ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পণ্য কিনে প্রতারিত হলে যা করবেন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৮
পণ্য কিনে প্রতারিত হলে যা করবেন ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন’ বাস্তবায়নে সহযোগিতা কামনা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের

ঢাকা: বাজার থেকে পণ্য কিনে ভোক্তা প্রতারিত হতে পারেন। অথবা কোনো সেবা গ্রহণ করতে গেলেও প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পণ্য ক্রয় কিংবা সেবা নিতে গিয়ে কেউ যদি প্রতারিত বা জালিয়াতির শিকার হন, তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহায়তা নিতে পারেন।
 
 

পণ্যের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা না থাকা, উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ না থাকা, ভেজাল পণ্য ও ওষুধ বিক্রি করা, ফরমালিনসহ ক্ষতিকর দ্রব্য মিশিয়ে খাদ্যপণ্য বিক্রি করা, ওজনে কম দেওয়া, রেস্তোরাঁয় বাসি-পচা খাবার পরিবেশন ও মিথ্যা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতারণা করা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী অপরাধ। এছাড়া পরিবহন, টেলিযোগাযোগ, পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, জ্বালানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, নির্মাণ, আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে এমন কোনো কাজ করাও অপরাধ।


 
এসব অপরাধ থেকে ভোক্তাকে সুরক্ষা দিতে ২০০৯ সালে সরকার ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন’ চালু করে। প্রতারিত যে কেউ এই আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রতারিত ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নির্দিষ্ট ফরমে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ১ কারওয়ান বাজার, টিসিবি ভবন ৮ম তলা, ঢাকা) বরাবরে আবেদন করতে পারেন। এছাড়া ই-মেইল ও ফ্যাক্সের মাধ্যমেও অভিযোগ করা যাবে। সব অভিযোগ করতে হবে ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যে।     
 
অভিযোগকারীকে তার পূর্ণাঙ্গ নাম, মা-বাবার নাম, ঠিকানা, ফোন-ফ্যাক্স অথবা ই-মেইল আইডি উল্লেখ করতে হবে। একইসঙ্গে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হবে তার নাম, প্রতিষ্ঠানের নাম লিখতে হবে। অভিযোগের সঙ্গে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের রশিদ সংযুক্ত করতে হবে।  
 
ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও রংপুরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের বরাবরে অভিযোগ করা যাবে। এছাড়া, দেশের সব জেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর অভিযোগ করা যাবে।
 
তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। যা সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ড ও তিন লাখ টাকা হতে পারে। অর্থদণ্ডের ২৫ শতাংশ অভিযোগকারীকে দেওয়ার বিধান রয়েছে আইনে।
 
মিথ্যা বা ব্যক্তিগত হয়রানির জন্য কেউ যদি ব্যবসায়ী বা সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, আর তদন্ত সাপেক্ষে তা প্রমাণিত হয়, তাহলে অভিযোগকারীকে অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (গবেষণাগার) প্রণব কুমার প্রামাণিক বাংলানিউজকে বলেন, ভোক্তা অধিকার আইনে কেউ পণ্য ক্রয় কিংবা সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতারিত কিংবা জীবনহানির আশঙ্কা করলে নির্ধারিত ফরমে অভিযোগ করতে পারেন। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে যারা প্রতারণার আশ্রয় নেবেন তাদের বিরুদ্ধে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে।
 
তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষকে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সবার কাছে অনুরোধ যেকোনো প্রতারণার শিকার হলে অবশ্যই ভোক্তা অধিকার আইনে অভিযোগ করবেন।
 
অধিদপ্তরের পরিচালক তওহিদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ প্রণয়নের পর সাতটি বিভাগে ও ৬৪টি জেলায় কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। আইন লঙ্ঘনের দায়ে সর্বোচ্চ ৩ বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা জরিমানাসহ অবৈধ পণ্য ও অবৈধ পণ্য উৎপাদনের উপকরণ বাজেয়াপ্ত করার বিধান রয়েছে।  
 
তিনি বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ৬ হাজার ১৪০টি অভিযোগ পাওয়া যায়। এরমধ্যে ৫ হাজার ৮০৪টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তারমধ্যে ১ হাজার ৪২০জন অভিযোগকারীকে ২৫ শতাংশ হিসেবে ১৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৮
এমএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।