মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিলেও নাভিশ্বাস ওঠেছে সাধারণ আয়ের ক্রেতাদের জীবনে। তাদের কাছে চালের বাড়তি দাম নতুন দুর্ভোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অবশ্য চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দাম বাড়ানোর পেছনে মিলাররা ধানের দামের ঊর্ধ্বগতিকেই দায়ী করেছেন। ফলে চাল নিয়ে চলছে চালবাজি।
শনিবার (১২ জানুয়ারি) রাতে ময়মনসিংহ শহরের হেজবুল্লাহ সড়কের পাইকারি চালের আড়ৎ ঘুরে চালের দাম বাড়ার এসব কারণ জানা গেছে।
পাইকারি আড়তদাররা জানান, নির্বাচনের আগেই মিল মালিকরা চালের মজুদ গড়ে তুলেন। তারা ওইসময় বাজারে কোনো চাল ছাড়েননি। এতে করে বাজারে চালের সরবরাহ কমে আসে।
ভোটের পর পরই তারা প্রতি বস্তায় ১৩০ থেকে ১৭০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছেন। ফলে আড়তদাররা নিজেরাও বস্তাপ্রতি আরো ২০ থেকে ৩০ টাকা লাভে চাল বিক্রি শুরু করেন।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনের আগে বাজারে ওঠা ৪৯ চাল বিক্রি হয়েছে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ১ হাজার ৫শ’ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায়। এখন সেই চালের দাম গিয়ে ঠেকেছে ১ হাজার ৬৫০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা।
বিআর (২৮) ৫০ কেজি ওজনের ১ হাজার ৭৫০ টাকার প্রতি বস্তা এখন ১ হাজার ৯শ’ থেকে ১ হাজার ৯৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ৩৫ টাকা কেজির চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৯ টাকা কেজিতে। আবার খুচরা বাজারেই এ চাল কিনতে হচ্ছে কেজিপ্রতি আরো ৫ থেকে ৬ টাকা বেশিতে।
শহরের বাঁশবাড়ি কলোনী এলাকায় থাকেন রিকশাচালক সাইফুল ইসলাম (৩৫)। ৪ সদস্যের সংসার চালাতে প্রতিদিন তাকে দুই থেকে আড়াই কেজি চাল কিনতে হয়। এজন্য গড়ে তাকে ১শ’ টাকার ওপরে গুণতে হয়।
এর সঙ্গে শাকসবজিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পেছনে খরচ তো আছেই। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিক্রেতারা নিজেদের মতো করে দাম বাড়াচ্ছেন। এতে করে আমাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে।
বাজারে নতুন করে চালের দাম বেশি হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স বিমল ট্রেডার্সের মালিক বিমল পাল বাংলানিউজকে জানান, ভোটের আগে মিলাররা বাজারে চালের সরবরাহ কমিয়ে দেন। তারা কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করেন।
ফলে নির্বাচনের পর পরই চালের দাম কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা করে বেড়ে যায়। এতে করে তারা বাড়তি মুনাফাও হাতিয়ে নিয়েছেন।
একই বাজারের আরেকটি আড়তের ম্যানেজার ফিরোজ হোসাইন মিলন বাংলানিউজকে জানান, মিলারদের অজুহাতের কোনো শেষ নেই। তাদের কারণেই চালের বাজার চড়া হয়ে ওঠেছে। তারা বস্তাপ্রতি ১৩০ থেকে ১৭০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
তারা ধানের দাম বাড়তি বা সঙ্কটের কথা বললেও আদতে তাদের কাছে পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
মিলারদের কাছে আড়তদাররা জিম্মি বলে অভিযোগ করেন ময়মনসিংহ জেলা চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কাজিম উদ্দিন কাজল। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘চালের বাজার নিজেদের কব্জায় নিয়ে মিলাররা নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন।
তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার পর চালের বাজারের লাভ-লোকসান নির্ভর করে। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা শক্তিশালী হলে মিলাররা এ অবৈধ সুবিধা নিতে পারতো না। ’
শহরের হেজবুল্লাহ সড়কে একটি আড়তে বসেই কথা হলো স্থানীয় শম্ভুগঞ্জ এলাকার মিল মালিক আজাদ রহমানের সঙ্গে।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সপ্তাহ দুয়েক আগেও এক মণ ৪৯ ধান ৭শ’ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকায় কেনা সম্ভব হয়েছে। এখন একই ধান কিনতে গুণতে হচ্ছে ৮২০ থেকে ৯০০ টাকা।
এ মিলার দাবি করেন, ধান থেকে চাল তৈরিতে বস্তাপ্রতি একশ’ টাকা খরচ রয়েছে। এর সঙ্গে পরিবহন ব্যয়, শ্রমিক খরচাসহ আনুসাঙ্গিক নানা খরচের কারণে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৯
এমএএএম/আরবি/