চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাগজে-কলমেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে।
বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ঋণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভায় এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতি মাসেই সরকারি ব্যাংকগুলো নিয়ে সভা করা হয়। আর দুই মাস পরপর বেসরকারি ব্যাংক নিয়ে সভা হয়ে থাকে। আজ আমাদের সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক চার ব্যাংকের সঙ্গে সভা হয়েছে। সভায় খেলাপি ঋণ আদায়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ঋণ আদায়ে আগামী বছরের জন্য একটি পরিকল্পনা চাওয়া হয়েছে। যা বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য।
তিনি বলেন, বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের ঋণ সবচেয়ে বেশি। তাই তাদের ওপর চাপও বেশি। চাপ দেওয়া হলে আদায় কিছুটা বাড়ে। তবে মামলার কারণে ঋণ আদায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে খেলাপি ঋণ আদায় হয় না। এজন্য সভায় ব্যাংকাররা ঋণ আদায়ে হাইকোর্টে রিট করা কমাতে ব্যবস্থা নিতে ও একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়দুল্লা মাসুদ বলেন, বাংলাদেশ আগের অবস্থানে নেই। বর্তমানে ব্যাংকিংখাতে সাড়ে ৮ লাখ কোটি টাকার ঋণ। এর মধ্যে খেলাপি রয়েছে এক লাখ কোটি টাকা। এবছর আদায় হয়েছে মাত্র ২৭ হাজার কোটি টাকা। এজন্য সভায় আমাদের কাছে খেলাপি ঋণ আদায় বাড়াতে একটি পরিকল্পনা চাওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, খেলাপি ঋণ বিষয়ে সমাধান করাটা একটু কঠিন। খেলাপি ঋণ ব্যাংকিংখাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা। তবে ১০ শতাংশের নিচে রাখাটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এজন্য খেলাপি ঋণ কীভাবে আদায় করা যায় এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৯৯ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ, যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ। গত জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৯ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। একে খুবই উদ্বেগজনক বলেছেন অর্থনীতিবিদরা।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করেছে ১ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৮ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে, যা মোট ঋণের প্রায় ২৩ শতাংশ। একই সময়ে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৬ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৩ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে, যা মোট ঋণের ৬ দশমিক ৫৮ ভাগ।
সব মিলিয়ে প্রকৃত খেলাপি বা মন্দ ঋণ প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সাম্প্রতিক সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বাড়ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে, এর মধ্যে বেসিক ব্যাংকে জালিয়াতি হওয়ায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রায় সবটাই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। জনতা ব্যাংকে বড় ধরনের জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বেরিয়ে গেছে। এসব টাকাও এখন খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে। অন্য দু’টি ব্যাংকেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বছরের শুরুর দিক থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়তে থাকে। ডিসেম্বরে এসে এর পরিমাণ কমে যায়। তখন ব্যাংকগুলো নিজ নিজ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য খেলাপি ঋণ আদায় বা নবায়ন করে এর পরিমাণ কমাতে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৮
জিসিজি/জেডএস