৩০ জানুয়ারি (বুধবার) দেশের আর্থিক খাতের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রস্তুত করা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে।
ওই দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে বেলা সাড়ে ১১টায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্যে এ মূদ্রানীতি ঘোষণা করবেন গর্ভনর ফজলে কবির।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পর এটি হবে প্রথম মুদ্রানীতি ঘোষণা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তার প্রতিফলন ঘটতে যাচ্ছে এবারের মুদ্রানীতিতে।
মূদ্রানীতি ঘোষণার আগে মুদ্রানীতি নিয়ে রোববার (২৭ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের একটি বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে সভাপতিত্বে করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ফজলে কবির। মুদ্রনীতি প্রণয়ন কমিটি পর্ষদ সভায় মুদ্রানীতির পাশাপাশি অন্যান্য মূলনীতি নিয়েও আলোচনা করা হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অর্থনৈতিক খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে একটি বাস্তব মুদ্রানীতি গঠন করা হয়ছে। দেশে সর্বত্র চাকরির সুযোগ তৈরিতে সহায়তা করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলি (এমএসএমইএস) এবং কৃষিঋণকে ক্ষুদ্রঋণসহ ঋণপ্রবাহ বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, মুদ্রানীতিতে সিআরআর (নগদ রিজার্ভের প্রয়োজনীয়তা), রেপো এবং রিভার্স রেপোসহ অন্যান্য রেটগুলো ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে অপরিবর্তিত থাকে সেইভাবে কাজ করতে বলেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
এবারের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ বৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা পুনর্নির্ধারণ করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের ঘাটতি বাজেটের জন্য তহবিলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ২০ শতাংশে নেমে আসে। আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ কম হয়েছে। তবে ২০১৯ সালের জুন শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ অতিক্রম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতির উর্ধ্বমূখী প্রবণতা দেখা দেওয়ার কারণে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে মুদ্রাস্ফীতির বিষয়ে সতর্কতার অবস্থান বজায় থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের আভাস পাওয়া গেছে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। একমাস আগে নভেম্বরেও মূল্যস্ফীতি ছিল ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি পরিমাপ করে থাকে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) থেকে অ-খাদ্য এবং অ-জ্বালানি উপাদান বাদ দিয়ে।
এবারের মুদ্রানীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা এবং অর্থবাজারের পাশাপাশি পুঁজিবাজারের সর্বশেষ পরিস্থিতি পরবর্তীতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নজরদারি এবং তত্ত্বাবধান শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে মুদ্রানীতিতে ঋণের গুণমান নিশ্চিত করতেও জোর দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এছাড়াও ঋণ বিতরণে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে করণীয় বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, দেশের আর্থিক খাতের শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ কাঠামো তৈরি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সবসময় বাংলাদেশ ব্যাংক সচেতন। মুদ্রানীতিতে এসব বিষয়ে বিস্তারিত দিক-নির্দেশনা ও পরামর্শ থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৯
এসই/এমজেএফ