ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

লিচু থেকে মধু চাষ, অল্পতেই মুনাফা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৯
লিচু থেকে মধু চাষ, অল্পতেই মুনাফা লিচু গাছের নিচে মৌ-বাক্স। ছবি: বাংলানিউজ

দিনাজপুর: দিনাজপুর জেলার ৫টি উপজেলায় লিচু গাছ থেকে মৌচাষ দিন দিন বেড়েই চলেছে। লিচু চাষের পাশাপাশি মৌচাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। 

অল্প সময়ে লিচু ও লিচুর মুকুল থেকে মৌচাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার মধু রপ্তানি হচ্ছে রাজধানী ঢাকায়।  

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর ২০ মেট্রিক টনের বেশি মধু সংগ্রহ করা হয়েছে।

লিচু বাগানের ভেতরে মধু চাষের ফলে মৌমাছির মাধ্যমে মুকুলে মুকুলে পরাগায়ন ঘটানোয় লিচু চাষিরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন।
  
দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার কাজীপাড়া, মাধবপুর, ঢেরাপাটিয়া চিরিরবন্দর তেঁতুলিয়া গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তার দু’পাশে বিস্তীর্ণ লিচুর বাগান। আর লিচু বাগানের লিচু গাছের গোড়ায় বসানো হয়েছে মৌ-বাক্স।  

এভাবে মধু চাষ করে স্বল্প পরিশ্রম ও কম খরচে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। একদিকে লিচুর মকুল থেকে মধু পাওয়া যাচ্ছে, অন্যদিকে মৌমাছির মাধ্যমে পরাগায়নের ফলে লিচুর ফলনও বেশি হচ্ছে।  

বেশি পরিমাণে মধু পাওয়ায় জেলায় মধুর চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও সরবরাহ করছেন চাষিরা। এবছর ২০ মেট্রিক টনের বেশি মধু সংগ্রহ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। অন্যবারের তুলনায় এবার মৌচাষ করে বেশি লাভবান হয়েছেন কৃষকরা।  

প্রথমে পরীক্ষামূলক দিনাজপুর সদর উপজেলায় মৌচাষ করা হলেও ধীরে ধীরে অন্য ৪টি উপজেলা চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জ, খানসামা ও বিরলে মৌচাষ শুরু হয়েছে। আগামীতে জেলার অপর ৮টি উপজেলায়ও মৌচাষ শুরু করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কৃষক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
 
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে দিনাজপুর সদর উপজেলায় ৮২০টি বাক্সে ৪ মেট্রিক টন ১০০ কেজি, চিরিরবন্দরে ৬০৬টি বাক্সে ৩ মেট্রিক টন ৩০ কেজি, বীরগঞ্জে ১৬০টি বাক্সে ৮০০ কেজি, বিরলে ২১ হাজার ৭০টি বাক্সে ১০ মেট্রিক টন ৫৩৫ কেজি এবং খানসামা উপজেলার ২৮৬টি বাক্সে দেড় মেট্রিক টনের বেশি মধু সংগ্রহ করা হয়েছে।  

লিচু গাছের নিচে মৌ-বাক্স।  ছবি: বাংলানিউজবিরল উপজেলার কাজীপাড়ার লিচু ও মধুচাষী জয়নাল আবেদীন বাংলানিউজকে বলেন, আমি এ বছর পাশ্ববর্তী দিনাজপুর সদর উপজেলার একটি লিচু বাগান থেকে শিখে নিজেও মধু চাষ শুরু করেছি। আমার লিচুর বাগানের জন্য এবছর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাকে স্বল্প খরচে মৌচাষের জন্য বিভিন্ন ধরনের উপকরণ সরবরাহ করেছেন এবং মধু চাষের ওপর প্রশিক্ষণও দিয়েছেন। এখন আমার অধীনে ৬ জন যুবক মৌচাষের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন।  

ঢাকার এক মধু ব্যবসায়ী আমার কাছ থেকে মধু নিয়ে গেছেন, দামও ভাল পেয়েছি। খাঁটি এ মধু আমি কেজিতে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। লিচু চাষের পাশাপাশি মধু চাষ করে আমি দ্বিগুণ লাভবান হচ্ছি।  

চিরিরবন্দর উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের চাষি সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় টানা ৩ বছর আমি মধু চাষ করে লাভবান হয়েছি। এবছরও আমি অনেক লাভে মধু বিক্রি করছি। আমার দেখাদেখি আশপাশের গ্রামের অনেক কৃষক পরামর্শ নিচ্ছেন। আমি তাদের লিচু গাছ থেকে মধু চাষ সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছি ও কৃষি কর্মকর্তার কাছে পরামর্শ নিতে বলছি।  

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইকবাল বাংলানিউজকে জানান, লিচু থেকে মৌচাষ পদ্ধতিটি জেলায় সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার টার্গেট রয়েছে।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা জেলার ৫টি উপজেলা দিনাজপুর সদর, বিরল, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর, খানসামায় প্রায় ১০টির বেশি মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছেন। স্থানীয় কৃষকদের অংশগ্রহণে মৌচাষ সম্পর্কে অভিজ্ঞদের এনে মাঠ দিবস পালন করা হয়েছে।  

আগামীতে জেলার অপর ৮টি উপজেলায় লিচু থেকে মৌচাষ পদ্ধতি ছড়িয়ে দেওয়া হবে। যাতে দরিদ্র কৃষকরা অধিক লাভবান হতে পারেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।