বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা এর আগে বিশ্বাস করতেই চাইতেন না যে, নুরুল আলম টেন্ডার জালিয়াতির মাধ্যমে দুই মিলিয়ন ডলার ঘুষ নিতে পারেন। দেখা হলেই তিনি বলতেন, আপনাদের হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে।
আমেরিকার ওয়েলস ফারগো ব্যাংকে নুরুল আলমের ছেলে মাহফুজ আলমের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ২ মিলিয়ন ডলার ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে বাংলানিউজ একটি সংবাদ প্রকাশ করে। এর প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ২৭ মে তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। তারপর থেকেই লাপাত্তা এপিএসসিএল-এর সাবেক এমডি নুরুল আলম।
আগে যারা নুরুল আলমের পক্ষ নিয়ে কথা বলতেন তারাও এখন ধীরে ধীরে ঘটনা আঁচ করতে পারছেন। আর তাই সুর বদলে বলতে বাধ্য হচ্ছেন, বাংলানিউজের প্রকাশিত খবরই ঠিক। না হলে নুরুল আলম পালিয়ে যাবেন কেন? এরপরেও সংশ্লিষ্টদের টনক নড়েছে বলে মনে হয় না। ঘুমিয়ে আছে তদন্ত কমিটিও! বলা চলে হাত গুটিয়ে বসে আছে।
প্রথম দিকে একটু সক্রিয় ছিলো তদন্ত কমিটি। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ওয়েলস ফারগোর কাছ থেকে তথ্য চেয়েছিলো। তারা তথ্য দেয়নি। আবার নুরুল আলমের বাসার ঠিকানায় নোটিশ পাঠালেও ফেরত এসেছে। তারপর থেকেই পুরোপুরি নিশ্চুপ কমিটি।
উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটির প্রধান পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আরস্তু খান গেছেন অবসরে। এরপর বাংলাদেশ এনার্জি রিসার্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ চৌধুরীকে প্রধান করা হয়েছে। কিন্তু কমিটির কাজের দৃশ্যমান কোনো গতি নেই।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের পিপিআর অনুযায়ী চূড়ান্ত দর অনুমোদনের পর আপসরফার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু আশুগঞ্জে ৪৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২২শ’ ২৬ কোটি টাকার দর পরিবর্তন করে ৩২শ’ কোটি টাকা করা হয়েছে। এ কারণে বাড়তি ১ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে।
আর এই অনিয়মের কারণে রাষ্ট্রের লোকসান হলেও কোম্পানিটির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আলম ও তার সহযোগীরা ৪৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সন্দেহের তালিকায় রয়েছে তৎকালীন বোর্ড চেয়ারম্যান ও বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেনও (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সচিব)।
এর মধ্যে দুই মিলিয়ন ডলার লেনদেন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সানফ্রান্সিসকো শহরে অবস্থিত ওয়েলস ফারগো ব্যাংকে। ব্যাংকটিতে রয়েছে নুরুল আলমের ছেলে মাহফুজ আলমের অ্যাকাউন্ট। সেই অ্যাকাউন্টেই ২ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয়েছে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ থেকে।
নরুল আলম গা ঢাকা দেওয়ার আগে এপিএসসিএল থেকে পেনশনের সম্পূর্ণ অর্থ তুলে নিয়েছেন। সাধারণত কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে পেনশন আটকে দেওয়া হয়। কিন্তু এখানে তদন্ত কমিটি গঠন হলে তড়িঘড়ি করে আগের তারিখ দেখিয়ে পেনশন দেওয়া হয়েছে। আর এই কাজে তাকে সহায়তা করেছেন সন্দেহের তালিকায় থাকা আনোয়ার হোসেন।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, প্রথম যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছিলো। সেই কমিটিতে প্রধান ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আরস্তু খান। তিনি অবসরে যাওয়ার পর বাংলাদেশ এনার্জি রিসার্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ চৌধুরীকে প্রধান করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির কার্যক্রমের অগ্রগতি জানতে কমিটির বর্তমান প্রধানের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৭
এসআই/এমজেএফ