সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক সময় বাংলাদেশ আমদানি নির্ভর দেশ হিসেবে পরিচিতি থাকলেও এখন রফতানিকারক হিসেবেও সুনাম অর্জন করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বৈধ সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলে এখাতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ আরও বাড়বে।
আর বন্দরগুলোতে অবকাঠামোসহ সব ধরনের সুবিধা বাড়াতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলেও জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
সূত্রে জানা যায়, দেশে সর্বমোট অনুমোদিত ২৩টি স্থলবন্দর রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- বেনাপোল, বাংলাবান্ধা, সোনা মসজিদ, হিলি, বিরল, টেকনাফ, বুড়িমারী, আখাউড়া, ভোমরা, দর্শনা, তামাবিল, বিবির বাজার, কোবরাকুড়া-কড়ইতলী, নাকুগাঁও, রামগড়, সোনাহাট, তেগামুখ, চিলাহাটি, দৌলতগঞ্জ, ধানুয়া, শেওলা ও বাল্লা স্থলবন্দর।
তবে এগুলোর মধ্যে সচল রয়েছে ১০টি স্থলবন্দর। সর্বশেষ গত মাসে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর চালু হয়ে চলমান বন্দরের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১টিতে। এর মধ্যে ৬টি সরকারি ব্যবস্থাপনায় আমদানি-রফতানি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাকি ৫টি চলছে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। অন্যান্য ১২টি স্থলবন্দর দিয়ে এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়নি।
স্থলপথে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, মায়ানমার ও নেপালের বাণিজ্যিক কার্যক্রম সচল রয়েছে। বাইরের দেশ থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ। আর রফতানি পণ্যের মধ্যে কাঁচা পাট ও পাটের তৈরি পণ্য উল্লেখযোগ্য।
সূত্র বলছে, ২০১২-১৩ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত গত পাঁচ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৬৪ লাখ ৩৭ হাজার ৯৯৩ মেট্রিক টন পণ্য। এ সময় বাংলাদেশি উৎপাদিত পণ্য ভারতে রফতানি হয়েছে ১৯ লাখ ৫৯ হাজার ৯৮৭ মেট্রিক টন।
সোনা মসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ৯৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮৬৯ মেট্রিক টন, আর রফতানি হয়েছে ২২ হাজার ৪৩৮ মেট্রিক টন।
একই অর্থবছরে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ৫৮ লাখ ৯৪ হাজার ৫১৭ মেট্রিক টন, রফতানি হয়েছে ৬২ হাজার ৩৩৭ মেট্রিক টন পণ্য। বুড়িমারী দিয়ে আমদানি হয়েছে ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার ৯১ মেট্রিক টন, রফতানি হয়েছে ৮ হাজার ৭০৪ ট্রাক পণ্য। আখাউড়া আমদানি ৩৮৪ মেট্রিক টন, রফতানি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন।
কুমিল্লার বিবির বাজার স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ৭৩৮ মেট্রিক টন, যেখানে রফতানি হয়েছে পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ২৮৮ মেট্রিক টন। বাংলাবান্ধায় আমদানি হয়েছে ২৯ লাখ ৩৭ হাজার ৫৭৫ মেট্রিক টন, ১ লাখ ৪৮ হজার ৩৪০ মেট্রিক টন হয়েছে রফতানি। টেকনাফ দিয়ে ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৪০৩ মেট্রিক টন, রফতানি হয়েছে ৩১ হাজার ২৭২ মেট্রিক টন।
সাতক্ষীরার ভোমরা দিয়ে আমদানি ৮২ লাখ ৫৪ হাজার ১০৮ মেট্রিক টন আর রফতানি হয়েছে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৪ মেট্রিক টন। আর নাকুগাও বন্দর দিয়ে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৭৫৮ মেট্রিক টন আমদানি হয়েছে, রফতানি হয়েছে মাত্র ৩৩ ট্রাক পণ্য।
বেনাপোল স্থলবন্দর আমদানি-রফতানি সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিনুল হক বাংলানিউজকে বলেন, স্থল পথে যে পণ্য আমদানি-রফতানি হয় তার ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে শুধু বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে। এক সময় আমরা কেবল আমদানিতে আগ্রহী ছিলাম। এখন রফতানির দিকে ঝুঁকছে।
তবে স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন সমস্যায় আমদানি ও রফতানিকারকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
আমিনুল হক বলেন, বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে হলে ব্যবসায়ীদের বৈধ সুযোগ-সুবিধা ও অবকাঠামো উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বাণিজ্য সম্প্রসারণের কথা বিবেচনা করে সরকার ইতোমধ্যে চার দেশের মধ্যে (ভুটান, বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া ও নেপাল) ট্রানজিট চুক্তি করেছেন। এক্ষেত্রে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।
বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (ট্রাফিক) আমিনুল ইসলাম জানান, বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এছাড়া জায়গা অধিগ্রহণ, সিসি ক্যামেরা ও চোরাচালান প্রতিরোধে স্কানিং মেশিন স্থাপন ও অটোমেশন পদ্ধতি চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যা দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৮
এজেডএইচ/এমএ