২০১৬-তে এসে দাম প্রায় তিনগুণ (৪০ ডলারেরও কম) কমে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এর ফলে এসব দেশের অর্থনীতিতে দেখা দেয় মন্দা।
২০১৮ সালের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার বিশ্ববাজারে ব্যারেলপ্রতি অশোধিত তেলের দাম ৬০ ডলারের গণ্ডি ছাড়াল। এদিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্ল্যুটিআই) –এর অশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ০.৪ শতাংশ বা ২১ সেন্ট বেড়ে ৬০ দশমিক ৬৩ ডলারে দাঁড়ায়। দিনের শুরুতে ব্যারেলপ্রতি দাম গিয়ে ঠেকে ৬০ দশমিক ৭৪ ডলারে। ২০১৫ সালের জুনের পর অপরিশোধিত তেলের এটাই সর্বোচ্চ দাম বৃদ্ধি।
তবে ব্রেন্ট ক্রুড ওয়েলের দাম বৃদ্ধির কাছে টেক্সাস ওয়েলের দাম বৃদ্ধি নস্যি। কেননা এদিন ব্রেন্ট ক্রুড ওয়েল বিক্রি হয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৩১ সেন্ট বা দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ৬৭.১৮ ডলারে। দিনের শুরুতে দাম বেড়েছিল আরো বেশি। দাম দাঁড়ায় ৬৭ দশমিক ২৯ ডলারে।
যে কারণে এই চাঙ্গাভাব
বিশ্ব তেলবাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, মূলত দুটো কারণে তেলের বাজারে এই চাঙ্গা ভাব। প্রথম কারণ বৃহৎ তেল উৎপাদক দেশ ইরানে চলমান বিস্ফোরক রাজনৈতিক পরিস্থিতি। দ্বিতীয় কারণ বেশ কিছুদিন ধরে ওপেকভুক্ত দেশগুলো ও রাশিয়ার তেলের উৎপাদন ও সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া। আরো একটা প্রচ্ছন্ন কারণ ক্রেতা দেশ চীনের চাহিদা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া। চাহিদা বেড়েছে ভারতেরও।
সব মিলিয়ে ২০১৪ সালের জানুয়ারির পর এই প্রথম আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যারেলপ্রতি অশোধিত তেলের গড় মূল্য ৬০ মার্কিন ডলারের গণ্ডি পেরোল।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক Schork Report বলছে,“ইরানে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা ও উত্তেজনার কারণেই বছরের শুরুতেই তেলের মূল্যে এমন চাঙ্গা ভাব।
ইরানে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ ও সহিংস বিক্ষোভে ভাটার টান নেই। বরং সরকারের হুমকি ও দমনমূলক ব্যবস্থা উপেক্ষা করে রোববার সেখানে প্রবল সহিংস বিক্ষোভ হয়েছে। তাতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। মঙ্গলবার তা চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে। ২০০৯ সালের সংস্কারপন্থি আন্দোলনের পর ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে এটাই সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। ইরান বৃহৎ অশোধিত তেল উৎপাদক দেশ হওয়ায়, দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতার ঢেউ গিয়ে লেগেছে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে।
ইরানের জন্য একই সঙ্গে তা বিপরীতে হিত এবং হিতে বিপরীত। দাম বাড়ার সুবিধা ইরানের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। অন্যদিকে রাজনৈতিক ফ্রন্টে তা টেনে আনবে বিপদ। চলমান এই ‘নিষেধ –না –মানা’ বিক্ষোভ সহিংসতা বর্তমান শাসকগোষ্ঠির জন্য বড় রাজনৈতিক ঝুঁকির ফাঁদ তৈরি করে রেখেছে।
ইরানের জানের দুষমণ আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিক্ষোভকারীদের পক্ষে সাফাই গেয়ে আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছেন। ইরানি শাসকরা আলবত জানে যুক্তরাষ্ট্র নামের বিশ্ব-মোড়ল যে কোনো মওকা পেলেই তা লুফে নেবে। তার আগে তারা আপাতত ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে ব্যস্ত। ইরান এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তার ক্ষোভ জানিয়েছে।
অন্যদিকে সৌদি আরব ও ইসরাইলসহ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোও চাইছে ইরানে চলমান সহিংসতা গৃহযুদ্ধে রূপ নিক। তাহলেই ইসরাইল ও সৌদি জোটের দেশগুলো পারস্য-প্রাসাদে-লাগা-আগুনে আলুপোড়া দিয়ে খেতে পারবে। এসবের পেছনে আমেরিকা, সৌদি আরবের গোপন কলকাঠি আছে বলে মনে করছে ইরান।
তাছাড়া ইরানে সহিংসতা শুরুর আগে থেকেই ‘মার্কেট সেন্টিমেন্ট’ নাকি ‘বুলিশ’ ছিল। মানে, সবার মনে চাঙ্গা মনোভাব কাজ করছিল নানাবিধ কারণে; যেসবের কয়েকটি উপরে বলা হয়েছে।
আর গত একটি বছর ধরে তেলের বাজারকে টেনে তোলার চেষ্টায় উপাদন ও সরবরাহ কম থাকাটাও রেখেছে বড় ভূমিকা। সব মিলিয়ে ‘সরবরাহ কমলে দাম বাড়ে’ –অর্থনীতির এই ফর্মুলাই কার্যকর হলো।
ইরান পরিস্থিতি যদি আরো খারাপের দিকে যায় তাহলে তেলের দাম আরো বাড়বে। সেক্ষেত্রে দুর্বল ও ছোট অর্থনীতির দেশগুলোর অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়বে। বাংলাদেশও এই তালিকার বাইরে নয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৮
জেএম