এ লক্ষ্যে ‘স্টেট অব বাংলাদেশ ইকোনমি অ্যান্ড আপ কামিং ন্যাশনাল ইলেকশন’স প্রায়োরিটিস ফর ইলেক্ট্রাল ডিবেটস’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। রোববার (০৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এসময় সিপিডি’র ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সাংবাদিকেদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, গত ১০ বছরে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। অর্থনীতির ব্যাপ্তি বিস্তৃত হয়েছে। বিনিয়োগ বেড়েছে। জ্বালানী খাতে বড় বিনিয়োগের ফলে আমূল পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতেও বিপুল বিনিয়োগ এসেছে। এক কথায় দেশের অর্থনীতির ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে।
তিনি বলেন, অর্থনীতির এই উন্নতি নিষ্কলুষভাবে যে হয়েছে তা কিন্তু নয়। অর্থনীতির এই উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুণমত অবনমন হয়েছে। বিভাজিতভাবে বৈষম্যের ধারা দ্রুততম হয়েছে। সরকারের নতুন উদ্যোগ ও উদ্যোম গ্রহণের ক্ষেত্রেও ঘাটতি দেখা গেছে। বিশেষ করে ২০১৪-১৫ সালের পর থেকেই এই ধারা লক্ষ্য করা গেছে।
এই নেতিবাচক ধারা সম্পর্কে ড. দেবপ্রিয় বলেন, এর কারণ নতুন উদ্যোক্তা তৈরি না হওয়া এবং কর্মসংস্থানের অভাব। যা তৈরি হয়েছে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা কমে যাওয়া, রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা না থাকা ও অর্থনীতির গুণগতমানের পতন হওয়ায় এটা হয়েছে।
একই সময়ে অর্থনীতির ভালো ও মন্দ দুই রূপ তুলে ধরাই সিপিডি’র এ গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিলো বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, নির্বাচন আসন্ন। অথচ এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অর্থনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো আলোচনা শুরু হয়নি। এটা উদ্বেগের বিষয়। এজন্যই এ আয়োজন।
‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতির যে কার্যক্রম, তাতে মূল দলগুলোর অর্থনৈতিক দর্শন প্রায় সমান। পার্থক্য কেবল কী পদ্ধতিতে অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। তাই আমরা চাই এবারের নির্বাচন উপলক্ষে দলগুলো তাদের ইশতেহারে ঘোষণা দিক কিভাবে তাদের ভিশন বাস্তবায়িত হবে। বাস্তবায়নের জন্য কী প্রাতিষ্ঠানিক পরিকাঠামো হবে তাও তাদের বলতে হবে। ’
তিনি বলেন, এইসব কথা বলার মানে এই নয় যে, যতোটুকু উন্নয়ন হয়েছে, তাকে ছোট করা। উন্নয়ন হয়েছে। সামগ্রিক ভাবেই হয়েছে। তবে বিভাজিত বৈষম্যও তৈরী হয়েছে ব্যাপক। তা শহর ও গ্রামের মধ্যে যেমন, তেমনি নারী ও পুরুষের মধ্যে, বয়স্ক ও তরুণের মধ্যে, সংখ্যালঘুর মধ্যে, ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ইত্যাদি।
এখন প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখে বৈষম্য কমাতে হবে বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।
সিপিডির এই ফেলো বলেন, এজন্য বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াতে হবে। তা যেমন ব্যক্তি পর্যায়ে, তেমনি সরকারি পর্যায়েও। কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। শ্রমঘন শিল্পায়ন লাগবে। কেবল তা রফতানির জন্য নয়। স্থানীয় বাজারের জন্য শিল্পায়ন প্রয়োজন। কৃষিপণ্যের প্রণোদনা দিতে হবে। কৃষিভিত্তিক শিল্পায়ন ঘটাতে হবে। কৃষিতে আধুনিকায়নের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াতে হবে। লাইভস্টক ও ফিশারিতে সম্ভাবনা তৈরি করে কাজে লাগাতে হবে। মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতের মাধ্যমে শিক্ষিত মানুষের কর্মসংস্থান ঘটাতে হবে। স্বাস্থ্যখাতে বৈষম্য কমাতে হবে। ভৌত অবকাঠামো সহজলভ্য করতে হবে। কী দামে অবকাঠামো সুযোগ ও জ্বালানি ব্যবহার করা যাচ্ছে, সেদিকেও নজর দিতে হবে। কর আহরণ বাড়াতে হবে। কেবল আয়করের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে সম্পদের ওপর কর আরোপ শুরু করতে হবে। জ্বালানি খাতে ক্রস ব্রিডিং করতে হবে। এলএনজির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। ব্যাংকিংখাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। রেমিটেন্স প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।
প্রকল্পগুলোতে বাস্তবায়ন ব্যয় কমিয়ে তা বাস্তসম্মত করার পরামর্শ দিয়ে ড. দেবপ্রিয় গত সময়ের বিচ্যুতিগুলো সংশোধনের কথাও বলেন।
তিনি এও বলেন, বর্তমান অবস্থায় নির্বাচনী ব্যয় এখন অনেক যোগ্য ও সৎ প্রার্থীকে নির্বাচনের বাইরে রাখছে। এটা নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কিনা তাও ভাবার সময় এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৮/আপডেট: ১৬৫০ ঘণ্টা
আরএম/এমএ