ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সোনামসজিদ স্থলবন্দরে বেড়েছে শুল্ক আদায়

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৫ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৮
সোনামসজিদ স্থলবন্দরে বেড়েছে শুল্ক আদায় সোনামসজিদ স্থল শুল্ক বন্দরের সহকারী কমিশনার মো. সোলাইমান হোসেন। ছবি: ডিএইচ বাদল

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঘুরে: পদ্মাসেতুসহ সরকারি বড় বড় প্রকল্প নির্মাণে ব্যবহৃত পাথরের সিংহভাগ আসছে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে। আর এসব পাথর আমদানির অন্যতম রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর। এ বন্দরে কিছু সৎ কর্মকর্তার কারণে অনেকটা বন্ধ হয়েছে শুল্ক ফাঁকি। বেড়েছে শুল্ক আদায়।

এই বন্দর ভারতের মালদাহ’র ফল আমদানির জন্য জনপ্রিয় ছিল। গার্মেন্টস পণ্য, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ অন্য পণ্যও পরিবহন করা হতো।

এক সময় দিনে সাড়ে ৩শ ট্রাক এলেও এখন গড়ে আড়াইশর মতো ট্রাক আসছে। এরমধ্যে অধিকাংশই থাকে পাথরবোঝাই।

আশার কথা বন্দরের শুল্ক আদায় আগের চেয়ে বেড়েছে। একসময়  অসাধু ব্যবসায়ীরা ২০ টন ফল আমদানি করলেও শুল্ক দিতো ১০ টন  বা ১৫ টনে। আর ২০ কার্টন কাপড় আনলে বিভিন্ন মাধ্যমে ১০ কার্টনই দিতো শুল্ক ফাঁকি।

এখন সোনামসজিদ স্থলবন্দরের বাংলাদেশ সীমান্তের গেটেই শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। সেখানেই একজন সার্বক্ষণিক বসে চালানের কপি মিলিয়ে একটি একটি করে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হচ্ছে। চালান ছাড়া কোনো ট্রাকই প্রবেশ করতে পারছে না। আর এই কাজে সহায়তা করছে বিজিবি। সোনামসজিদ স্থলবন্দর।  ছবি: ডিএইচ বাদলশুধু তাই নয়, ট্রাকটি  বাংলাদেশে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তিন দফা ডিজিটাল স্কেল লোডারে দিয়ে পরীক্ষা করানো হচ্ছে তার ওজন। কোথাও কারও চোখ ফাঁকি দিয়ে বের হওয়ার সুযোগ নেই।

শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে ভারতের পাথরবাহী ট্রাক এসেছে ৫ হাজার ৬১১টি। এতে প্রতি ট্রাকে গড়ে ৩৪ দশমিক ৪৬ মেট্রিক টন পাথর এসেছে। আর এই সময়ে শুল্ক আদায় হয়েছে ১৪ কোটি ৭৫ লাখ ৩০ হাজার ২৩ টাকা। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের একই মাসে পাথরবাহী ট্রাক ঢুকেছে মাত্র ২ হাজার ৭টি, আর তাতে পাথর এসেছে ৪৫ দশমিক ৪৯ মেট্রিক টন, এতে শুল্ক আদায় হয়েছে ৬ কোটি ৯৬ লাখ ৪৬  হাজার ৯১৪ টাকা। এতে স্পষ্ট ট্রাকের সংখ্যা কমলেও বেড়েছে শুল্ক আদায়। এর অন্যতম কারণ শুল্ক ফাঁকি জিরো পয়েন্টে নিয়ে আসা।

২০১৭ সালের মার্চ মাসে ১৫টি ট্রাকে জিরা আমদানিতে শুল্ক আদায় হয়েছে ট্রাকপ্রতি ১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। অর্থাৎ, ১৫টি ট্রাকে শুল্ক আদায় হয়েছে ২৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। আর ২০১৮ সালে ৭টি ট্রাকে প্রতিটি ট্রাকে গড়ে শুল্ক আদায় হয়েছে ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ৯৯৪ টাকা করে ১ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৯৫৯ টাকা। সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ট্রাকে মালামাল তোলা হচ্ছে।  ছবি: ডিএইচ বাদলফল ও অধিক শুল্কের পণ্যের দিকে তাকালে দেখা যাবে অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ন্য কত কমেছে। ২০১৭ সালে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে যেসব ফল আনা হয়েছে তার তালিকায় রয়েছে আঙুর ২ হাজার ১৩৬ দশমিক ০৯ মেট্রিক টন ও কমলা ১ হাজার ৮৬৮ মেট্রিক টন। এতে রাজস্ব আদায় হয়েছে শুধু আঙুরেই ৮ কোটি ৩৮ লাখ ৫১ হাজার ২৫৫ টাকা ৩৬ পয়সা। আর কমলায় ৪ কোটি ৫০ লাখ ১০  হাজার ৯৩৮ টাকা ৫৭ পয়সা।

তবে ২০১৮ সালের আমদানি তালিকায় একটি আঙুর, কমলা, আপেলও এই বন্দর দিয়ে প্রবেশ করেনি। এরকম কাপড়সহ আরও কিছু মূল্যবান পণ্য আসা বন্ধ করে দিয়েছে। পণ্য পরিবহন কমলেও শুল্ক  বাড়লো কীভাবে- এমন প্রশ্নে সোনামসজিদ স্থল শুল্ক বন্দরের সহকারী কমিশনার মো. সোলাইমান হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আগে ছোটখাটো দু’একটি ছিদ্র দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য পরিবহন করতো। অধিক পণ্য লেনদেনেও শুল্ক আসতো না। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কোনো পণ্যেই শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। যে কারণে এখন যে ট্রাকই বাংলাদেশে ঢুকবে তার সঠিক ওজন পরিমাপ করায় পণ্য বেড়েছে।

অবকাঠামোগত কিছু সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানো গেলে শুল্ক আদায় আরও বাড়ানো যেতো বলে মনে করেন সোলাইমান হোসেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৪৩ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১৮
এসএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।