতি বছরই এনজিওগুলোর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কম্বল তৈরি করি। কিন্তু তৈরি করা কম্বল বিক্রি করতে না পারায় সময়মতো কিস্তি পরিশোধ করতে পারি না’।
কমল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘আমরা ৯৫ শতাংশ তাঁতীই বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কম্বল তৈরি করি। কিন্তু তৈরি করা ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে না পেরে অনেকেই ঠিকমতো কিস্তি দিতে পারি না। একটির কিস্তি পরিশোধ করি অন্য একটি থেকে ঋণ নিয়ে। এভাবে একটির পর একটি এনজিওতে ঋণের বোঝা অনেক বেশি হওয়ায় এখন কষ্ট করে দিনযাপন করছি’।
পরেন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘সারা বছর কম্বল তৈরি করি, তবে শীতের এ সময়টাতে কাজ হয় সবচেয়ে বেশি। সরকার এসব কম্বল কিনে নেওয়ায় তাতঁগুলো সচল রয়েছে। তবে, আমরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। বাধ্য হয়ে অল্প মজুরিতে তৈরি করে দিতে হচ্ছে’।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তৈমুর রহমান বলেন, ‘ওই ৫০০ তাঁতী পরিবার কম্বল-চাদর তৈরির পর বিক্রি করে জীবন-জীবিকা চালায়। কিন্তু পুঁজির অভাবে মহাজনদের কাছে অর্থলগ্নি করে বা বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বর্তমানে বড় ধরনের ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। শত বছরের তাঁতশিল্প টিকিয়ে রাখতে তাই সরকারের এগিয়ে আসা উচিত’।
‘উৎপাদিত পণ্যগুলো সরকার ন্যায্যমূল্য কিনে নিয়ে বাজারজাত করলে এবং বিনা সুদে ঋণ দিয়ে তাদেরকে কর্মে সহায়তা করলেই একমাত্র এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা যেতে পারে’।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৭
এএসআর