ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অসাধুদের কারসাজিতে বেড়েছে চিনি-পেঁয়াজের দাম

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫০ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৯
অসাধুদের কারসাজিতে বেড়েছে চিনি-পেঁয়াজের দাম

ঢাকা: তিন দিন পরই শুরু হবে মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস রমজান। আর এ রমজানকে ঘিরে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় অত্যাবশ্যকীয় কিছু পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি বলে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। 

দাম বাড়া পণ্যের তালিকায় রয়েছে- চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, আলু। সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যগুলোর দাম পাঁচ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।

প্রতিকেজি চিনি, পেঁয়াজ, আলুতে পাঁচ টাকা, আদা, রসুনে ২০ টাকা দাম বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে সবধরনের মাছের দাম। প্রতিকেজিতে ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা বেড়েছে।  

তবে এতোদিন অস্বস্তি দেয়া ডিম, তেল, সবজি ও মাংসের দাম কমেছে। মাংসের দাম কেজিতে ১০ থেকে ৫০ টাকা কমেছে। আর ৪০ থেকে ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে সবধরনের সবজি। অপরিবর্তত রয়েছে চাল, ডাল, লবণসহ বেশিরভাগ মুদি পণ্যের দাম।

শুক্রবার (৩ মে) রাজধানীর নয়াবাজার, রায়সাহেব বাজার, সূত্রাপুর বাজার, শ্যামবাজার, দয়াগঞ্জ বাজার, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে ছিল ২৮ থেকে ৩২ টাকা। সে হিসেবে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে গড়ে পাঁচ টাকা। আর প্রতিকেজি আলুর বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকা। যা আগে ছিল ১৫ টাকা। আর বাজার ও মানভেদে আমদানি করা চায়না রসুন ও আদা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১২০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ টাকা। দেশি রসুন ও আদা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১১০ টাকায়। সে হিসেবে প্রতিকেজি আদা রসুনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। তবে চিনির দাম খুচরা বাজারে বাড়লেও মিলগেটে কমেছে দাম। বর্তমানে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি করা হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৫০ থেকে ৫১ টাকায়। সে হিসেবে দাম গড়ে পাঁচ টাকা বেড়েছে।

এদিকে, গত ২৮ এপ্রিল থেকে কেজিতে দুই টাকা কমেছে তেলের দাম। এখন থেকে বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১০২ টাকা, দুই লিটার ২০২ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৫০০ টাকা। যা আগে ছিল যথাক্রমে ১০৪ টাকা, ২০৬ টাকা এবং ৫১০ টাকা। বর্তমানে তেলের ইনভয়েস মূল্য এক লিটার ৯০ টাকা, দুই লিটার ১৭৮ টাকা ও পাঁচ লিটার ৪৪৫ টাকা। যা আগে ছিল যথাক্রমে ৯২ টাকা, ১৮২ টাকা ও ৪৫৫ টাকা।

সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বাংলানিউজকে বলেন, আসন্ন রমজান মাসে জনগণকে সুলভ মূল্যে ভোজ্যতেল খাওয়াতে লিটারে দুই টাকা কমিয়েছে সিটি গ্রুপ। গত সোমবার প্রতিষ্ঠানটি তীর অ্যাডভান্স বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি দুই টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। বর্তমানে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ধরা হয়েছে ১০২ টাকা। যা আগে ছিল ১০৪ টাকা। একইসঙ্গে দাম কমেছে দুই লিটার ও পাঁচ লিটার বোতলজাত তেলের দামও।  

মৌলভীবাজারের পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী আর বি ট্রেডার্সের মালিক জাবেদ হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, মিলগেটের সঙ্গে দাম বাড়ার সম্পর্ক রয়েছে। মিলগেটে দাম কমেছে দুই টাকা অথচ খুচরা পর্যায়ে দাম এক টাকাও কমেনি। আমরা পাইকারিতে ৫০ থেকে ৫১ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি করছি। অথচ খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায়।

শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা বিনিময় বাণিজ্যালয়ের মালিক আতাউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, গত সপ্তাহ থেকে পেঁয়াজের দাম মানভেদে কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে।  

দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমদানিকারকরা বেশি দামে আমদানি করছে। পাশাপাশি মজুদও করছে বেশি দাম পাওয়ার জন্য। এছাড়া সামনে রমজান মাস আসছে, তাই বাজার একটু বাড়তি। তবে দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ও চাঁদাবাজি বন্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। কোনও অজুহাতেই রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে দেওয়া হবে না। বাজার মনিটরিং চলছে। এছাড়া সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে চিঠি দেওয়া হবে। বাজারে চাহিদার তুলনার অনেক বেশি পণ্য মজুদ রয়েছে।

এদিকে, দীর্ঘদিন অস্বস্তি দেয়া সবজির দাম একটু কমেছে। বাজারে এখন বেশিরভাগ সবজি পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। বাজার ও মানভেদে কাঁচা পেঁপে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো ও শসা। দাম অপরিবর্তিত থাকা অন্য সবজির মধ্যে প্রতিকেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, সজনে ডাটা ৬০ থেকে ৮০, বরবটি ৪০ থেকে ৫০, কচুর লতি ৪০ থেকে ৫০, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। প্রতিকেজি ধুন্দুল ৫০ টাকা, বেগুন মানভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, গাজর ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং ঢেঁড়শ ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  

এছাড়া কাঁচা মরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা। সে হিসেবে প্রতিকেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।

দাম কমার কারণ হিসেবে সবজি ব্যবসায়ী আবুল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে সরবরাহ ভালো। চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পণ্য আসছে। তবে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে আগামীতে আবার দাম বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি। আগের সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১৬০ টাকা কেজি দরে। লাল লেয়ার মুরগি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। যা আগে ছিল ২২০ টাকা। আর পাকিস্তানি কক প্রতিপিস বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২৫০ টাকা। যা আগে বিক্রি হয়েছিল ২০০ থেকে ২৮০ টাকা পিস। মুরগির মতো গরু ও খাসির মাংসের দাম কমেছে। বাজার ভেদে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকায়। আর প্রতিকেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭২০ থেকে ৮০০ টাকা। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকায়।

মাংসের দামের বিষয়ে মাংস ব্যবসায়ীরা জানান, অতিরিক্ত গরমে মানুষ এখন মাংস খেতে চায় না। এছাড়া বিয়েসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান কমে যাওয়ায় চাহিদা কমে গেছে ফলে দামও কমেছে।

মাংসের দাম কমলেও সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৩০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে মাছের দাম। বাজারে তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি, পাঙাশ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি, রুই ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, বাইলা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, পাবদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, টেংরা কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা,  চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি, চিতল ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি।

এছাড়া এখনও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। বাজারে ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশের দাম দুই হাজার টাকা। নদীর ৯শ’ থেকে ১ কেজি ওজনের প্রতিকেজি ইলিশ তিন হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। এক কেজি ১০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের বড় ইলিশও কিছু বাজারে দেখা গেছে। দাম চাওয়া হচ্ছে প্রতিকেজি চার হাজার টাকা। আর দেড় কেজি বা দুই কেজির কাছাকাছি ওজনের ইলিশের প্রতিকেজির দাম চাওয়া হচ্ছে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। তবে ৫শ’ গ্রামের নিচে এক হালি ইলিশের দাম তিন হাজার টাকা। তবে বার্মিচ ও সাগরের ইলিশের দাম তুলনামূলকভাবে কম।

অপরিবর্তিত রয়েছে চাল ও অন্যান্য মুদি পণ্যের দাম। বাজারে প্রতিকেজি নাজিরশাইল চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। মিনিকেট ৫৫ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা। বিআর-২৮ নম্বর ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।  

এছাড়া খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, ডাল ৪০ থেকে ৯০, লবণ ৩০ থেকে ৩৫, পোলাউর চাল ৯০ থেকে ৯৫। প্রতিকেজি খোলা আটা ২৭ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, খোলা ময়দা ২৮ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা। বাজারভেদে মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন ১১০ থেকে ১২০ টাকা। দেশি মুরগির ডিম ১৫০ টাকা ডজন বিক্রি হতে দেখা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৩ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৯
জিসিজি/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।