ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মিলগেটে চিনির দাম কমলেও কমেনি পাইকারি-খুচরা বাজারে

গৌতম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৬ ঘণ্টা, মে ১, ২০১৯
মিলগেটে চিনির দাম কমলেও কমেনি পাইকারি-খুচরা বাজারে গুদামে থরে থরে সাজিয়ে রাখা চিনির বস্তা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে মিলগেটে চিনির দাম কমলেও কমেনি পাইকারি ও খুচরা বাজারে। এক মাস ব্যবধানে প্রতিকেজি চিনি কিনতে ক্রেতাদের বেশি দিতে হচ্ছে ৪ থেকে ৫ টাকা।

রোজায় অত্যাবশ্যকীয় এই পণ্যটি ক্রেতাদের প্রতিকেজি ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা দিয়ে নিতে হচ্ছে। অথচ মিলগেটে বিক্রি হচ্ছে ৪৭ দশমিক ৫০, আর পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০দশমিক ৫১ টাকায়।

এতে অসুবিধায় পড়ছে নিম্নআয়ের মানুষ।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে একই দরে বিক্রি হয়ে আসছে চিনি। গত রোজায় পণ্যটির দর তেমন হেরফের হয়নি। পরিশোধিত চিনি রফতানিও করেছে কোম্পানিগুলো।

হঠাৎ করে গত সপ্তাহে চিনির দাম কেজিতে দুই টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন অসাধু ব্যবসাযীরা। খুচরা ব্যবসায়ীরা কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা দাম বাড়িয়ে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা দরে চিনি বিক্রি করছেন।  দু’দিন আগে পাইকারিতে চিনির দাম কেজিতে দুই টাকা কমিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫১ টাকা। যা গত সপ্তাহে ব্র্যান্ডভেদে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হয়েছিল ৫২ থেকে ৫৩ টাকা। পাইকারি বাজারে দুই টাকা কমালেও খুচরা বাজারে কমেনি এক টাকাও।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর পাইকারি-খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললে এ তথ্য  উঠে আসে।

পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি আড়ত ঘুরে দেখা যায়, বাজারে তীর ব্র্যান্ডের ৫০ কেজির বস্তা চিনি বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৫০০ টাকা। যা আগের সপ্তাহে ছিল দুই হাজার ৬০০ টাকা। সে হিসেবে প্রতিকেজির দাম পড়ে  ৫০ টাকা। ফলে সপ্তাহ ব্যবধানে পাইকারি বাজারে দাম কমেছে দুই টাকা।  

ফ্রেস ব্র্যান্ডের ৫০ কেজির প্রতিটি বস্তা চিনি বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৫৫০ টাকা। যা আগের সপ্তাহে ছিল দুই হাজার ৬০০ টাকা। সে হিসেবে প্রতিকেজির দাম পড়ে  ৫১ টাকা। ফলে সপ্তাহ ব্যবধানে পাইকারি বাজারে দাম কমেছে ১ টাকা। আর দেশবন্ধু ব্র্যান্ডের ৫০ কেজির প্রতিটি বস্তা চিনি বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৪৯০ টাকা।  

যা আগের সপ্তাহে ছিল দুই হাজার ৬০০ টাকা। সে হিসেবে প্রতি কেজির দাম পড়ে  ৪৯ দশমিক ৯০ টাকা। ফলে সপ্তাহ ব্যবধানে পাইকারি বাজারে দাম কমেছে ২ দশমিক ১০ টাকা। আর মিলগেটে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪৭ দশমিক ৫০ টাকায়। প্রতি বস্তা চিনির দাম পড়ে ২৩৭৫ টাকা। যা এক মাস আগে ছিল ২৪২৫ টাকা। সে হিসেবে কেজিতে দাম কমেছে এক টাকা।

এদিকে বর্তমানে খুচরায় প্রতিকেজি চিনি ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়া প্যাকেটজাত প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা। যা আগের সপ্তাহে ছিল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। আর দেশি আখের চিনি ৬৫ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা।

মৌলভীবাজারের মেসার্স নিউ ইয়াসিন অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী সেলিম শেখ বাংলানিউজকে বলেন, গত দু’দিনে চিনির দাম ব্র্যান্ডভেদে বস্তায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা কমেছে। দাম উঠা-নামার পেছনে আমাদের কারো হাত নেই। দাম বাড়ে কমে মিলগেটে। সেখান থেকে সাপ্লাই দিতে দেরি করলে বাজারে সংকটসহ পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। আমরা পণ্যের দামও বাড়িয়ে দেই। এজন্য সাপ্লাই চেইন ভালো থাকলে দামও স্থিতিশীল থাকে। গত দু’দিন আগে সিটিগ্রুপ বাজারে চিনি ছেড়েছে তাই দামও কমেছে।

সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বাংলানিউজকে বলেন, চিনির দাম এখন কিছুটা কমানো হয়েছে। আমরা এক মাস আগে চিনির দাম সমন্বয় করছি। বর্তমানে মিলগেটে প্রতিকেজি চিনি ৪৭ দশমিক ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগে এ দাম ছিল ৪৮ দশমিক ৫০ টাকা। সে হিসাবে আমরা এক টাকা দাম কমিয়েছি। আর এটা পাইকারি ব্যবসায়ীরা ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ৪৮ টাকা বিক্রি করবে এটাই নিয়ম। যদি তারা এর থেকে বেশি দামে বিক্রি করে তাহলে তারা ভোক্তাদের ঠকাচ্ছে।


বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রোজাকে সামনে রেখে ছয় পণ্য আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রোজায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় এমন ছয়টি পণ্য হচ্ছে- ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ ও খেজুর। রোজায় এসব পণ্যসামগ্রীর কোনো সঙ্কট তৈরি না হয়, সেলক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি নিয়মিত বাজার তদারকি করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও। কারসাজি করে দাম বাড়ানোর কৌশল নেওয়া হলে অপরাধী ব্যবসায়ীকে এবার পেতে হবে কঠোর শাস্তি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, রোজা উপলক্ষে গত বারের মতো এবারও আমাদের মজুদ পরিস্থিতি খুব ভালো। রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে সেগুলোর মজুদ আরও বাড়ানো হচ্ছে। ওই সময়ের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে আমদানি বাড়ানোসহ যা করণীয় সরকারের পক্ষ থেকে সব করা হবে। এছাড়া এবার সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা টিসিবির কার্যক্রম আরও বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে প্রায় ১৫ লাখ টন চিনির বার্ষিক চাহিদা রয়েছে। রোজায় তিন লাখ টন চাহিদা দাঁড়ায়। এর মধ্যে দেশে প্রায় ৬৫ হাজার ৫৬২ টন চিনির উৎপাদন হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চিনি আমদানি করে ঘাটতি পূরণ করতে হয়।  

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য মতে, ঘাটতি পূরণে ব্যবসায়ীরা গত ২০১৭-১৮ সালের অর্থবছরে প্রায় ২৫ লাখ টন চিনি আমদানি করে। সে হিসাবে গত অর্থবছরে আমদানি করা চিনির মজুদ রয়েছে নয় লাখ টন। এছাড়া চলতি ২০১৮সাল ও চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) সাড়ে আট লাখ টন চিনি আমদানি হয়েছে। এ মুহূর্তে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি চিনির মজুদ রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৯
জিসিজি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।