সরেজমিন বাগেরহাটের রামপালের প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি সুউচ্চ ক্রেন, ড্রেজার মেশিন, পাইপ-রড রাখা। বিশাল নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলায় গোটা এলাকার দৃশ্য পাল্টে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রামপাল উপজেলার রাজনগর ও গৌরম্ভা ইউনিয়নের সাপমারী কৈ-গর্দ্দাশকাঠি মৌজায় বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কাজ করছে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর প্রধান জ্বালানি প্রাকৃতিক গ্যাস। কিন্তু গ্যাসের মজুদ দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আর গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে না।
মূল্য এবং প্রাপ্যতার দিক থেকে বিচার করলে কয়লাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য জ্বালানি। তাই উন্নত দেশগুলো যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন, জাপান, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত তাদের মোট বিদ্যুতের ৪০ থেকে ৯৮ শতাংশ উৎপাদন করে কয়লা দিয়ে। বাংলাদেশে কয়লা দিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ মাত্র ১ শতাংশের সামান্য বেশি (১.৩৩%)। সেই দিক বিবেচনা করে সরকার পশুর নদীর তীর ঘেঁষে রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়।
এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। সার্বক্ষণিক পরিবেশগত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালুসহ প্রকল্প এলাকায় সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২ লাখ বৃক্ষ রোপণ করা হবে।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শনে আসা খুলনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মল্লিক সুধাংশু বাংলানিউজকে বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ আধুনিক কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিশাল কর্মযজ্ঞ দেখে ভালো লাগছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বিদ্যুতের চাহিদা মেটার পাশাপাশি জীবনযাত্রার মান বহুগুণে উন্নত হবে। খুলনা ও মোংলা বন্দরের কর্মতৎপরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান তৈরি হবে। এতে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে।
তিনি আরও বলেন, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সুন্দরবনের দূরত্ব না জেনে শহরে বসে কিছু লোক বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় জনগণ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অতিদ্রুত নির্মাণের অপেক্ষায় আছেন।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কোম্পানি ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেডের প্রকৌশলী অভিষেক দত্ত বাংলানিউজকে বলেন, বিশাল এ কর্মযজ্ঞে ৩০০ শ্রমিক ও বিভিন্ন পর্যায়ের ৫০ জন প্রকৌশলী নিরলসভাবে কাজ করছেন। তাদের কাজে দ্রুত এগিয়ে চলছে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ।
ইতোমধ্যে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়ে মেইন পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রকৌশলী অভিষেক দত্ত আরও বলেন, চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল অবকাঠামো দৃশ্যমান হবে। ২০২০ সালে প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ হবে। তার ছয় মাস পর শেষ হবে দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৮
এমআরএম/এএ