এসব কিছু মিলে দেশের সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। খেলাপি ঋণের পরিমাণ, ঋণ অবলোপন ও নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি নিয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা সর্বকালের মধ্যে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির বিষয়টি ব্যাংকার ও বিশেজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সেপ্টেম্বর শেষে সরকারি ছয় ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৪ শতাংশ, যা টাকার হিসাবে ২৫ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকায়। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা ।
আর পুনঃতফসিল ও অবলোপন করা ঋণ যোগ করা হলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেড়লাখ কোটি টাকার ঘরে পৌঁছায়। একই সময়ে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ২০ শতাংশ বা ১ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সার্বিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি ঘাটতির পরিমাণ ৮ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রবিধান অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে সাধারণ মানের ঋণের বিপরীতে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত নিম্নমানের ঋণের জন্য ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ ও আদায় অযোগ্য ঋণের জন্য ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, খেলাপি ঋণের ক্রমবর্ধমান ধারা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। যে কারণে খেলাপি ঋণের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে যাচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সম্প্রতি সিপিডি দেশের ব্যাংক খাত থেকে ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা লোপাটের তথ্য প্রকাশ করায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এ উদ্বেগ ও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখাতে আগামীতে নতুন সরকারকে খেলাপি ঋণ ইস্যুকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমলে নিতে হবে। কারণ, ‘দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে সমস্যা হলে সমগ্র অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ’
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতা নেওয়ার সময় খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়াদে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৬ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। এ সময়ে অবলোপন করা হয়েছে ৩৪ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার ঋণ।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৮
এসই/ওএইচ/