সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার নিত্যপণ্যের দাম বেশি হলেও মৌসুমি শাক-সবজি ও মাছ-মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। ৫৫-৬০ ঘরে ওঠা-নামার পর এ সপ্তাহে ফের বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।
শুক্রবার (০২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, নিউমার্কেটমহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতা এবং ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শুক্রবার ছুটির দিনে সকাল থেকেই সাপ্তাহিক বাজার করতে ভিড় জমাচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ক্রেতারা। মাছ, মাংস ও সবজি কেনার পর যখন পেঁয়াজ কিনতে দোকানে আসেন তখনই ভড়কে যেতে হয়েছে তাদের।
কেউ কেউ তো রীতিমতো তর্কে জড়িয়ে যাচ্ছেন বিক্রেতার সঙ্গেও। তবেও বিক্রেতারাও বলছেন, তাদের কিছু করার নেই। পাইকারীতে দাম বাড়ায় তাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
তবে কাউকে দেখা গেলো ক্রেতাদের নরম সুরে বুঝিয়ে বলছেন- পেঁয়াজের বাড়তি দামের কারণ। বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ১০ টাকা বেড়ে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা সরকারি চাকরিজীবী মো. দেলোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, গত সপ্তাহে দেশি-বিদেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০ টাকা করে। কিন্তু এ সপ্তাহে তা বেড়ে গেছে।
হাতিরপুরল কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা মরম আলী বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের লোকজন প্রায় বলছেন যে পেঁয়াজ ও চালের দাম স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তারা কি বাজারে এসে এসব কথা বলছেন নাকি এমনি বলছেন? প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছেই।
নিউমার্কেট ও হাতিরপুল কাঁচাবাজারের পেঁয়াজের খুচরা বিক্রেতা মহসিন ও সোহেলের ভাষ্য, মোকামে পেঁয়াজ নেই, আমদানিও কম হচ্ছে তাই দাম বাড়চ্ছে। দেশি পেঁয়াজ বাজারে অনেক আগে এলেও তা চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়।
এদিকে গত কয়েকদিনে চালের দামও কমেনি। এরমধ্যে সম্প্রতি চালের দাম নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীরে দেওয়া বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।
বাজারে কেজি প্রতি নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৭০ টাকা, মিনিকেট ৬০-৬২ টাকা, বিআর-২৮ ৫২ টাকা, পারিজা কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকা করে।
নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা শরিফুল ইসলাম বাংলনিউজকে বলেন, চালের দামে স্বস্তি আনতে পারেনি সরকার। যেখানে বাণিজ্যমন্ত্রী নিজে বলেছেন-চালের দাম আর ৪০ টাকার নিচে আসবে না, সেখানে আর বলার কী আছে। তার এ বক্তব্যে এ দাম যেনো স্থায়ী হলো।
‘এতে মনে হচ্ছে- চালের দাম এবছরও আমাদের নাগালের বাইরে থাকবে। এক্ষেত্রে আমরা অসহায়। ’
চালের দাম না কমার বিষয়টি বোঝা গেল খুচরা বিক্রেতা সজিব মিয়ার কথাতেও। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, চালের দাম এখন আর কমবে না, যা আছে তাই থাকবে। ফসল নষ্ট হওয়ার ক্ষতি এখনও পুষিয়ে উঠেনি চাষিরা, ফলে দাম এটাই থাকবে। তবে বোরো মৌসুম আসলে বুঝা যাবে দাম কবে কিনা।
এ দিকে গত দুই সপ্তাহ ধরে সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন ক্রেতারা।
বিক্রেতাদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিকেজি বেগুন ৪০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, মূলা ১৫ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৪০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, আলু ২০ টাকা, বাঁধাকপি ও ফুলকপি প্রতি পিস ২০-২৫ টাকা, লাল শাক, পালং শাক ও ডাটা শাক দুই আঁটি ১৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
অপরিবর্তিত রয়েছে রসুন, চিনি, আদা ও ডালের দাম। বাজারে দেশি রসুন ৮০ টাকা, আমদানি করা রসুন ৮৫ টাকা, চিনি ৫৫-৬০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১০০-১২০ টাকা ও আমদানি করা মসুর ডাল ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মাছ ও মাংসের দামও রয়েছে গত সপ্তাহের মতোই। কাতল মাছ প্রতি কেজি ২২০ টাকা, পাঙ্গাস ১২০ টাকা, রুই ২৩০-২৮০ টাকা, সিলভার কার্প ১৩০ টাকা, তেলাপিয়া ১৩০ টাকা, শিং ৪০০ টাকা ও চিংড়ি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতিকেজি গরুর মাংস ৪৫০-৫০০ টাকা, খাসির মাংস ৭০০-৭৫০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগি ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সোনালি মুরগি প্রতি পিস সাইজ অনুযায়ী ১৫০-২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৮
এমএসি/এমএ